_ইমামত ও ইসলামী আকিদা
_
ইসলামের সকল ইবাদত ও ভাল আমলের ভিত্তিই হচ্ছে ইমান। যে কোন আমল যতোই নেক বা খাঁটি মানের হোক না কেন তার ভিত্তি যদি ইমান না হয়, তবে সেই খাঁটি বা নেক আমলকারীর চরিত্রে সৎভাব জেগে ওঠে না, সে পরিপূর্ণ সৎব্যক্তি হতে পারে না। কারণ তার সৎ কাজের ভিত্তি ইমান নয়। তাই এ যে আমল কোন মর্যাদার দাবিদার নয়। যদি কারও ইমান থাকে তাকে মুমিন বলে এবং সেই মুমিনের নেক আমলের ভিত্তি ইমান।
আল্লাহ বলেন ঃ
“যে ব্যক্তিই নেক আমল করবে তা সে পুরুষ হোক বা নারী, সে যদি মুমিন হয়, তাহলে তার জন্য আমি পূতপবিত্র জীবন-যাপনের ব্যবস'া করে দেব।”
---সূরা আন-নমল ঃ ৯৭
এখানে পুতপবিত্র জীবন মানে জান্নাতের ব্যবস'া করে দেবো।
এখন ইমান বলতে কি বুঝায় ঃ-
কালেমা তাইয়্যেবা ও কালেমা শাহাদাতের মর্ম অন-র দিয়ে মেনে নিয়ে সে অনুযায়ী আমল করা ও মুখে উচ্চারণ করাকেই ইমান বলা হয় ।
কালেমা তাইয়্যেবা ঃ
--আরবী--
আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ (সকল বিষয়ের সকল সমস্যার সমাধান দাতা) নেই এবং মুহাম্মদ সা. আল্লাহর রাসূল।
ও কালেমা শাহাদাত ঃ
--আরবী--
আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ (সকল বিষয়ের সকল সমস্যার সমাধান দাতা) নেই। আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ সা. তাঁর বান্দা ও রাসূল।
এখানে ইলাহ মানে সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, বিধানদাতা, আইনদাতা, বিপদে উদ্ধারকারী অর্থাৎ সকল বিষয়ে তার বিধান মেনে নেয়া। আমরা মুখে আল্লাহকে সকল বিষয়ের মালিক বলে স্বীকৃতি দেয়, আল্লাহর ও রাসূলের দলে নিজেকে শামিল মনে করি অথচ বাস-বে যে শক্তি সমাজ তথা রাষ্ট্রে আল্লাহর আইন-বিধান চায় না, মানুষের মনগড়া মতবাদ, মানুষের তৈরি আইন-বিধান দিয়ে রাষ্ট্র-সমাজ পরিচালনা করে অথবা চেষ্টা করতে থাকে, সেই শক্তির সাথে হাত মিলিয়ে, সমর্থন দিয়ে আল্লাহর বিরুদ্ধাচরণ করি যা কখনও ইমান বলা যেতে পারে না এবং সেই ব্যক্তি বা দল কে কখনও মুমিন বা মুমিনের দল বলা যেতে পারে না।
অর্থাৎ কালেমা তাইয়্যেবা ও শাহাদাতের উপর ইমান (কথায় ও কাজে আল্লাহকে ইলাহ বলা) আনার পর যে যে বিষয়ের প্রতি ইমান তথা স্বীকৃতি দেয়া জরুরী তাকে বলা হয় ইসলামী আকায়েদ।
ইসলামী আকায়েদ ছয়টি ঃ
১. আল্লাহর সত্তা ও তাঁর গুনাবলীর উপর ইমান
২. ফেরেশতাদের উপর ইমান
৩. নবী-রাসূলের প্রতি বিশ্বাস (খতমে নব্যুওয়াতের প্রতি ইমানসহ)
৪. আসমানী কিতাব সমূহের ইমান
৫. আখেরাতের উপর ইমান
৬. তকদীরে তথা ভাগ্যের উপর ইমান।
উপরোক্ত ছয়টি বিষয়ের মধ্যে পারষ্পারিক এমন গভীর ও গুরুত্বপূর্ন এবং অনিবার্য সম্পর্ক বিদ্যমান যে, এ সবের কোন একটিকে অস্বীকার করলে সবগুলোকেই অস্বীকার করা হয়। ইমানের প্রকৃত অর্থ এই যে, উপরের সবকটি আকীদাকে অন-র দিয়ে মেনে নেয়া এবং সেই অনুযায়ী আমল করা। কেউ যদি এই আকীদাগুলো (আকীদা হলো একবচন আর বহুবচন আকায়েদ) এর মধ্যে কোন একটিকে গুরুত্ব কম দেয় অথবা মেনে নিতে অস্বীকার করে তাহলে তাকে কিছুতেই মুমিন বলা যাবে না।
অথচ শিয়াদের মৌলিক বিশ্বাসগুলো (আকায়েদ) এর মধ্যে ফেরেশতাদের উপর বিশ্বাস, আসমানী কিতাবসমূহের (আসমানী কিতাব মোট ১০৪ খানা, যার বড় আসমানী কিতাব হচ্ছে তাওরাত, যাবুর, ইঞ্জিল, কুরআন এবং ছোটগুলো ১০০ খানা) উপর বিশ্বাস ও তকদীরের উপর বিশ্বাস ইত্যাদি মোট ৩ টি আকায়েদ অনুপসি'ত।
শিয়া লেখক আল্ল্লামা কাশিফুল গীতা রচিত “শীয়া মাজহাবের মুলসূত্র সমূহ”নামক বইয়ের ৯৬-১১৬ নং পৃষ্ঠায় ‘মৌলিক বিশ্বাসের উপাদানসমূহ’ নামক শিরোনামের নিচে তাদের আকীদাগুলো হলোঃ
১. তাওহীদ তথা একত্ববাদ -আল্লাহর সত্তা ও তাঁর গুনাবলীর উপর ইমান
২. নবুওয়াত- নবী-রাসূলের প্রতি বিশ্বাস
৩. ইমামত
৪. আদল বা ন্যায় বিচার
৫. আখেরাত বা পুনরুত্থান দিবস
তাহলে, শিয়াগন তাদের মৌলিক বিশ্বাস থেকে ক.আসমানী কিতাবসমূহের ইমান, খ.ফেরেশতাদের উপর ইমান, গ.তকদীরে তথা ভাগ্যের উপর ইমান ইত্যাদি আকিদাগুলো বাদ দিয়েছেন। মৌলিক বিশ্বাস থেকে এ তিনটি তাদের কাছে গুরুত্বের দাবিদার নয়। যদি তারা এ তিনটি আকায়েদকে গুরুত্ব দিত তবে তাদের আকীদা থেকে কখনো বাদ দিতে পারত না। এ তিনটির মধ্যে আসমানী কিতাবও আছে যার মধ্যে সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানী কিতাব আল-কুরআন অত্যন- গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। শিয়ারা ইমামত নামক ভিত্তিহীন ও বিভ্রান-ী সৃষ্টিকারী আকীদাকে তাদের আকীদায় রাখতে পারল আর তার চেয়ে অধিক গুরুত্বের দাবীদার আসমানী কিতাব তথআ কুরআনকে তাদের আকীদায় রাখতে কষ্ট হয়েছে। যদি শিয়ারা কুরআনকে তাদের মৌলিক আকায়েদ বা বিশ্বাসসমূহ থেকে বাদ দেয়, তাহলে তারা মানব জাতির সকল সমস্যার সমাধান (ঈড়সঢ়ষবঃব পড়ফব ড়ভ যঁসধহ ষরভব) ইসলাম পেল কোথায়?
শিয়া মাজহাবে বাদ পড়ে যাওয়া আকীদাগুলো পারষ্পারিক অনিবার্য সম্পর্কযুক্ত এবং অত্যন- গুরুত্বপূর্ণ ও অবশ্য পালনীয় বিষয়। কেননা যদি ফেরেশতাদের উপর ইমানের প্রতি গুরুত্ব দেয়া না হয়, তবে ওহী বাহক হযরত জিবরাইল আ. এর উপর ইমানে ফাটল ধরে। ফেরেশতা জিবরাইল এর উপর ইমানের ভিত নড়বড়ে হলে তাঁর দ্বারা বাহনকৃত শেষ আসমানী কিতাব অর্থাৎ আমাদের মহাগ্রন' আল কুরআনের উপর ইমান নড়বড়ে হয়ে যায়। কারণ হযরত জিবরাইল আ. ই আল্লাহর রাসূল সা. এর কাছে আল্লাহর পবিত্র বাণী কুরআনের আয়াত নিয়ে হাযির হতেন। আর কুরআনের তথা আসমানী কিতাবের উপর ইমান না থাকলে অথবা দুর্বল হলে অথবা গুরুত্ব কম দিলে তাওহীদ-আল্লাহর সত্তা ও তাঁর গুনাবলীর উপর ইমান ও আখেরাতের উপর ইমান টিকে থাকে না। যদি শিয়াদের এ অবস'া হয়, তবে তাদের ইমানদার বলা যায় কি?
ইসলামী আকাইদ ছয়টি ঃ
১. আল্লাহর সত্তা ও তর গুনাবলীর উপর ইমান
২. ফেরেশতাদের উপর ইমান
৩. নবী-রাসূলের প্রতি ইমান (খতমে নব্যুওয়াতের প্রতি ইমানসহ)
৪. আসমানী কিতাব সমূহের প্রতি ইমান
৫. আখেরাতের উপর ইমান
৬. তকদীর তথা ভাগ্যের উপর ইমান ইত্যাদি আকাইদ থেকে
১. ফেরেশতাদের উপর ইমান
২. আসমানী কিতাবসমূহের ইমান
৩. তকদীরে তথা ভাগ্যের উপর ইমান
ইত্যাদি তিনটি গুরুত্বপূর্ন আকীদা তাদের মৌলিক বিশ্বাস থেকে বাদ দিয়ে আল্লাহর একটি গুরুত্বপূর্ণ হুকুমকে অবহেলা করেছেন। সেজন্য শিয়ারা মহান আল্লাহর কঠিন রোষের মধ্যে পড়েছেন। কেননা আল্লাহ ঘোষণা করছেন ঃ
“তোমরা কখনোই কোন মূল সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত হবে না। যতক্ষণ না তোমরা তাওরাত, ইন্জীল ও তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে নাযিল করা অন্যান্য কিতাবগুলোকে প্রতিষ্ঠিত করবে।” ---সূরা আল-মায়েদা ঃ ৬৮
মহান আল্লাহ আরও ঘোষণা করছেন ঃ
“তোমাদের মুখ পূর্ব দিকে বা পশ্চিম দিকে ফিরাবার মধ্যে কোন পুন্য নেই। বরং সৎকাজ হচ্ছে এই যে, মানুষ আল্লাহ, কিয়ামতের দিন, ফেরেশতা, আল্লাহর অবতীর্ণ কিতাব ও নবীদেরকে মনে প্রাণে মেনে নেবে এবং আল্লাহর প্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজের প্রাণপ্রিয় ধন-সম্পদ, আত্বীয়-স্বজন, এতীম, মিসকীন, মুসাফির, সাহায্যপ্রার্থী ও ক্রীতদাসদের মুক্ত করার জন্য ব্যয় করবে আর নামায কায়েম করবে এবং যাকাত দান করবে। যারা অংগীকার করে তা পূর্ণ করবে এং বিপদে-অনটনে ও হক-বাতিলের সংগ্রামে সবর করবে তারাই সৎ সত্যাশ্রয়ী এবং তারাই মুত্তাকী।”
---সূরা আল-বাকারাহ ঃ ১৭৭
এ ছয়টি বিষয়ের প্রতি ঈমান আনার জন্য স্বয়ং নবী সা. বলেছেন-
“হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন আমরা একদা নবী সা. এর নিকট বসেছিলাম। হঠাৎ এক ব্যক্তি সামনে এসে উপসি'ত হল। তার পোশাক অত্যন- সাদা ও পরিচ্ছন্ন ছিল। মাথার চুল কুচকুচে কালো ছিল এবং দূরদেশ হতে সফর করে আসার কোন চিহ্ন তাঁহার উপর পরিস্ফুট ছিল না। অথচ আমাদের মধ্যে কেউই এই নবাগতকে চিনত না। (ফলে তাঁকে দূর দেশের লোক মনে হল)
এ ব্যক্তি উপবিষ্ট লোকের মধ্যে দিয়ে অগ্রসর হয়ে নবী সা. এর সামনে এসে দুই হাঁটু বিছিয়ে বসলো এবং নিজের দুই হাঁটু নবী করিম সা. এর দুই হাঁটুর সাথে মিলিয়ে দিল ও নিজের দুই হাত নিজের দুই হাঁটুর উপর রাখল। অতঃপর সে বললো, হে মুহম্মদ সা.! বলুন, ইসলাম কাকে বলে? উত্তরে নবী সা. বললেন ঃ ইসলাম (উহার স-ম্ভ) এই যে, (১) তুমি সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ- উপাস্য ও আনুগত্য করার যোগ্য নাই এবং মুহম্মদ সা. তাঁর রাসূল। (২) নামাজ কায়েম করবে (৩) যাকাত আদায় করবে (৪) রমজান মাসের রোজা রাখবে এবং (৫) আল্লাহর ঘরের হজ্জ্ব করার সামর্থ্য থাকলে হজ্জ্ব পালন করবে। এ নবাগত প্রশ্নকারী নবী করিম সা. এর উত্তর শুনে বললেন ঃ আপনি ঠিকই বলেছেন।
এ হাদীসের বর্ণনাকারী ওমর রা. বলেন ঃ এই নবাগত ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করতে ও তার উত্তরকে সত্য ও ঠিক বলে ঘোষণা করতে দেখে আমরা অত্যন- আশ্চর্যান্বিত হলাম। অতঃপর সেই ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করল ঃ এখন বলুন ঈমান কাকে বলে? নবী করিম সা. উত্তরে বললেন ঃ ঈমান হচ্ছে এই যে, তুমি আল্লাহকে, তাঁহার ফেরেশতা, তাঁহার কিতাব, পয়গম্বর ও পরকালকে সত্য বলে বিশ্বাস করবে ও সত্য বলে মানবে এবং প্রত্যেক ভাল-মন্দ সম্পর্কে আল্লাহর নির্ধারণ (তাকদীর) কে সত্য জানবে ও মানবে। এটা শুনে নবাগত লোকটি বললেন ঃ আপনি ঠিকই বলেছেন। এরপর সে নবাগত বললেন ঃ আমাকে বলে দিন ইহসান কাকে বলে? উত্তরে নবী সা. বললেন ঃ ইহসান বলা হয় এমনভাবে আল্লাহর বন্দেগী করাকে, যেন তুমি তাঁকে দেখতে পাচ্ছ-এ কথা মনে জাগরুক রাখা। সেই লোকটি বলল ঃ কিয়ামত কবে হবে আমাকে বলুন। উত্তরে নবী সা. বললেন যার নিকট প্রশ্নটি করা হয়েছে সেই সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রশ্নকারী অপেক্ষা অধিক কিছু জানেন না। সে বলল ঃ আপনি তার নিদর্শনসমূহ বলে দিন। তিনি নবী সা. বললেন ঃ তার একটি নিদর্শন এই যে, দাসী নিজের সম্রাজ্ঞী ও মনিবকে প্রসব করবে। দ্বিতীয় নিদর্শন এই যে, তুমি দেখতে পাবে যাদের পায়ের জুতা ও গায়ে কাপড় নাই, যারা শূন্য হাত ও ছাগলের রাখাল, তারা বড় বড় প্রাসাদ নির্মাণ করছে এবং এ কাজে তারা পরস্পর প্রতিযোগিতা করছে। হযরত ওমর রা. বলেন, এসব বলবার পর নবাগত লোকটি চলে গেল। এরপর আমি বসে থেকে কিছুক্ষণ অতিবাহিত করলাম। তারপর নবী করিম সা. আমাকে সম্বোধন করে বললেন, হে ওমর! এ প্রশ্নকারী ব্যক্তি কে ছিল তা কি তুমি জান? আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভাল জানেন। নবী সা. বললেন ঃ এ নবাগত ছিলেন জিবরাঈল আ.। তিনি তোমাদেরকে দ্বীন ইসলাম শিক্ষা দেয়ার জন্যই তোমাদের এ মজলিসে এসেছিলেন।
---সহীহ মুসলিম।
এটি একটি প্রসিদ্ধ হাদীস। এ হাদীসটি হাদীসে জিবরাঈল নামে খ্যাত।
রাসূলে করিম সা. নির্দেশিত ছয়টি আকীদার মধ্যে শিয়ারা যে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ আকীদা-ফেরেশতা,আসমানী কিতাব ও তাকদীরের প্রতি ঈমান প্রত্যাখ্যান করল, শুধু তাই নয় ,তারা নতুন একটি আকীদা ইমামত যার উপর ঈমান আনার নির্দেশ রাসুল সা. দেননি তার উপর বিশ্বাস শুরু করল। তাদের ইমামতে তারা বার জন ইমামকে অনুসরণ করে।
এখানেই শেষ নয়, তারা বলে ঃ ইমামত নবী রাসূলদের মত খোদায়ী কার্যক্রম। যেমন “শিয়া মাজহাবের মূলসূত্রসমূহ”বইয়ে আল্লামা কাশিফুল গীতা লিখেছেন-
১. “শিয়াদের দৃষ্টিকোণ থেকে ইমামত নব্যুয়াতের (রিসালাতের) মতই একটি খোদায়ী কার্যক্রম। সর্বশক্তিমান আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাঁকে এ দায়িত্বে মনোনীত করেন এবং নবী সা. এর মাধ্যমে তাঁকে এ দায়িত্বে মনোনীত করে থাকেন।”
---১০১-১০২নং পৃষ্ঠা, শিয়া মাজহাবের মূলসূত্রসমূহ
উপরোক্ত ১নং এর আলোচনা ঃ
শিয়াদের বিশ্বাস ইমামত (বারো ইমামে বিশ্বাস) নবুয়াতের মতই খোদায়ী কার্যক্রম। শুধু তাই নয় তারা বলেছেন, প্রত্যেক যুগেই পথ প্রদর্শক ইমাম থাকবেন যিনি মানুষের হেদায়েত কারী এবং দুনিয়া ও আখিরাত এ কল্যাণদাতা হিসেবে মহানবী সা. এর প্রতিনিধিত্ব করবেন। তাদের প্রস-াবিত বারো ইমামের মধ্যে ইমাম আবুল কাসেম মোহাম্মদ ইবনীল হাসান (ইমাম মেহেদী-যাকে সকল মুসলমান ইমাম হিসেবে গ্রহণ করবেন) দুনিয়া থেকে অদৃশ্য হয়েছিলেন ২৫৬ হিজরীতে যা ( ১৪৩১-২৫৬) = ১১৭৫ বছর আগের কথা।
এখন যেহেতু শিয়ারা বিশ্বাস করেন এটি নবুওয়াত বা রিসালতের মত খোদায়ী কার্যক্রম ও প্রত্যেক যুগেই ইমাম পথ প্রদর্শক হিসেবে থাকবেন। সুতরাং তার অন-র্ধানকালীন (ইমাম মেহেদীর) সময়ে শিয়ারা সঠিক পথ পাবে কিভাবে। আর যেহেতু রিসালতের ধারায় মানুষকে পথের দিশা দেওয়ার জন্য নবী এসেছিলেন সেই মহানবী সা. তো কখনো অদৃশ্য হয়ে যান নি। তাহলে আমরা কি ধরে নিতে পারি না যে, ইমাম মেহেদীর অদৃশ্যকালীন সময়ে (তাদের যুক্তিতে) ইমামের সঠিক পথের অভাবে শিয়ারা আজ বিভ্রান- ও ইসলাম নামক শানি- ধর্ম ও মানব জাতির সকল উদ্ভূত পরিসি'তি মোকাবেলাকারী শানি-দাতা ধর্ম থেকে বিচ্যুত?
তাই মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা ঃ “হে আল্লাহ ইমাম মেহেদীর অদৃশ্যকালীন সময়ে পথভ্রষ্ট শিয়ারা প্রলাপ বকছে, ইসলামের ইতিহাস বিকৃত করছে। তাদের প্রস-াবিত ইমামগণকে এতই বেশি ভালবাসে যে, আল্লাহর রাসূল সা.কে বাদ দিয়ে রাসূল সা. চেয়ে অনেক নিচু মর্যাদার ইমামদের কথা বেশি বলছে, আলোচনা, বই পত্রিকায় যে কোনও প্রসঙ্গে আল্লাহর রাসূলের আদর্শের কথা না বলে ইমামগনের আদর্শ তুলে ধরছে-যা মুসলিম উম্মাহর জন্য চরম হুমকি স্বরূপ। আর এরকম আচরণ রাসূল সা.কে বাদ দিয়ে তাদের প্রস-াবিত ইমামকে বেশি গুরুত্ব দেয়ার নামান-র। তাই তুমি ইমাম মেহেদীকে পৃথিবীতে পাঠিয়ে শিয়াদের বিভ্রান-ী দূর করে তোমার কুরআনকে রক্ষা কর যে ওয়াদা তুমি করেছ। রাসূলের হাদীসকে তথা সুন্নাতকে সংরক্ষণ কর, ইসলামের ইতিহাসকে বিকৃতির হাত থেকে রক্ষা কর।
আবার ইমামত নবুওয়াত তথা রিসালতের মতই খোদায়ী কার্যক্রম হলে আল্লাহ কেন ইমামতের স্বপক্ষে প্রত্যক্ষভাবে আয়াত নাজিল করেন নি। তাছাড়া ইমামত খোদায়ী কার্যক্রম হলে ইমামতে বিশ্বাসের ব্যাপারে আল্লাহর রাসূল সা. এর অনেক হাদীস পাওয়া যেত। কিন' এরকম কোনও হাদীস নেই। যেরকম হাদীস ইসলামের আকীদার ৬টি বিষয়ের ব্যাপারে আছে হযরত ওমর ফারুক রা. এর বর্ণিত মুসলিম শরীফে।
“শিয়া মাজহাবের মূলসূত্রসমূহ”বইয়ে আল্লামা কাশিফুল গীতা আরও লিখেছেন ঃ
২. “শিয়ারা বিশ্বাস করে সর্বশক্তিমান আল্লাহ মহানবী সা. কে নির্দেশ প্রদান করেছিলেন জনগণের কাছে ইমাম আলী (চতুর্থ খলিফা) কে তাঁর উত্তরাধিকারী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য। যেভাবেই হোক মহানবী (সাঃ) এও জানতেন যে, একদলের কাছে তাঁর এ ঘোষণা মেনে নেয়া কঠিন হবে।”
৩. “কেননা ইমাম আলী আ. (হযরত আলী রা. কে শিয়ারা তাদের প্রথম ইমাম বলে থাকে এবং নবীদের চাইতে অধিক মর্যাদার মনে করে তাদের ইমামদের নামের শেষে আলাইহি ওয়াসাল্লাম-আ. শব্দটি যুক্ত করে) এর মাসুম (নিষ্পাপ) হওয়ার ব্যাপারে সবার জ্ঞান একস-রের ছিল না। অনেকে এটা ভাবতে পারেন যে, মহানবী সা.এর এ ঘোষণা ইমাম আলীর সাথে তাঁদের পারস্পরিক সম্পর্ক ও জামাই হওয়ার কারণে তাঁর ব্যক্তিগত ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ ছিল। তবুও সর্বশক্তিমান আল্লাহ পছন্দ করেননি যে, এই অযুহাতে মহানবী সা. এ বাস-ব ঘোষণা থেকে বিরত থাকবেন। তাই আল্লাহ নিম্নোক্ত আয়াতে স্পষ্টভাবে ঘোষণা করে দিলেন যে, ইমাম আলীর উত্তরাধিকার (খিলাফাতের অধিকার) অবশ্যই জনগণের কাছে তুলে ধরা হোকঃ
“হে রাসূল! যা কিছু আপনার প্রতিপালকের তরফ হতে আপনার প্রতি নাযিল করা হয়েছে আপনি (মানুষকে) তা বলে দিন; আর যদি তা না করেন, তাহলে আপনি যেন আল্লাহর একটি বাণীও পৌঁছান নাই। আর আল্লাহ তা’য়ালা আপনাকে মানুষের ভয় থেকে সংরক্ষিত রাখবেন।”(সূরা মায়েদা-৬৭)
৪. “রাসূলের উপর যখন আল্লাহর গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা নাযিল হয়, তখন জনগণের কাছে আল্লাহর আদেশ পৌঁছে দেয়া ছাড়া রাসূল .সা এর আর কোন উপায় ছিল না। সুতরাং বিদায় হজ্জ্ব থেকে ফেরার পথে ‘গাদীর-ই-খুম’ নামক স'ানে তিনি এক ভাষণ প্রদান করেন। সমবেত জনতাকে উচ্চস্বরে বললেন, “আমি তোমাদের উপর তোমাদের নিজেদের অপেক্ষা কি বেশি অধিকার রাখিনা?(অর্থাৎ আমি কি তোমাদের উপর কর্তৃত্বশীল এবং অভিভাবক নই?)তারা বলল, “হ্যাঁ, অবশ্যই আপনি তাই।” তারপর তিনি ঘোষণা করলেন, “যে আমাকে তার নেতা ও অভিভাবক মনে করে, সে যেন আলীকে ও তার নেতা ও অভিভাবক মনে করে।”
৫. “রাসূল সা. এর ওফাতের পর মুসলমানদের মধ্যে কিছু বয়স্ক লোক তাদের নিজেদের মত এ হাদীসের ব্যাখ্যা করেছিলেন “ইসলামের স্বার্থের প্রতি দৃষ্টি রেখে।” তারা কিছু লোকের উপর অন্য কিছু লোকের প্রাধান্য দিয়েছিল এবং বলেছিল প্রতিটি অবস'া ও প্রতিটি ঘটনার নিজস্ব ব্যাখ্যা রয়েছে।”
৬. বইটির পাদটীকায় ব্যাখ্যা করা হয়েছেঃ-
“ইসলাম ও মুসলমানদের স্বার্থ সংরক্ষণের অযুহাতে তারা (আবু বকর, ওমর ফারুক, ওসমানসহ অনেক সাহাবী) উত্তরাধিকার সম্পর্কে রাসূল সা.এর আদেশ (অর্থাৎ রাসূলের পরই তাঁর উত্তরাধিকারী বা ১ম খলিফা হিসেবে আলীকে নির্বাচনের নির্দেশ) প্রত্যাখান করেছিলেন।”
---১০১-১০২ পৃষ্ঠা, শিয়া মাজহাবের মূলসূত্রসমূহ
উপরোক্ত ২-৬নং আপত্তির জবাব ঃ
শিয়াদের মনগড়া উপরোক্ত আলোচনায় যা বুঝা গেল যে, মহানবী সা.কে আল্লাহ আয়াত নাজিল করে হযরত আলী রা. কে নবী সা. এর উত্তরাধিকারী অর্থাৎ ১ম খলিফা হিসেবে জনগণের সামনে পরিচয় করানোর জন্য বলেছিলেন। সেজন্য আল্লাহ বিদায় হজ্জে সূরা মায়েদার ৬৭ নং আয়াত নাজিল করলেন যেন রাসূল সা. এর ওফাতের পর আলীই প্রথম খলিফা হয় এবং পরবর্র্র্র্র্র্র্তী খিলাফতের অধিকার আলী রা. এর বংশের মধ্যেই সংরক্ষিত থাকে।
শুধু তাই না উপরোক্ত অংশে শিয়ারা বলতে চেয়েছে ঃ আল্লাহর রাসূল সা.তার চাচাত ভাই হযরত আলী রা. কে ১ম খলিফা হিসেবে নির্বাচিত করার জন্য সাহাবীদের বলেছিলেন। কিন' হযরত আবু বকর রা. (১ম খলিফা) হযরত ওমর রা.(২য় খলিফা) হযরত ওসমান রা.(৩য় খলিফা) সহ আরও সাহাবীগণ রাসূলের আদেশ প্রত্যাক্ষান করেছিলেন এবং আলীর অধিকার ছিনিয়ে নিয়ে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছিলেন। (নাউজুবিল্লাহ) (এ ব্যাপারে অনেক কথাবার্তা-আলোচনা পড়ে আসবে)
শিয়াদের দাবি আলীর প্রথম খলিফা হওয়ার ব্যাপারে রাসূল সা.এর প্রতি নাজিল হয় সূরা মায়েদার ৬৭ নং আয়াত। কিন' আয়াতটি মূলত নাযিল হয়েছিল রাসূল সা.কে রিসালাতের মত মহান দায়িত্বের গুরুত্ব বোঝানোর জন্য এবং তা যথাযথভাবে পালন করতে হবে-তা স্মরণ করিয়ে দেবার জন্য এবং এ মহান দায়িত্ব পালনের সময় মহান আল্লাহ তাঁর রাসূলের সংরক্ষণের ব্যবস'া করবেন। আর উপরোক্ত আয়াতের বিষয়বস'ও মূলত এটাই। অর্থাৎ উপরোক্ত আয়াতে প্রদত্ত শিয়াদের ব্যাখ্যা যে অসারতা পূর্ণ অপব্যাখ্যা তা আমরা দেখতে পাব আয়াতটির ব্যাখ্যায় কয়েকজন বিখ্যাত তাফসীরকারকের আলোচনায়।
আয়াতটির ব্যাখ্যায় হাফেজ ইমাজউদ্দিন ইবনে কাসীর রহ. তার “তাফসীর ইবনে কাসীর” এ লিখেছেন ঃ
মহান আল্লাহ এখানে স্বীয় নবী সা. কে রাসূল এ প্রিয় শব্দ দারা সম্বোধন করে বলেছেন, তুমি মানুষের কাছে আমার সমস- আহকাম পৌছিয়ে দাও। রাসূলুল্লাহ সা.ও তাই করলেন। সহীহ বুখারীতে রয়েছে, হযরত আয়েশা রা. বলেন, “যে ব্যক্তি আমাকে বলে যে, মুহাম্মদ সা. তাঁর উপর নাজিলকৃত কোনকিছু গোপন করেছেন, সে মিথ্যা বলছে”। এখানে হাদীসটি সংক্ষিপ্তভাবে আছে।
সহীহ বুখারী ও মুসলিম এ হযরত আয়েশা রা. থেকেই বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন ঃ যদি মুহাম্মদ সা. কুরআনের কোনও অংশ গোপন করতেন তবে তিনি অবশ্যই ............................... অর্থাৎ
এ আয়াতটি গোপন করতেন।
ইবনে আবী হাতিম রা. বর্ণনা করেছেন যে, একজন লোক হযরত ইবনে আব্বাস রা. কে বলে ঃ লোকদের মধ্যে আলোচনা চলছে যে, আপনাদের রাসূলুল্লাহ সা. এমন কতগুলো কথা বলেছেন যা তিনি অন্য লোকদের নিকট প্রকাশ করেন নি। তখন তিনি এ আয়াতটি শপথ করে বলেন ঃ “আল্লাহর শপথ! রাসূলুল্লাহ সা. আমাদেরকে এরূপ কোন বিশিষ্ট জিনিসের উত্তরাধিকারী করেননি”। এই হাদীসের ইসনাদ খুবই উত্তম।
সহীহ বুখারীতে রয়েছে যে, একজন লোক হযরত আলী রা. কে জিজ্ঞেস করলেন ঃ “আপনাদের কাছে কী কুরআন ছাড়া অন্য ওহি আছে?” আলী রা. উত্তরে বললেন ঃ “যে আল্লাহ শস্য উৎপন্ন করেছেন এবং জীব জন' সৃষ্টি করেছেন তার শপথ! না, শুধু এ বুদ্ধি ও বিবেক, যা তিনি কোনও লোককে কুরআনের ব্যাপারে দিয়েছেন এবং যা কিছু এ সহিফায় রয়েছে (এছাড়া আর কিছুই নাই)। ” লোকটি আবার জিজ্ঞেস করলেন ঃ “সহিফায় কী রয়েছে?” উত্তরে আলী রা. বললেন ঃ “এর মধ্যে দিয়াতের মাসয়ালা ও বন্দীদের কে ছেড়ে দেওয়ার আহকাম রয়েছে এবং এ বিধান রয়েছে যে, কাফির কে হত্যা করার কারনে কিসাস হিসেবে কোনও মুসলমানকে হত্যা করা হবে না।”
সহীহ আল বুখারীতে যুহরি রা.এর উক্তি রয়েছে। তিনি বলেন, “আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে হচ্ছে রিসালাত, রাসূলুল্লাহ সা. এর দায়িত্ব হচ্ছে প্রচার করা এবং আমাদের কর্তব্য হচ্ছে মেনে নেওয়া।” রাসূলুল্লাহ সা. আল্লাহর সমস- কথা পৌঁছিয়ে দিয়েছেন। তার সমস- উম্মতই এর সাক্ষী। প্রকৃতপক্ষে তিনি আমানত পূর্ণভাবে আদায় করেছেন এবং সেটা সবচেয়ে বড় সম্মেলনের দিন সবাই স্বীকার করে নিয়েছেন। অর্থাৎ হুজ্জাতুল বিদা বা বিদায় হজ্জের খুতবায় সকল সাহাবী এ কথা স্বীকার করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ সা.তাঁর দায়িত্ব পূর্ণভাবে পালন করেছেন এবং আল্লাহর বাণী সকলের কাছে পৌছিয়ে দিয়েছেন।
সহীহ মুসলিমে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ সা. তার এ ভাষণে জনগণকে সম্বোধন করে বলেছিলেন ঃ “তোমরা আল্লাহর কাছে আমার ব্যপারে জিজ্ঞাসিত হবে। তাহলে বলত তোমরা কী উত্তর দিবে?” সবাই (সকল সাহাবী) সমস্বরে বললেন ঃ “আমরা সাক্ষ্য দান করছি যে, আপনি প্রচার করেছেন, রিসালতের হক পুরোপুরী আদায় করেছেন এবং পূর্ণভাবে আমাদের মঙ্গল কামনা করেছেন।” তিনি তখন স্বীয় হস- ও মস-ক আকাশের দিকে উত্তোলন করে জনগণের দিকে ঝুকিয়ে দিয়ে বললেন ঃ “হে আল্লাহ, আমি কী পৌঁছিয়ে দিয়েছি, হে আল্লাহ আমি কী পৌঁছিয়ে দিয়েছি?”
মুসনাদে আহমাদে এটাও রয়েছে যে, রাসূল সা. এ ভাষণে জনগণকে জিজ্ঞেস করেছিলেন ঃ “হে লোক সকল! এটা কোন দিন?” সবাই উত্তরে বললেন ঃ “মর্যাদাসম্পন্ন দিন।” নবী সা. আবার প্রশ্ন করলেন ঃ‘‘এটা কোন শহর?’’ সবাই জবাবে বললেন ঃ “সম্মানিত শহর।” পূনরায় রাসূল সা. জিজ্ঞেস করলেন ঃ “এটা কোন মাস?” সবাই বললেন ঃ “মর্যাদাসম্পন্ন মাস।” তখন নবী সা. বললেন ঃ ‘‘তোমাদের মাল, তোমদের রক্ত এবং তোমাদের ইজ্জত ও আবরু একে অপরের কাছে এ রকমই মর্যাদায় রয়েছে যেমন এ দিনের, এ শহরের এবং মাসের সম্মান ও মর্যাদা রয়েছে।” বার বার তিনি এর পূনারাবৃত্তি করলেন। তারপর তিনি স্বীয় আঙ্গুলি আকাশের দিকে উঠিয়ে বললেন ঃ “হে আল্লাহ! আমি কী পৌঁছিয়ে দিয়েছি?”
হযরত ইবনে আব্বাস রা. বলেন ঃ “আল্লাহর শপথ! এটা তাঁর প্রভুর পক্ষ থেকে তাঁর প্রতি অসিয়ত ছিল।”অতঃপর রাসূল সা. বললেন ঃ‘‘দেখো! তোমাদের প্রত্যেক উপসি'ত ব্যক্তি যেন প্রত্যেক অনুপসি'ত ব্যক্তির নিকট এটা পৌঁছিয়ে দেয়। দেখো! তোমরা আমার পরে যেন কাফের হয়ে যেয় না এবং একে অপরকে হত্যা করো না। ” ইমাম বুখারীও এটা বর্ণনা করেছেন।
অতঃপর ইরশাদ হচ্ছে ঃ “হে নবী! তুমি যদি আমার হুকুম আমার বান্দা পর্যন- পৌঁছিয়ে না দাও, তবে তুমি রিসালাতের হক আদায় করলে না। তারপর এর যা শাসি- তা তো স্পষ্ট। যদি তুমি একটি আয়াতও গোপন করো তবে তুমি রিসালাত ভেঙে দিলে।” হযরত মুজাহিদ রা. বলেন যে, যখন ‘যা কিছু অবতীর্ণ হয়েছে তা পৌঁছিয়ে দাও’ এর হুকুম নাযিল হয় তখন রাসূলুল্লাহ সা. বলেন ঃ “আমি তো একা, আর এইসব কিছু মিলে আমার উপর ভারী হয়ে যাচ্ছে। সুতরাং আমি কিভাবে এটা পালন করতে পারি?” তখন এ দ্বিতীয় বাক্যটি অবতীর্ণ হয় ঃ “তুমি যদি এটা পালন না করো, তবে তুমি রিসালাতের দাায়িত্বই পালন করলে না।”
তারপর আল্লাহ পাক বলেন ঃ “তোমাকে লোকদের থেকে রক্ষা করার দায়িত্ব আমার; তোমার রক্ষক ও সাহায্যকারী আমি। তুমি নির্ভয়ে থাক, কেউই তোমার কোন ক্ষতি করতে পারবে না।”
এ আয়াত নাযিল হওয়ার পূর্বে নবী সা. নিজের প্রহরী রাখতেন। সাহাবীগণ নবী সা. কে রক্ষার কাজে নিযুক্ত থাকতেন। আয়েশা রা .বলেন ঃ একদা রাতে রাসূল সা. জেগেই ছিলেন। তাঁর ঘুম হচ্ছিল না। আমি জিজ্ঞেস করলাম, “হে আল্লাহর রাসূল! ব্যাপার কি?” তিনি উত্তরে বললেন ঃ “যদি আজ রাত্রে আমার কোন হৃদয়বান সাহাবী আমাকে পাহারা দিতো!” তিনি একথা বলতে না বলতেই, হটাৎ আমার কানে অস্ত্রের শব্দ আসলো। নবীজী জিজ্ঞেস করলেন ঃ “কে?” উত্তর আসলো ‘‘সাদ ইবনে মালিক রা.।”রাসূল সা. জিজ্ঞেস করলেন ঃ “কেন আসলে?” তিনি উত্তরে বললেন ঃ “হে আল্লাহর রাসূল! আপনাকে পাহারা দেয়ার জন্য এসেছি।”
এরপর নবীজী সা. নিশ্চিনে- ঘুমিয়ে পড়লেন। এমনকি আমি তাঁর নাক ডাকার শব্দ শুনতে পেলাম। (সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম)
একটি রিওয়ায়েতে আছে যে, এটা ২য় হিজরীর ঘটনা। এই আয়াতটি নাজিল হওয়া মাত্রই রাসূলুল্লাহ সা. তাবু হতে মাথা বের করে দিয়ে প্রহরীদের বললেন ঃ “তোমরা চলে যাও, আমি আমার প্রভুর আশ্রয়ে এসে গেছি। সুতরাং এখন তোমাদের পাহারা দেওয়ার কোনই প্রয়োজন নাই।” আর একটি বর্ণনায় আছে যে, আবু তালিব সদা রাসূলুল্লাহ সা.এর সাথে কোনও না কোনও লোক রাখতেন, যখন এ আয়াত নাজিল হল তখন তিনি চাচা আবু তালিব কে বললেন ঃ “চাচাজান এখন আর আমার সাথে কোনও লোক পাঠাবার প্রয়োজন নাই। আমি মহান আল্লাহর রক্ষণাবেক্ষণে এসে গেছি।”
কিন' এ রেওয়াতটি গরীব ও মুনকার। এটাতো মক্কার ঘটনা, এ আয়াতটি মদীনায় অবতীর্ণ হয়েছিল।
এতে কোনও সন্দেহ নাই, মহান আল্লাহ তাআলা মক্কাতেই স্বীয় রাসূল সা.কে পূর্ণভাবে রক্ষণা-বেক্ষণ করেছেন। চতুর্দিকে অস্ত্রশস্ত্র সজ্জিত শত্রু দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকা সত্ত্বেও মক্কার নেতৃস'ানীয় লোকেরা রাসূল সা.এর চুল পরিমাণ ক্ষতি করতে স্বক্ষম হয় নাই। রিসালাতের প্রথম ভাগে তার চাচা আবু তালিবের মাধ্যমে তার রক্ষণা বেক্ষণ হতে থাকে । কেননা আবু তালিব ছিলেন কুরাইশদের প্রভাবশালী নেতা। আল্লাহ তার অন-রে স্বীয় রাসূল সা.এর প্রতি ভালোবাসা স'াপন করেছিলেন। এ ভালোবাসা ছিল প্রকৃতিগত স্বাভাবিক ভালোবাসা, শরিয়তগত ভালোবাসা (মুসলিম হয়ে ওপর মুসলিমের প্রতি ভালোবাসা) নয়। আবু তালিবের এ ভালোবাসা যদি শরিয়তগত ভাবে হত, তবে কুরাইশরা রাসূলুল্লাহ সা.এর সাথে তার চাচাকেও হত্যা করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হতো।
আবু তালিবের মৃত্যুর পর আল্লাহ তাআলা মদীনার আনসারদের অন-রে রাসূল সা.এর প্রতি শরীয়তগত মুহব্বত পয়দা করে দেন এবং নবী সা. তাদের কাছেই চলে যান। তখন মুশরিক ও ইহুদীরা অত্যন- উত্তেজিত হয়ে উঠে ও ভারী ভারী অস্ত্রে সজ্জিত সেনাবাহিনী নিয়ে নবী সা.এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার মানসে দ্রুত এগিয়ে আসে। কিন' বারবার অকৃতকার্য হওয়ার ফলে তাদের আশায় গুড়ে বালি পড়ে যায়।
অনুরূপভাবে তাদের গোপন ষড়যন্ত্রও আল্লাহর ফজল ও করমে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। একদিকে তারা নবী সা.এর উপর জাদু করে, অপরদিকে সূরা “আল খালাক” নাজিল হয় এবং জাদু ক্রিয়া নষ্ট করে দেওয়া হয়। একদিকে তারা শত চেষ্টা করেও ছাগীর গোশতে বিষ মিশিয়ে রাসূলুল্লাহ সা.কে দাওয়াত করে তার সামনে পেশ করে, অন্যদিকে আল্লাহ পাক স্বীয় নবী সা. কে ওই ব্যাপারে সতর্ক করে দেন এবং তারা বিফল মনোরথ হয়। এ ধরনের আরো বহু ঘটনা তার জীবনে পরিলক্ষিত হয়।
তাফসীর ইবনে কাসীর এও রয়েছে যে, এক সফরে রসুল সা. একটি ছায়াদার বৃক্ষের নীচে দুপুরে ঘুমিয়ে ছিলেন। এরূপ ছায়াদার বৃক্ষ অভ্যাসগতভাবে প্রতি মঞ্জিলে সাহাবীগণ খুঁজে খুঁজে নবী সা. এর জন্য নির্দিষ্ট করে রাখতেন। হঠাৎ এক বেদুইন সেখানে এসে যায়। বৃক্ষের শাখায় ঝুলন- নবী সা.এর তরবারী খানা নামিয়ে বেদুইন তা খাপ থেকে বের করল এবং বলল ঃ “বলত এখন তোমাকে কে রক্ষা করবে?” রাসূল সা.বললেন ঃ “আল্লাহ আমাকে রক্ষা করবেন।” তখনই বেদুইনের হাত কেপে উঠল এবং তরবারি খানা তার হাত থেকে পড়ে গেল। আর সেই বেদুইনের মাথা গাছের সাথে সজোরে আঘাত প্রাপ্ত হল। ফলে তার মাথা চূর্ণ-বিচূর্ণ গেল। সে সময় আল্লাহ তাআলা এ আয়াত নাজিল করলেন।
ইবনে হাতিম রা. বর্ণনা করেছেন যে, যখন রাসূল সা. বনু আনসার গোত্রের সাথে যুদ্ধ করছিলেন সে সময় তিনি “জাতুর রিকা” নামক খেজুরের বাগানে একটি কুপে পা লটকিয়ে (ঝুলিয়ে) বসে ছিলেন। এমন সময় বনু নাজ্জার গোত্রের ওয়ারিম নামক একজন বলে ওঠে ঃ “দেখ আমি এখনই মুহাম্মদকে হত্যা করছি।” লোকেরা জিজ্ঞেস করল কিরূপে? সে লোকটি বলল ঃ “আমি কোন বাহানা করে তার তরবারিটি নিয়ে নিব। তারপর ওই তরবারী দ্বারাই তার জীবন শেষ করব।” এ কথা বলে সে রাসূল সা. এর কাছে আসল এবং এ কথা বলার পর রাসূলের তরবারীটা দেখতে চাইল। নবী সা. তাকে তরবারীটা দিয়ে দিলেন। কিন' ওটা হাতে নেওয়া মাত্রই সে এত কাপতে শুরু করল যে, শেষ পর্যন- তরবারী হাতে রাখতে পারল না। হাত থেকে পড়ে গেল। তখন রসুল সা. বললেন ঃ তোমার ও তোমার কুমতলবের মাঝে আল্লাহ প্রতিবন্ধক হয়েছিলেন। ওই সময় এ আয়াতটি নাজিল হয়।
হুয়াইরীশ ইবনে হারিসেও এইরূপ একটা ঘটনা প্রসিদ্বি লাভ করেছে। ইবনে মিরদুয়াই রা. বর্ণনা করেছেন ঃ সাহাবায়ে কেরামের অভ্যাস ছিল যে, সফরে তারা যেখানে বিশ্রামের জন্য থাকতেন সেখানে রাসূল সা. এর জন্য ঘন ছায়াযুক্ত একটি বড় গাছ রেখে দিতেন। নবীজি সেই গাছের নীচে বিশ্রাম করতেন। একদা তিনি ঐরূপ একটি গাছের নীচে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন এবং নবীজির তরবারীখানা গাছেই লটকানো ছিল। এমন সময় একটি লোক এসে পড়ে এবং তরবারী খানা হাতে নিয়ে বলে যে, “এখন তোমাকে কে বাচাবে?” তিনি বললেন ঃ “আল্লাহ বাচাবেন। তুমি তরবারি রেখে দাও।” তখন সে এতই আতঙ্কিত হয়ে পড়ে যে, তাকে হুকুম পালন করতেই হয়। সে তরবারি রসূল সা. এর সামনে রেখে দেয়। সে সময় আল্লাহ এ আয়াত নাজিল করেন।
সাহাবাগণ একটি লোককে নবী সা.এর কাছে ধরে নিয়ে আসেন এবং তাঁকে বলেন এ লোকটি আপনাকে হত্যা করার ইচ্ছা করছিল। তখন লোকটি কাপতে শুরু করে। রাসূল তাকে তখন বলেন তুমি আমাকে হত্যা করতে চাইলেও আল্লাহ তোমার ইচ্ছা পূর্ণ করবেন না।
---৪-৭ম খণ্ড,তাফসীর ইবনে কাসীর
উপরোক্ত আলোচনা থেকে বুঝা গেল যে, আলীকে ১ম খলিফা হিসেবে জনগণের কাছে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য কখনো এ আয়াতটি নাজিল হয়নি। অর্থাৎ আয়াতটির ব্যাখ্যায় শিয়ারা মনগড়া ও অযৌক্তিক কাহিনী বর্ণনা করেছে-যা সর্বজনস্বীকৃত নয়।
আবার সৈয়দ কুতূব শহীদ রহ. তার “তাফসীর ফি যিলালিল কুরআন” এ সূরা মায়েদার ৬৭নং আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখেছেন:-
দাওয়াতের কাজে আপোষের কোন সুযোগ নেই ঃ
এখানে রাসূল সা. কে এই মর্মে চূড়ান- নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ পুরো বিধান পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তিনি যেন জনগণের কাছে পৌঁছিয়ে দেন। আর নবী সা.এ হকের বাণী প্রচার করতে গিয়ে পার্থিব কোনও বিবেচনাকে যেন সামনে না রাখেন। অন্যথায় মনে রাখতে হবে তিনি যেন রিসালাতের দায়িত্ব পুরোপুরি আঞ্জাম দেননি এবং আল্লাহর পয়গাম সঠিক ভাবে মানুষের কাছে পৌঁছাননি। আল্লাহ তাআলা তাঁকে মানুষের অনিষ্ট থেকে হেফাজত করবেন। যার হেফাজতের দায়িত্ব স্বয়ং রাব্বুল আলামীন নিজ হাতে গ্রহণ করেছেন, অন্য মানুষ তার কোনও ক্ষতি করতে পারে না।
নিঃসন্দেহে ঈমানের বাণী প্রচারে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভোগা উচিত নয়। বরং তা পুরোপুরি নিঃসঙ্কোচে মানুষের কাছে পৌছিয়ে দেওয়া উচিত। এতে বিরুদ্বাচরণকারীরা যা বলার বলুক এবং দ্বীনের শত্রুরা যা করার করুক। কারণ আকীদা বা বিশ্বাসের সত্য বাণী কামনা-বাসনার তোষামোদ ও তাবেদারী করে না।
অনুরূপভাবে তা মনের অনাকাংখিত ইচ্ছার প্রতিও ভ্রূক্ষেপ করে না বরং তা এ বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখে যে, ঈমানের প্রচার এমন হবে যেন তা মানব অন-রের অন-স'লে কার্যকরী অবস'ায় পৌছে। আকীদার এ সত্য বাণী বলিষ্ঠ ও চূড়ান- ভাবে প্রচার করার অর্থ কর্কশতা ও নিষ্ঠুরটা নয়। আল্লাহ তাআলা তার রাসূল সা. কে হেকমত ও উত্তম উপদেশের মাধ্যমে মানুষ কে তার পথে আহ্বান করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। এক্ষেত্রে কুরআনে হাকিমের বিভিন্ন নির্দেশের মাঝে পরষ্পর কোনও বিরোধিতা পরিলক্ষিত হয় নাই।
হেকমত (কৌশল) ও উত্তম উপদেশ স্বয়ং বর্ণনার ক্ষেত্রে চূড়ান- ও অকাট্য এবং সততা নির্দেশের পরিপন'ী নয়। প্রচারের মাধ্যম ও প্রকৃতি আর খোদ প্রচার ও তার বিষয় বস' এক জিনিস নয়, এক্ষেত্রে কাম্য হচ্ছে পরিপূর্ণ আকীদার হক বাণী। বর্ণনার ক্ষেত্রে উচিৎ অসপষ্টতা, তোষামদ ও নমনীয়তার আশ্রয় গ্রহণ না করা।
আকীদাগত বাস-ব সত্যের ক্ষেত্রে আংশিক সমাধান এবং আপোষমূলক বক্তব্য বলতে কিছুই নেই। দাওয়াতের সূচনালগ্ন থেকেই রাসূল সা. দাওয়াতী কাজের ক্ষেত্রে হেকমত ও উত্তম উপদেশের পন'া অবলম্বন করে দাওয়াত দিতেন। তিনি আকীদার ক্ষেত্রে চূড়ান- বক্তব্য রাখতেন, কোন প্রকার আপোষমূলক বক্তব্য থেকে বিরত থাকতেন। তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে এ কথা বলার জন্য আদিষ্ট হয়েছিলেন ঃ
“হে কাফেররা! তোমরা যার ইবাদত কর, আমি তার ইবাদত করি না। ”-এখানে রাসূল নাফারমান ্বান্দাদেরকে বিশ্লেষণ সহ (কাফের) সম্বোধন করেন এবং স্পষ্ট ভাবে উভয়ের কাজের ভিন্নতা বর্ণনা করেন। এক্ষেত্রে তিনি তাদের উপস'াপিত আংশিক সমাধান গ্রহন করেন নি এবং তিনি তাদেরকে সম্বোধন করে বলেন যে, তারা নিঃসন্দেহে নির্ভেজাল বাতিলের উপর প্রতিষ্ঠিত। আর নবী সা. নিজে পরিপূর্ণ সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত। সুতরাং তিনি হকের বানী উঁচু, বলিষ্ঠ, পূর্নাঙ্গ ও চূড়ান-ভাবে এমন বাচনভঙ্গিতে উপস'াপন করেছেন, যাতে কোন প্রকার কর্কশতা, কঠোরতা এবং দুর্বলতা ছিল না।
---১৮০, ৫ম খণ্ড, ফি যিলালিল কুরআন
তাফসীরে মাআ’রেফুল কুরআনে হযরত মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ শফী রহ. বলেছেন ঃ
প্রচারকার্যের তাগিদ ও রাসূল সা. এর প্রতি সান-না ঃ
আয়াতদ্বয়ে এবং এর পূর্ববর্তী উপর্যুপুরি দুই রুকুতে ইহুদী ও খ্রিষ্টানদের বক্রতা, বিপথগামীতা , হটকারিতা এবং ইসলাম বিরোধী ষড়যন্ত্র বর্ণিত হয়েছে। মানুষ হিসেবে এর একটি স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া এরুপ হওয়াও সম্ভাব পর ছিল যে, এর ফলে মহানবী সা. নিরাশ হয়ে পড়তেন কিংবা বাধ্য হয়ে প্রচার কার্যে ভাটা দিতে পারেতেন। আর এর দ্বিতীয় প্রতিক্রিয়া এরুপও হতে পারত যে, তিনি বিরোধিতা, শক্রুতা ও নির্যাতনের পওয়া না করে প্রকারাকার্যে ব্যাপৃত থাকতেন, ফলে তাঁকে শত্রুর পক্ষ থেকে নানা রকম কষ্ট ও বিপদাপদের সম্মুখীন হতে হতো। তাই তৃতীয় আয়াতে এর দিকে রাসূল সা. কে জোরালো ভাষায় নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, আপনার প্রতি অল্লাহর পক্ষ থেকে যা কিছু অবতরণ করা হয়, তার সম্পূর্নটিই বিনা দ্বিধায় মানুষের কাছে পৌঁছে দিন; কেউ মন্দ বলুক অথবা ভাল, বিরোধিতা করুক অথবা গ্রহণ করুক।
অপরদিকে তাকে এ সংবাদ দিয়ে আশ্বস' করা হয়েছে যে, প্রচারকার্যে কাফেররা আপনার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। আল্ল্লাহ তাআলা স্বয়ং আপনার দেখা শুনা করবেন আয়াতের বাক্যটি প্রনিধানযোগ্য।-এর উদ্দেশ্যে এই যে, যদি আপনি আল্লাহ তাআলার একটি নির্র্দেশও পৌঁছাতে বাকী রাখেন তবে আপনি পয়গম্বরির দায়িত্ব থোক পরিত্রাণ পাবেন না। এ কারনেই রাসূল সা. আজীবন এ কর্তব্য পালনে পূর্ন সাহসিকতা ও সর্বশক্তি নিয়োগ করেন।
বিদায় হজ্জের সময় মহানবী সা. এর একটি উপদেশ ঃ
বিদায় হজ্জের প্রসিদ্ধ ভাষণটি একদিক থেকে ছিল ইসলামের আইন এবং অপরদিকে দিয়েছিলেন দয়ার সাগর , পিতা-মাতার চেয়েও অধিক ্লেহশীল পয়গম্বরের অনি-ম উপদেশ। এ ভাষণে তিনি সাহাবায়ে-কেরামের অভূতপূর্ব সমাবেশকে লক্ষ্য করে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ জারি করার পর প্রশ্ন করলেন ঃ بلغٺ ١لاہل শোন আমি কি তোমাদের কাছে দ্বীন পৌঁছে দিয়েছি? সাহাবীগণ স্বীকার করলেন, “জি হ্যাঁ, অবশ্যই পোঁছে দিয়েছেন।’’ এরপর নবী সা. বললেন ঃ “তোমরা সাক্ষী থেকো।” তিনি আরও বলেলেন- قليبلغ١لشاہد١لغاءب অর্থাৎ এ সমাবেশে যারা উপসি'ত আছো, তারা আমার কথাটি অনুপসি'তদের কাছে পৌঁছে দিবে।
অনুপসি'ত বলতে দুই শ্রেণীর লোকদের বুঝানো হয়েছে।
এক.যারা তখন পৃথিবীতে বিদ্যমান ছিল কিন' সমাবেশে উপসি'ত ছিল না এবং দুই. যারা তখন পর্যন- জন্মগ্রহণ করেনি। তাদের কাছে পয়গাম পৌঁছানোর পন'া, ইসলামী আন্দোলনের প্রচার ও প্রসার। সাহাবী ও তাবেয়ীগণ এ কর্তব্য যাথাযথভাবে পালনের চেষ্টা করেছেন। এর প্রভাবেই সাধারণ অবস'ায় সাহাবায়ে কেরামগণ রাসূল সা. এর বাণী ও হাদিসকে আল্লাহর একটি বিরাট অমানতের ন্যায় অনুভব করেছেন। তাঁরা রাসূলুল্লাহ সা.এর পবিত্র মুখ নিঃসৃত প্রত্যকটি কথাই উম্মাতের কাছে পৌঁছে দিতে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন। যদি কোন বিশেষ কারণ অথবা অদক্ষতার দরুণ কেউ বিশেষ হাদীস অন্যদের কাছে বর্ণনা করতেন তবে, মৃত্যুর মুহূর্তে তা দু-চারজনকে অবশ্যই শুনিয়ে দিয়েছেন যাতে এ আমানতের দায়িত্ব থেকে অব্যহতি লাভ করতে পারেন। সহীহ বুখারীতে হযরত মুয়ায রা. এর একটি হাদীস সম্পর্কে এমনি ধরনের একটা ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। বলা হয়েছে ঃ
----আরবী--- অর্থাৎ এ আমানত না পৌঁছানের কারণে গোনাহগার হওয়ার ভয়ে হযরত মুয়ায হাদীসটি মৃত্যুর সময় বর্ণনা করেছেন। আয়াতের এ দ্বিতীয় বাক্যে সুসংবাদ দেয়া হয়েছে যে, যতই বিরোধিতা করুক, শত্রুরা আপনার কেশাগ্রও স্পর্শ করতে পারবে না।
হাদিসে বলা হয়েছে ঃ
এ আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বে কয়েকজন সাহাবী দেহরক্ষী হিসেবে সাধারণভাবে নবী সা. এর সাথে থাকতেন এবং গৃহে ও প্রবাসে তাঁকে পাহারা দিতেন। এ আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর রাসূল সা. তাঁর প্রহরী সাহাবীদেরকে বিদায় করে দেন। কারণ এ দায়িত্ব স্বয়ং আল্লাহ তাআলা স্বহসে- গ্রহন করেছেন।
হযরত হাসান রা. থেকে বর্ণিত এক হাদীসে মহানবী সা. বলেন ঃ ইসলামী আন্দোলনের নির্দেশ পাওয়ার পর আমার মনে বেশ ভীতির সঞ্চার হয়েছিল। কারণ চারদিক থেকে হয়ত সবাই আমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করবে এবং বিরোধীতা করবে। অতপর যখন এ আয়াত নাযিল হল, তখন ভয়-ভীতি দুর হয় মন প্রশান- হয়ে যায়। ---তাফসীরে কবীর
এ আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর ইসলমী আন্দোলনের কাজে কেউ রাসূল সা. এর বিন্দুমাত্র ক্ষতি করতে পারে নি। অবশ্য যুদ্ধ ও জেহাদে সাময়িকভাবে কোনরুপ কষ্ট পাওয়া এর পরিপনি' নয়।
---৩৪৪নং পৃষ্ঠা, তাফসীরে মাআ’রেফুল কুরআন
আহলে বাইত (নবী পরিবার) ও ইমামত (বার ইমামে বিশ্বাস) নিয়ে অতিরঞ্জিত কথাবার্তার সমাহার “শিয়াদের মৌলিক বিশ্বাস” নামক বইতে শিয়া লেখক আল্লামা মুহাম্মদ রেজা আল-মুজাফফর লিখেছেনঃ
৭. শরীয়তের দলিলগুলোর (ইসলামের জ্ঞানের উৎস) উৎস হলো ঃ- পবিত্র কুরআন, রাসূল সা. ও ইমামগণ আ.এর সুন্নাত, ইজমা এবং বুদ্ধিবৃত্তি (আকল)।
---৯-১০, শিয়াদের মৌলিক বিশ্বাস
উপরোক্ত ৭ নং দাবির জবাব ঃ
আমরা জানি যে, শরীয়তে ইসলামী জ্ঞানের দ্বিতীয় উৎস হল রাসূলের সুন্নাত। কিন' শিয়ারা তাদের ইমামত নামক কাল্পনিক বিশ্বাসকে মজবুত করার জন্য ইসলামী জ্ঞানের উৎসের দ্বিতীয়টিতে রাসূলের সুন্নাত এর সাথে তাদের ‘ইমামদের সুন্নাত’ কথাটি জুড়ে দিয়েছেন। রাসূলের জীবনাদর্শই আমাদের সুন্নাত কিন' ইমামদের জীবনাদর্শ কিভাবে আমাদের সুন্নাত হতে পারে? শুধু তাই নয়, তারা তাদের বারজন ইমামদেরকে বক্তব্যে, আলোচনায়, বই-পত্র-পত্রিকায় এমনভবে উপস'াপন করে যেন রাসূল সা.এর আদর্শ মুসলমানদের জন্য যথেষ্ট নয় এবং হযরত আলী রা. হচ্ছেন শিয়াদের নবী (নাউযুবিল্লাহ)। আসলে শিয়ারা হযরত আলী রা. সহ তাদের অন্যান্য ইমামগণকেই বিভিন্ন প্রসঙ্গে বেশি উপস'াপন করেন এবং রাসূলের আদর্শের কথা কম বলেন, নবী সা. এর হাদীস কম উপস'াপন করে থাকেন। এসব কারনে অনেকের ধারণা শিয়াদের নবী হচ্ছেন হযরত আলী রা.।
তারা কখনো কখনো কোথাও ইমামাতকে নবুওয়াত-রিসালতের মত খেদায়ী কার্যক্রম বলেছেন, কোথাও ইমামদের সহপাটীকে উমুক ইমামের সাহাবী, আবার ইসলামের জ্ঞানের দ্বিতীয় উৎসের অংশে রাসূলের আদর্শ তথা সুন্নাতের সাথে তাদের ইমামদের আদর্শকে বা বাণীকে সুন্নাত বলে চালিয়ে দিয়েছেন।
তাছাড়া শিয়ারা কোন একটি প্রসঙ্গে কথা বলতে বা আদর্শের উদাহরণ দিতে রাসূলের হাদীস বা আদর্শকে উপেক্ষা করে তাদের ইমামদের বাণী বর্ণনা করে থাকে এবং তা হাদীস বলে অভিহিত করে। যা একান-ই অভিশপ্ত কাজ। কেননা ইমামতে বিশ্বাসের সাথে তারা রিসালাতকেই সমূলে উৎপাটিত করে চলেছে। কারন এভাবে তারা তাদের ইমামদের আদর্শ বা বাণী দ্বারা রাসূলের আদর্শ বা বাণীকে প্রতিস'াপন করবে, রাসূলের সুন্নাত তথা তাঁর আদর্শকে বাদ দিয়ে দিবে। যা রিসালাতের জন্য মারাত্বক হুমকিস্বরুপ।
শিয়ারা তাদের ইমামদের সহচরকে সাহাবী, ইমামদের বাণীকে হাদীসের মত বর্ণনা করে তা হাদীস নামে চালিয়ে দেয় তার কিছু প্রমাণ নিুরুপ ঃ
মুজতাহিদ সম্পর্কে আমদের বিশ্বাস ঃ
আহলে বাইতের ইমাম জাফর সাদিক আ. বলেন,
“মুজতাহিদকে প্রত্যাখান করার অর্থ হলো ইমাম আ. কে প্রত্যাখান করা। আর ইমামকে প্রত্যাখান করার অর্থ হলো আল্লাহকে প্রত্যাখান করা। আর এটা অংশীবাদ ও শিরকের নামান-র বৈ কিছু নয়।”
---১০, শিয়াদের মৌলিক বিশ্বাস
মহান আল্লাহ সম্পর্কে আমাদের বিশ্বাস ঃ
ইমাম বাকের আ.বলেন ঃ “তিনি বিজ্ঞদের ব্যাখ্যার উর্ধে এবং তিনি সূক্ষ্ন জ্ঞানের নাগালের বাইরে।” ---১১,শিয়াদের মৌলিক বিশ্বাস
তাকিয়া সম্পর্কে আমাদের বিশ্বাস ঃ
বিশেষ করে ইমাম সাদিক আ. বলেন, “যার তাক্যিয়া নেই, তার দ্বীন নেই।”
হযরত ফাতিমা আ. এর স্বর্গীয় ব্যক্তিত্ব ঃ
ইমাম সাদেক আ. এর কাছে জনৈক ব্যক্তি প্রশ্ন করল, ‘‘কেন হযরত ফাতিমা আ. কে যাহরা বা আলোকোজ্জল বলা হয়েছে?’’ উত্তরে তিনি বলেন ঃ “তার কারণ হচ্ছে, হযরত ফাতেমা যখন ইবাদাতের উদ্দেশ্যে মেহরাবে দণ্ডায়মান হতেন, তখন তাঁর নূর আসমানের অধিবাসীদের জন্য প্রজ্জলিত হয়ে উঠত, যেমনিভাবে জমিনের অধিবাসীদের জন্যে আকাশের তারকা আলোকোজ্জল দৃষ্ট হয়।
---২২, হযরত মা ফাতেমা আ.
ইমাম জাফর সাদিক আ. বলেছেন ঃ “যদি আল্লাহ আমিরুল মুমিনীন আলী আ. কে ফাতেমার জন্য সৃষ্টি না করতেন তাহলে তাঁর জন্য ভূপৃষ্ঠে কোন স্বামীই পাওয়া যেত না।”---২১, হযরত মা ফাতেমা আ.
ঠিক হাদীসের মত করেই তারা তাদের ইমামদের কথা বর্ননা করে যার প্রমাণ ঃ
‘‘হযরত সুফিয়ান বিন ওয়াইনাহ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইমাম জাফর সাদেক আ. বলেছেন ঃ “দুই সমুদ্রকে প্রবাহিত করেন যেন, তারা পরষ্পর মিলিত হয়” আয়াতটি দ্বারা হযরত আলী আ. ও হযরত ফাতেমা আ. কে বোঝানো হয়েছে।”
---২১, হযরত মা ফাতেমা আ.
এছাড়াও শিয়ারা তাদের ইমামদের সহচরদেরকে সাহাবী বলে প্রচার করতেও দ্বিধাবোধ করেনি। সাহাবী একটি ইসলামী পরিভাষা যার ব্যবহার বা প্রয়োগক্ষেত্রও নির্ধারিত। সাহাবী বলা হয় তাদের যারা আজীবন বা জীবনের কোন এক সময় মহানবী সা.এর সাক্ষাত পেয়েছেন এবং আমৃত্যু ইসলামের পথে টিকে ছিলেন। কিন' এ মর্যাদাপূর্ণ পরিভাষাটি শিয়ারা ইমামদের সহচরদের ক্ষেত্রেও ব্যবহার করেছে। যারা রাসূলের সাহাবী তাঁরা হলেন নবী মোহাম্মদ সা. এর পরেই সবচেয়ে মর্যাদাবান ও পূণ্যবর্তী ব্যক্তি।
যারা মর্যাদার দিক দিয়ে সাহাবীদের ধারের কাছেও যেতে পারে না, শিয়ারা তাদের সাহাবী বলে সম্বোধন করেছে তার প্রমাণ ঃ
‘‘এ বিষয়টির ওপর লক্ষ্য রেখেই ইমাম সাদিক আ. তাঁর কোন একজন সাহাবী মোয়াল্লা বিন খুনাইসের প্রশ্নের জবাবে এ ব্যপারে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। মোয়াল্লিম বিন খুনাইস ইমামকে ভাতৃত্বের অধিকার সম্পর্কে প্রশ্ন করেছিলেন।’’---১০৫, শিয়াদের মৌলিক বিশ্বাস
‘‘তবে শিয়াদের নিকট ইমামগণ আ. ভাতৃত্ব কামনা করেছেন, তা এ ভাতৃত্বের চেয়েও উর্ধ্বে। একাধিক হাদীস বর্ণিত হয়েছে যা এ বক্তব্যের সত্যতা প্রমাণ করে। উদাহরণস্বরুপ আযান বিন তাগলিব নামে ইমাম সাদিক আ. এর এক সাহাবীর সাথে তার কথোপকথন উল্লেখ করাই যথেষ্ট।’’
---১০৫, শিয়াদের মৌলিক বিশ্বাস
এবার আমরা দেখবো, কিভাবে শিয়ারা তাদের ইমামদের উক্তি বা আদর্শকে অবিকল হাদিসের মতই উল্লেখ করেছেন, যা অনেকে বিশেষ করে ইসলামী জ্ঞানে অপরিচিত ব্যক্তিগণ হাদীস মনে করবেন, আসলে যা কখনই হাদীস নয়। হাদীস হল রাসূল (সাঃ) এর কথা, কাজ বা মৌন সম্মতি। তাহলে শিয়াদের এ কাজের প্রমাণ দেখুন:-
আবু বাসির থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইমাম বাকির আ. বলেছেন ঃ “একবার পালা অনুযায়ী রাসূল সা. হযরত আয়েশার ঘরে ছিলেন .........এজন্য কুরআন অবতীর্ণ করিনি যে আপনি কষ্টে নিপতিত হবেন।”
---উসূলে কাফি,খন্ড ২,পৃষ্ঠা ৯৫,হাদীস নং ৬ ; নিউজ লেটার, মে-জুন ২০০৯
ইমাম জাফর সাদিক আ. বলেন, “যদি আল্লাহ আমিরুল মুমীনিন আলী আ. কে ফাতেমার জন্য সৃষ্টি না করতেন তাহলে তার জন্য ভূপৃষ্ঠে স্বামীই পাওয়া যেত না।
---২১,হযরত মা ফাতিমা আ.
ইমাম সাদেক আ. এর কাছে এক ব্যক্তি প্রশ্ন করল,“কেন হযরত ফাতেমাকে যাহরা বা আলোকজ্জল বলা হয়েছে ? .............. আকাশের তারকা আলোকোজ্জল দৃষ্ঠ হয়।” ---২২, হযরত মা ফাতিমা আ.
“শিয়াদের মৌলিক বিশ্বাস” বইয়ের ১০৫ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে-
“এ কথার স্বপক্ষে প্রমাণ স্বরূপ মোয়াবিয়া ইবনে ওহাবের হাদীসটি পাঠকের সামনে তুলে ধরাই যথেষ্ঠ মনে করছি।”
“মোয়াবিয়াহ ইবনে ওহাব থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আমি ইমাম সাদিক আ.এর কাছে সবিনয়ে বললাম, অন্যান্য মুসলিম যাদের সাথে আমরা বসবাস করি কিন- তারা শিয়া নয়, তাদের সাথে কিরুপ ব্যবহার করব? ইমাম সাদিক আ. বললেন ঃ তোমাদের ইমামগণ তাদের অসুস' জনকে দেখতে যায়, তাদের জানাযায় অংশ গ্রহণ করে, তাদের পক্ষে বা বিপক্ষে সাক্ষীও দেয়, আর তাদের আমানতের খেয়ানত করে না।”
---১০৫নং পৃষ্ঠা, শিয়াদের মৌলিক বিশ্বাস
ইমাম সাদিক আ.তার কোন একজন সাহাবী মোয়াল্লা বিন খুনাইসের প্রশ্নের জবাবে বলেন ঃ
মেয়াল্লা বিন খুনাইস থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,আমি ইমাম সাদিক আ. এর কাছে জিজ্ঞাসা করলাম “এক মুসলমানের ওপর অপর মুসলমানের অধিকার কি?” ইমাম সাদিক (আ:) বললেন ‘‘ প্রত্যেক মুসলমানই অপর মুসলমানের ওপর ৭টি অত্যাবশ্যকীয় অধিকার রাখে। এ অধিকার গুলোর প্রত্যেকটিই অপর মুসলমানের জন্যেও আবশ্যক। যদি তাদের কেউ এ অধিকার হরন করে তবে সে আল্লাহর আনুগত্য ও বেলায়েত এবং আনুগত্য থেকে বহিষ্কৃত হয়েছে।”
---শিয়াদের মৌলিক বিশ্বাস
ছিঃ ধিক শিয়াদের! উসূলে কাফী নামক শিয়াদের বইয়ে ইমামগণের উক্তিকে তারা হাদীস বলে ব্যক্ত করেছে। কিন- হাদীসে থাকে আল্লাহর রাসূল সা. এর উক্তি। এভাবে তারা হাদীস নামক ইসলামী শরীয়তের জ্ঞানের উৎসকে ধ্বংস করার চেষ্টা করছে।
রাসূলের পরেই শ্রেষ্ঠ যে ব্যক্তিবর্গ, “সাহাবী” তাদের জন্য বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ উপাধী, সেটা কেন যেখানে সেখানে ব্যবহার করা হবে। এবার সাহাবী ও তাদের মর্যাদার ব্যাপারে কিছু কথা বলা প্রয়োজন মনে করছি। শিয়ারা যেভাবে ইমামগণের বাণীকে বর্ণনা করে এবং বর্ণনাকারীকে সাহাবী বলে সম্ভোধন করে যেন সেগুলো হাদীস এর মত মনে হয়। উসুলে কাফী নামে শিয়াদের একটি গ্রন' যেখানে রাসূলের বাণীর তুলনায় ইমামগণের বাণীই অধিক পরিমানে রয়েছে, যেটিকে তারা হাদীসগ্রন' বলে অভিহিত করে থাকে। তাদের কাছে রাসূলের হাদীসের পরিমান কম। এর একটি কারণ আছে-শিয়াদের আকায়েদ এর মধ্যে অন্যতম আকীদা হচ্ছে সাহাবী বিদ্ধেষ। অর্থাৎ সাহাবীদের ব্যাপারে মিথ্যা, মনগড়া অপবাদ প্রদান করা। তারা শুধু হযরত সালমান ফারসী, আবূ জর গিফারী, মেকদাদ ও আম্মাার ইবনে ইয়াসির প্রমুখ অল্প সংখ্যক সাহাবী ব্যাতিত অন্য সকল সাহাবী (বিশেষ করে হযরত আবু বকর রা. , হযরত উমার রা. এবং হযরত উসমান রা. আবু হুরায়রা ও হযরত আয়েশা রা. সহ অন্যান্য সাহাবীগণ) থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করে, এমনকি তাঁদেরকে মুনাফিক এবং কাফের পর্যন- বলে গালি দেন। যেহেতু তারা অধিকাংশ সাহাবী কে ঘৃনা করে তাই তাদের দ্বারা বর্ণনা করা হাদীস তাদের কাছে গ্রহনযোগ্য নয়। আর এই ঘাটতি পূরণ করার জন্য তারা এসব মিথ্যার আশ্রয় গ্রহন করেছে অর্থাৎ ইমামগণের বাণীকে হাদীস বলে চালিয়ে দিয়েছে। আর তাই এসব হাদীস ইসলামে জাল হাদীস নামে পরিচিত। সাহাবীদের মিথ্যা অপবাদ দিয়ে জাল হাদীস তৈরির পরিণাম যে কত ভয়াবহ তা কল্পনা করা যায় না। কুরআন ও হাদীসে স্বয়ং রাসূল সা. তাঁর সাহাবীদের মর্যাদার ব্যাপারে অনেক কথা বলেছেন যা নিুে বর্ণিত হল ঃ
সাহাবী কারা?
‘সাহাবী’ শব্দটি আরবী “সুবহত”শব্দের একটি রূপ। এক বচনে সাহাবী আর বহু বচনে সাহাবা। আবিধানিক অর্থ সঙ্গী, সাথী, এক সাথে জীবনযাপনকারী, সহচার্যে অবস'ান করা ইত্যাদি। ইসলামী পরিভাষায় সাহাবী শব্দ দ্বারা রাসূল সা. এর সঙ্গী-সাথীদের বোঝায়।
আল্লামা ইবনে হাজার রা. “আল-ইসাবা ফি তাময়ীযিম সাহাবা” গ্রনে' সাহাবীর সংজ্ঞা দিয়েছেন এভাবে ঃ
“সাহাবী সেই ব্যক্তি যিনি রাসূল সা. এর সাথে ঈমান সহকারে সাক্ষাত লাভ করেছেন এবং ইসলামের ওপরই মৃত্যু বরণ করেছেন।”
সাহাবীদের মর্যাদা ঃ
সাহাবীদের মর্যাদার পার্থক্য থাকতে পারে, স-রভেদ থাকতে পারে। কিন'ু তাদের পরবর্তী যুগের কোন মুসলমানই,তা তিনি যত বড় জ্ঞানী, গুণী ও সাধক হোন না কেন, কেউই একজন সাধারণ সাহাবীর ধারের কাছেও যেতে পারেননা এবং তা কোরআন, সুন্নাহ এবং ইজমা দ্বারা প্রমানিত।
সাহাবীগণই রাসূল সা. ও তার উম্মতের মধ্যে একমাত্র যোগসূত্র, সেতুবন্ধন। পরবর্তী উম্মত অর্থাৎ আমরা পবিত্র কুরআন, কুরআনের ব্যাখ্যা, রাসূলের পরিচয়, তার শিক্ষা, আদর্শ অর্থাৎ দ্বীনের সবকিছু একমাত্র তাদের সূত্রে জানতে পেরেছি। অতএব তাদের বাদ দিলে বা তাদের প্রতি অবিশ্বাস করলে দ্বীনের মূল ভিত্তিই ধ্বসে পড়ে।
হাফেজ আবু বকর ইবনে খতিব আল বাগদাদী বলেন ঃ
“আল্লাহর রাসূল সা. তাঁদের সম্পর্কে কোন ঘোষণা না দিলেও তারা হিজরত, জিহাদ, সাহায্য, আল্লাহর পথে তথা ইসলামী আন্দোলনে নিজেদের সম্পদ অকাতরে ব্যয়, দ্বীনের ব্যপারে উপদেশ, ঈমান ও ইয়াকীনের দৃঢ়তা ইত্যাদি কর্মকাণ্ড প্রমাণ করতো যে, আদালাত , ঈমান, বিশ্বাস, পবিত্রতা ইত্যাদি ক্ষেত্রে কিয়ামত পর্যন- পৃথিবীতে যত ন্যায়পরায়ন ব্যক্তিই জন্মগ্রহণ করুন না কেন, তারা ছিলেন সকলের থেকে উত্তম।
রাসূল সা. তার সাহাবীদের গালি দেয়া, অপবাদ দেয়া, হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে সমালোচনা করতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। এরপরও শিয়ারা সাহাবীদের ব্যাপারে কল্পিত, মনগড়া ও মিথ্যা অপবাদ দিয়ে আল্লাহর রাসূলের নির্দেশ প্রত্যাখ্যান করেছে, আল্লাহর রাসূলের লানত কুড়িয়েছে। এব্যপারে পরে আলোচনা হবে।
“শিয়াদের মৌলিক বিশ্বাস”বইয়ে লেখক আল্লামা মুহাম্মদ রেজা আল-মুজাফফর লিখেছেন ঃ
৮. “ইমামগণ আ. কে প্রত্যাখান করার অর্থ আল্লাহকে প্রত্যাখান করা। আর এটা অংশীবাদ ও শিরকের নামান-র ছাড়া আর কিছুই নয়।”
---৯-১০, শিয়াদের মৌলিক বিশ্বাস
উপরোক্ত ৮ নং দাবীর জবাব ঃ
মনগড়া মতবাদ আর কাল্পনিক ইতিকথার এখানেই শেষ নয়। তারা তাদের ইমামত নিয়ে, বার ইমাম নিয়ে যেমন ইচ্ছা তেমনভাবে কল্পকাহিনী লিখেছেন, অনেক ক্ষেত্রে মিথ্যা কাহিনী লিখেছেন। যেমন শিয়াদের মৌলিক বিশ্বাস বইয়ের ১০নং পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে ঃ
“ইমামগণ আ. কে প্রত্যাখান করার অর্থ রাসূল সা. কে প্রত্যাখান করা, আর রাসূলকে প্রত্যাখান করা মানে আল্লাহকে প্রত্যাখান করা যা অংশীবাদ ও শিরক”।
আমরা যারা সুন্নি তারা কখনই ইমামদের প্রত্যাখান করি না। তবে যেহেতু রাসূল সা. ই আমাদের প্রথম এবং প্রধান আদর্শ, তাই আগে তিনি, পরে অন্যকেউ। ইমামদের আমরা সম্মান করি, মর্যাদা দেই তার মানে এই নয় যে, যত্রতত্র রাসূল সা. এর আদর্শ বাদ দিয়ে শুধু ইমামদের আদর্শ নিয়ে ব্যস- থাকব, তাদেরকে বাণীকে হাদীস বলব এবং ইমামদেরকে রাসূল সা. এর সমান মর্যাদার মনে করব। ইমামদের নিয়ে যতসব অতিরঞ্জিত ও বাড়াবাড়ি কথাবার্তা বলা যা ইমামগণ বলে যাননি ইত্যাদি শিয়াদের গুরত্বপূর্ণ আকিদা-যা ইমামত নামে পরিচিত।
রাসূল সা. এবং রিসালাতের মর্যাদা অনেক উর্ধ্বে, কিন- শিয়ারা বিভিন্ন ভাবে নবী সা. এর সাথে ইমামগণকে এবং রিসালাতের সাথে ইমামতকে এক করে ফেলেছেন যা একান-ই অভিশপ্ত কাজ। কুরআন-হাদীস অনুযায়ী ইমামতের কোন ভিত্তি নেই। রাসূল সা.এর আদর্শ মুসলমানদের সবার, অনাগত সকলের প্রধান, একমাত্র ও অবশ্য পালনীয় আদর্শ যা প্রত্যাখান করা আল্লাহকে প্রত্যাখান করারই নামন-র। আর আল্লাহকে প্রত্যাখান মানে কুফর। তার মানে তাওহিদ ও রিসালাত পরষ্পর সম্পর্ক যুক্ত। যেখানে আল্লাহর রাসূলের আদর্শই আমাদের জন্য যথেষ্ঠ সেখানে ইমামদের আদর্শ কেন আমাদের জন্য অবশ্য পালনীয় হবে? রাসূলের সা.এর আদর্শ জীবন- থাকতে ইমামদের আদর্শ পালন করতে হবে কেন? শিয়ারা ইমামদের কথাবার্তা ও জীবন আদর্শ এমন ভাবে প্রচার করে, যেন রাসূল্লাহর সা. আদর্শের কোন গুরুত্বই নেই। এর প্রমাণ হিসেবে আমরা দেখতে পাই যে, তারা তাদের বইয়ে বিভিন্ন প্রসঙ্গে রাসূলের হাদীস কমই উল্লেখ করেন, অনেক ক্ষেত্রে উল্লেখই করেন না, সেখানে ইমামদের কথা, কাজ, জীবনাদর্শ বা প্রসঙ্গই বেশি প্রচার করেন। শিয়াদের এসবই প্রমাণ করে যে, শিয়াদের কাছে রাসূলের চাইতে ইমামগণের গুরুত্ব অনেক বেশি। আর শিয়াদের এসব বিভ্রান- আচরণের জন্যই তাদের ১ম ইমাম আলী রা. কে অনেকে তাদের নবী ভাবেন। এসব বিভ্রান- আচরণ-আকীদা ইসলামের জন্য যে কতো বড়ো হুমকি তা আলোচনার অপেক্ষা রাখে না।
বিভ্রান- শিয়াদের এ অপরাধ চলতে থাকলে অনেক শিয়ারাই রাসূলের আদর্শ-হাদীসকে প্রয়োজন মনে করবে না। ইমামগণের বাণীকে আসল হাদীস মনে করবে।
ইমামত সম্পর্কে বাড়াবাড়ি আরও কিছু কথাবার্তা নিুে বর্ণিত হল ঃ
৯. “আমরা বিশ্বাস করি যে, নবীগণ হলেন সবদিক থেকে পবিত্র। তাদের মত ইমামগণ আ.ও পবিত্র। আমরা মনে করি যে, ইমামগণ আ.ও মহান আল্লাহ কর্তৃক মানুষের হেদায়াতের জন্য নবী সা.এর প্রতিনিধি বা উত্তরাধিকারী হিসেবে নিয়োগকৃত হবেন।”---শিয়াদের মৌলিক বিশ্বাস
৪. “ইমামত হলো দ্বীনের মৌলিক বিষয়সমূহের একটি, যার উপর বিশ্বাস ছাড়া ইমান পূর্র্ণ হয় না। এক্ষেত্রে পূর্বপুরুষ, আত্বীয়-স্বজন ও শিক্ষক কাউকেও অনুসরণ করা বৈধ নয়। নবুওয়াতের মত ইমামতও হলো মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে দয়া ও করুণা। সুতরাং প্রত্যেক যুগেই পথ প্রদর্শক ইমাম থাকা আবশ্যক যিনি মানুষের হেদায়াতকারী এবং দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণের সংবাদদাতা হিসেবে রাসূল সা.এর প্রতিনিধিত্ব করবেন।”---শিয়াদের মৌলিক বিশ্বাস
“শিয়াদের মৌলিক বিশ্বাস”বইয়ে লেখক আল্লামা মুহাম্মদ রেজা আল-মুজাফফর লিখেছেন ঃ
১০. “ইমামত হল প্রকান-রে নবুওয়াতের মিশনেরই ধারাবাহিকতা। নবী রাসূল প্রেরণ যে কারণে আবশ্যিক, ঠিক একই কারণেই রাসূলের পরে ইমাম নিযুক্ত করাও আবশ্যক।” ---শিয়াদের মৌলিক বিশ্বাস
“নবুওয়াতের মত ইমামতও হলো মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে দয়া ও করুণা। সুতরাং প্রত্যেক যুগেই পথ প্রদর্শক ইমাম থাকা আবশ্যক, যিনি মানুষের হেদায়াতকারী এবং দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণের সংবাদদাতা” ---শিয়াদের মৌলিক বিশ্বাস
“ইমামগণ আ. হলেন সেই কর্তৃপক্ষ যাদের আনুগত্য করা মহান আল্লাহর আমাদের জন্য বাধ্যতামূলক করেছেন। তাঁদের আদেশ হলো মহান আল্লাহরই আদেশ, তাঁদের (ইমামগণের) নিষেধ হল মহান আল্লাহরই নিষেধ, তাঁদের আনুগত্য আল্লাহরই আনুগত্য, তাদের অবাধ্যতা আল্লাহরই অবাধ্যতা। মূলতঃ তাঁদেরকে অস্বীকার করার মানে হলো রাসূল সা. কে প্রত্যাখান করা। আল্লাহর রাসূলকে প্রত্যাখান করা মানে আল্লাহকে অস্বীকার করাা।” ---শিয়াদের মৌলিক বিশ্বাস
উপরোক্ত ১০ নং দাবীর জবাব ঃ
অর্থাৎ শিয়ারা তাদের ইমামত কে মহান আল্লাহর পবিত্র নবুওয়াতের সমান মর্যাদা দিয়েছেন। কিন' নবুওয়াত ও ইমামত কখনও সমান হতে পারে না। নবুওয়াত ও ইমামত এর মর্যাদার মধ্যে রয়েছে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। ইমামত হল সামান্য বিষয় যা মেনে চলা না চলা সমান। কারন আমাদের কাছ রয়েছে মহাপবিত্র আল-কুরআন, হাদীস তথা রাসূলের আদর্শ, অপরদিকে নবুওয়াতে কেউ বিশ্বাস না করলে সে কাফির বলে পরিগনিত হয় যা কুরআনে অনেকবার উল্লেখিত হয়েছে। ইমামতে বিশ্বাস না করলে কোন মুসলমান কখনো কাফির বলে গণ্য হবে না।
শিয়ারা অবশ্যই খতমে নবুওয়াতে বিশ্বাস করেন। কারণ কুরআনের ভাষা অনুযায়ী খতমে নবুওয়াতে অবিশ্বাসীরা কাফের। কুরআনে আছে ঃ
“মুহাম্মদ তোমাদের পুরুষদের মধ্যে কারো পিতা নন। বরং তিনি হলেন আল্লাহর রাসূল এবং নবীদের ধারাবাহিকতার সমাপ্তকারী ।”---সূরা আল-আহযাব ঃ ৪০
হাদীসে আছে ঃ
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত রাসূল সা. বলেছেন ঃ আমার ও আমার পূর্ববর্তী নবীদের দৃষ্টান- হচ্ছে- এরূপ, এক ব্যক্তি একটি সুন্দর সুরম্য অট্টালিকা নির্মাণ করল। কিন' এক কোণে একটি ইটের জায়গা খালি রেখে দিল। অতঃপর লোকেরা এসে অট্টালিকা ঘুরে ফিরে দেখতে লাগলো এবং তারা বিস্মিত হয়ে বলতে লাগল- ঐ ইটটি কেন লাগানো হয়নি। রাসূল সা. বললেন ঃ আমিই সেই ইট, আমিই সর্বশেষ নবী।
---সহীহ মুসলিম
আবদুল্লাহ ইবনুল আস রা. থেকে বর্ণিত। তিনি নবী সা. হতে বর্ণনা করেন যে, নবী সা. ইরশাদ করেছেন ঃ আল্লাহ তাআলা আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর পূর্বে স্বীয় প্রতিটি সৃষ্টি সম্পর্কে পরিমান ঠিক করে দিয়েছেন এবং লাওহে মাহফুজে (-) এই কথাও লিখে দিয়েছেন যে, মুহাম্মদ সা. খাতামুন্নাবিয়ীন বা শেষ নবী।
---সহীহ মুসলিম
খতমে নবুওয়াতে বিশ্বাসী শিয়ারা কিভাবে বলেন যে, তাদের ইমামত নবুওয়াতের মিশনেরই ধারাবহিকতা? যারা এসব কথা বলেন তারা কি সত্যিই খতমে নবুওয়াতে বিশ্বাসী? কেননা খতমে নবুওয়াতের মাধ্যমে নবুওয়াতের মিশনের ধারাবহিকতা শেষ হয়েছে, পূর্ণ হয়েছে। কিন' শিয়ারা দাবি করেন, ইমামাত নবুওয়াতের মিশনেরই ধারাবাহিকতা। যদি নবুওয়াতের মিশনের ধারাবাহিকতা খতমে নবুওয়াতের মাধ্যমে শেষ হয়ে যায়, তাহলে মানুষের পথ প্রদর্শনের জন্য নবুওয়াতের মিশনের ধারাবাহিকতা হিসেবে ইমামত ভিত্তিহীন, অপ্রয়োজনীয় বিভ্রান-মূলক। আর এ কারনেই শিয়াদের এ দাবি মিথ্যা। যদি তারা ইমামতে বিশ্বাস করেন তাতে দোষের কিছু নেই। কিন' বিদাআত ও অপরাধতো সেটাই যে, ইমামত নবুওয়াতের মিশনেরই ধারাবাহিকাতা-একথা বিশ্বাস করা। কেননা এ কথায় বিশ্বাস করা খতমে নবুওয়াতে বিশ্বাস না করারই নামান-র।
যেহেতু শিয়াদের দাবী ইমামত নবুওয়াতের মিশনের ধারাবাহিকতা, তাই বলা যায় নবুওয়াতের ধারাবাহিকতা শেষ হয়নি-ইমামতের মাধ্যমে তার ধারাবাহিকতা জারি রয়েছে। অর্থাৎ শিয়ারা খতমে নবুওয়াতে বিশ্বাস ও অবিশ্বাসের মাঝে দোদুল্যমান। এখানে বলা যায় শিয়ারা মুসলমান ও কাফেরদের মাঝখানে অবস'ান করছে। কেননা মুসলমানরা খতমে নবুওয়াতে বিশ্বাস করে আর কাদিয়ানীরা যারা খতমে নবুওয়াতে বিশ্বাস করে না বলে কাফের অপরদিকে শিয়ারা মুখে খতমে নবুওয়াতে বিশ্বাস করে, কিন' বাস-বে এমন ইমামতে বিশ্বাস করে যা মূলত খতমে নবুওয়াতের মূলে কুঠারাঘাত করে। এই যুক্তির ভিত্তিতে শিয়াদের স'ান মুসলিম ও কাদিয়ানী কাফেরদের মাঝখানে। তাই শিয়াদের কাফের বলা যায় না আবার মুসলিম বললেও বেমানান মনে হয়।
আর এ অপরাধের দরুন বলা যেতে পারে যে, শিয়ারা খতমে নবুওয়াতে বিশ্বাস করে না। এখান থেকে আরও বলা যায়, কাদিয়ানীরা-যারা খতমে নবওয়াতে বিশ্বাস করে না। তারা বলে কুরআন ৩০ পারা নয় আরও বেশি আর তা তাদের বানানো ভণ্ড নবীর মাধ্যমে নাযিল হয়, এই কাদিয়ানীরা শিয়াদের ইমামাতের ভিত্তিহীন দাবির ধারাবাহিকতা, ইমামতের সৃষ্টি। কারন শিয়ারা ইমামতকে গুরুত্ব দিয়ে পরোক্ষভাবে খতমে নবুওয়াতকে কম গুরুত্ব দেয়, আর কাদিয়ানীরা খতমে নবুওয়াতকে অস্বীকার করে। অর্থাৎ কাফির কাদীয়ানীরা যে শিয়াদের ভিত্তিহীন বিশ্বাস ইমামতের ফলেই সৃষ্টি হয়েছে এতে কোন সন্দেহ নেই। তাই বলা যায় কাদিয়ানীরা শিয়াদের বিভ্রান-ী সৃষ্টিকারী আকিদা ইমামতের শুভ পরিণতি।
“শিয়াদের মৌলিক বিশ্বাস”বইয়ে লেখক আল্লামা মুহাম্মদ রেজা আল-মুজাফফর লিখেছেন ঃ
৪. “প্রত্যেক যুগেই পথ প্রদর্শক ইমাম থাকা আবশ্যক যিনি মানুষের হেদায়াতকারী এবং দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণের সংবাদদাতা হিসেবে রাসূল সা.এর প্রতিনিধিত্ব করবেন।”
১০. “নবী রাসূল প্রেরণ যে কারণে আবশ্যিক, ঠিক একই কারণেই রাসূলের পরে ইমাম নিযুক্ত করাও আবশ্যক।”
উপরোক্ত ৪+১০নং দাবীর জবাব ঃ
আমরা অবগত আছি যে, নবী-রাসূলের প্রেরণের উদ্দেশ্যে বিভ্রান- মানুষকে সঠিক পথের দিশা দেয়া, পথভোলা মানুষকে ইসলামের দিকে আহবান করা। আর এজন্যই আমাদের শেষ নবী সা. এসেছিলেন নবুওয়াতের মিশন নিয়ে এবং মানুষকে পথ দেখিয়ে সঠিক পথের দিশা দেয়ার জন্য। আমাদের নবী সা. পূর্ণাঙ্গভাবে পথ দেখিয়ে দিয়ে গেছেন এবং কুরআন ও তাঁর আদর্শ (হাদীস) আমাদের জন্য রেখে গেছেন-সেখানে মানুষকে পথ দেখানোর জন্য আল্লাহর রাসূল সা.ই যথেষ্ট এবং পথ প্রদর্শক হিসেবে ইমামগণের প্রেরণ ভিত্তিহীন-যা কুরআন হাদিসের মাধ্যমে প্রমানিত এবং খতমে নবুওয়াতের পরিপনি'। হ্যাঁ ইমাম মেহেদী আসবেন বিভিন্ন দল উপদলে বিভক্ত মুসলিমদেরকে একত্রিত করার জন্য, মুসলিম উম্মাহর মধ্যে সোহার্দ্য ও সমপ্রীতি সৃষ্টির মাধ্যমে সকল অন্যায় প্রতিহত করার জন্য।
একজন ইসলামী ব্যক্তিত্ব মানুষকে আল্লাহর দিতে ডেকে ঘূনে ধরা সমাজ ভেঙে ইসলামী বিপ্লবের মাধ্যমে ইসলামী সমাজ বিনির্মাণ করার চেষ্টা করতে পারেন, ইসলামী বিপ্লব কায়েম করতে পারেন। তবে সেই ব্যক্তি নিজেকে নবী প্রেরণের মতই প্রেরিত একজন পথ-প্রদর্শক হিসেবে উপস'াপন করলে তা হবে ভিত্তিহীন-যা মেনে নেয়া যায় না- আর যেটা শিয়াদের ভিত্তিহীন দাবি।
তাদের ইমামগণ হেদায়াত করার জন্য মানুষকে আহ্বান করতে পারেন কিন' নিজেকে আল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত নবীর মত পথ-প্রদর্শক বলে অভিহিত করেন তবে সে দাবি ভিত্তিহীন এবং নবুওয়াতকে ছোট ও অপমান করার নামান-র, গুরুত্ব না দেয়ার প্রয়াস-সন্দেহ নেই।
ইমামত সম্পর্কে বাড়াবাড়ি আরও কিছু কথাবার্তা নিুে বর্ণিত হল ঃ
১১. “যদি কেউ তার যুগের ইমামকে না চিনে মৃত্যুবরণ করে, তবে তার মৃত্যু হবে জাহেলিয়াতের মৃত্যু।”
১২. “ইমামগণ আ.এরও নবী-রাসূলগণের মতই প্রকাশিত ও অপ্রকাশিত সকল প্রকার পাপ-পঙ্কিলতা থেকে মুক্ত থাকা আবশ্যক। অনুরূপ তাঁরা সকল প্রকার ভুল-ত্রুটির উর্ধ্বে, কারণ ইমামগণ আ. হলেন শরীয়াতের রক্ষাকরী ও প্রতিষ্ঠাতা, যেরুপ করেছিলেন নবী সা.। যে কারনে নবী সা. এর পবিত্রতায় বিশ্বাস করা আমাদের জন্য আবশ্যক, ঠিক একই কারণে ইমামগণ আ.এর পবিত্রতায় বিশ্বাস করাও আমাদের জন্য আবশ্যক। এ ব্যাপারে কোন পার্থক্য নেই।”---শিয়াদের মৌলিক বিশ্বাস
“শিয়াদের মৌলিক বিশ্বাস”বইয়ে লেখক আল্লামা মুহাম্মদ রেজা আল-মুজাফফর লিখেছেন ঃ
১৩. ইমামগণেরও মহানবী সা.এর মত বীরত্ব, মহত্ত্ব, আত্ব-সম্মান, সত্যবাদিতা, ন্যায়-পরায়ণতা, বিচক্ষণতা, জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও নৈতিকতা ইত্যাদি পরিপূর্ণ গুনের ক্ষেত্রে সবার শ্রেষ্ঠ। এক্ষেত্রে নবী সা. শ্রেষ্ঠত্বের জন্য যে দলিল প্রযোজ্য, ইমামের শ্রেষ্ঠত্বের জন্যও সেই একই দলিল প্রযোজ্য। ইমাম তাঁর শিক্ষা, ঐশী হুকুম সমূহ এবং সমস- জ্ঞান নবীর মাধ্যমে বা পূর্ববর্তী ইমামগণের মাধ্যমে লাভ করে থাকেন। যদি কোন নতুন প্রশ্নের সৃষ্টি হয়, তবে তিনি তা আল্লাহ প্রদত্ত তার পবিত্র আত্বিক যোগ্যতার কারণে ইলহাম বা স্বপ্নযোগে জানতে পারেন। সুতরাং আমার মনে করি যে, ইমাম এলহাম লাভের সর্বোচ্চ যোগ্যতায় পৌঁছে যান এবং এটা আল্লাহ প্রদত্ত শক্তি। ফলে তাঁর পবিত্র-পরিশুদ্ধ আত্বার মাধ্যমে তিনি যেকোন অবস'ায় যে কোন মুহূর্তে যে কোন বিষয় সম্পর্কে অবহিত হতে পারেন। তিনি যখন কোন বিষয় সম্পর্কে জানতে চান তখন তা তাঁর পবিত্র আত্বার উপর সুস্পষ্টভাবে আপতিত হয়, যেমন আপতিত হয় নির্মল আয়না উপর কোন বস'র প্রতিচ্ছবি। মহানবী সা. এর মত ইমামগণও আশৈশব জীবনের কোন সময়ই কারো নিকট প্রশিক্ষণ লাভ করেন নি, কোন শিক্ষকের শরনাপন্ন হননি, এমনকি লেখাপড়াও করেননি। ইমামদের জীবনে কোন শিক্ষক ছিল না। অথচ তাঁরা হলেন পৃথিবীতে সমস- জ্ঞানের আধার এবং অতুলনীয়। সুতরাং তাদের জীবনে এমন কোন প্রশ্ন আসে নি যার তাৎক্ষনিক জবাব তারা দেন নি। তাঁরা কখনো ‘জানিনা ”কথাটি উচ্চারণ করেননি। এমন কোন প্রশ্ন ছিল না, যার জন্য তারা কালক্ষেপণ করেছিলেন কিংবা চিন-ার আশ্রয় নিয়েছিলেন ।
---৪৩-৪৪,শিয়াদের মৌলিক বিশ্বাস
উপরোক্ত ১৩নং বাড়াবাড়ি দাবীর জবাব ঃ
শিয়ারা তাদের ইমামগণকে আল্লাহর রাসূলের সাথে তুলনা করেছেন-তুলনা করেছেন বললে ভুল হবে। বিভিন্ন গুনাবলীতে ইমামগণকে রাসূলের সমান বলেছেন, সমকক্ষ হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন যা কখনো সম্ভব নয়। এরুপ কথা বলা বা বিশ্বাস করা স্পষ্ট আল্লাহর রাসূল সা. কে অপমান করা, হীন করে দেখার নামান-র এবং যা নবুওয়াতের জন্য মারাত্বক হুমকি তথা ইসলামের জন্য হুমকি। কারণ বিভিন্ন গুনে ইমামগণ কখনেই রাসূল সা. এর সমকক্ষ হতে পারেন না।
প্রথমে নবী সা এর বীরত্বের কথাই বলা যাক। তিনি বদর, ওহুদ, খন্দকের মত বড় বড় যুদ্ধে প্রধান সেনাপতির দায়িত্ব পালন করে বিজয়ী হয়েছিলেন। শেষে মক্কা অভিযানে বের হয়ে কোন রকম রক্তপাত-প্রতিশোধ ছাড়াই মক্কা বিজয় করেন। আজ পর্যন- এমন কোন বীর সেনাপতি খুঁজে পাওয়া অসম্ভব যে কোন রক্তপাত ছাড়াই বিজয় লাভ করেছেন। এছাড়া অনেক অভিযান পরিচালনা করে ইসলামের আলোতে সারা পৃথিবী আলোকিত করেছিলেন। মাত্র ২৩ বছরের অক্লান- পরিশ্রমের বিনিময়ে তিনি সর্বকালের অনুকরনীয় আদর্শ তথা ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করেছিলেন যা আর কোন ব্যক্তির পক্ষে সম্ভব হয়নি। তাই মহানবী সা. কে মহাবীর বলা হয়, যার বীরত্বের সাথে আর কারও তুলনা হয় না।
তাই বীরত্বের ক্ষেত্রে ইমামগণ আল্লাহর রাসূলের মত বা সমকক্ষ কথাটি বানোয়াট, মিথ্যা, অতিরঞ্জিত।
জ্ঞান ও প্রজ্ঞায় নবী সা. ছিলেন সবার শীর্ষে। কারণ তাঁর জ্ঞানের মাধ্যম ছিল আল্লাহর ওহী। যে ওহীর মাধ্যমে রাসূল সা. উদ্ভুত পরিসি'তিকে মোকাবিলা করতেন, সমস্যার সমাধান করতেন। তিনি ইলহামের (অর্থাৎ স্বপ্নযোগে প্রাপ্ত জ্ঞান) মাধ্যমেও জ্ঞান লাভ করতেন। অর্থাৎ মহানবীর সা. এর জ্ঞানের উৎস ছিল ওহী ও ইলহাম কিন' ইমামগণের মাধ্যম ছিল শুধু ইলহাম। তাহলে ইমামগণের জ্ঞান ও প্রজ্ঞা কি করে নবীর সা. এর সমান হতে পারেন অথবা জ্ঞানে নবীর সমকক্ষ হতে পারেন?
তাই ইমামতে বিশ্বাসী শিয়াদের এ বিশ্বাস ভিত্তিহীন। কারণ রাসূল পরিচালিত হয়েছিলেন ওহীর মাধ্যমে আল্লাহর সরাসরি পরিচালনায়। যেমন ঃ
“হে নবী বল, আমাকে অহী পাঠানো হয়েছে।” সূরা জীন ঃ ১
“কোন মানুষই এ মর্যদার অধিকারী নয় যে, আল্লাহ তার সাথে সরাসরি কথা বলবেন। তিনি নবী সা. এর সাথে কথা বলেন হয় ওহীর মাধ্যমে, অথবা পর্দার আড়াল থেকে কিংবা তিনি কোন বার্তাবাহক (ফেরেশতা) পাঠান এবং সে তাঁর হুকুম তিনি যা চান ওহী হিসেবে দেয় । তিনি সুমহান ও বিজ্ঞ। ---সূরা শূরা ঃ ৫১
অর্থাৎ উপরোক্ত আলোচনায় বলতে পারি যে, নবী সা. এর জ্ঞানের উৎস ছিল ওহী, তাঁর কখনো কোন ব্যক্তি তাঁর সমকক্ষ হতে পারে না। এমনকি ধারে কাছেও পৌঁছেতে পারে না। এছাড়া অন্যান্য গুন আত্ব-সম্মান, সত্যবাদীতা, ন্যায়পরায়তা, বিচক্ষণতা, নৈতিকতা ইত্যাদির ক্ষেত্রে বলার অপেক্ষা রাখে না যে, তিনি সবার উর্ধে। এ ব্যাপারে তাঁর অনেক আদর্শ কাহিনী আছে যা প্রায় সবার জানা এবং এখানে যা আলোচনা করার প্রয়োজন মনে করছি না।
তবে ছোটবেলা হতেই নবী সা.কে সকলে আল-আমিন বলে ডাকত। যখন নবী সা. হিজরাত করার জন্য রাতের আধারে বের হয়ে চলে গেলেন কিন' মহান নেতা আমানতের কথা ভুলে যাননি। তিনি সকলের কাছে শত্রু হলেও বিশ্বস' ছিলেন বলে কাফেররা তাঁর কাছে বিভিন্ন জিনিসপত্র আমানত হিসেবে রাখত। হিজরাতের সেই কঠিন মুহূর্তে মহানবী সা. হযরত আলী রা .কে নিজ ঘরের বিছানায় শুইয়ে রেখে আমানত ফেরত দেয়ার অসিয়ত করে গেলেন। কাফেররা রাসূলের ঘর ঘেরাও করলো, রাসূল সা. কে পেলনা, তবে তাদের আমানত ফেরত পেয়ে অভিভূত হয়ে গেল। এরূপ বিপদের মুহূর্তে মৃত্যু আশংকার মধ্যেও রাসূল সা. তাঁর আমানতদারীতা ভুলে যাননি।
ছোট বেলা থেকে নবী সা. ছিলেন অত্যন- সৎ ও বিচক্ষণ। তাঁর নবুওয়াত প্রাপ্তির আগের ঘটনা। সে সময় কাবাঘরের কোন সেবাকে কুরাইশ বংশের লোকেরা অত্যন- মর্যাদাবান মতে করত। একবার “হজরে আসওয়াদ” নামক পাথর কাবাঘরের মধ্যে স'ানান-র নিয়ে কুরাইশ বংশের দুই গোত্র তুমুল সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়ার উপক্রম। তখন তারা তাদের বিচারের ভার মহানবী সা. এর ওপর দিয়ে বলল, ‘‘আমাদের আল-আমিন মুহাম্মদ যে বিচার করবে আমরা তাই মেনে নেব।”
পরের দিন মুহাম্মদ কাবাঘরে সেই বিবাদমান গোত্রকে গোত্রপতিসহ উপসি'ত হতে বললেন। সবাই উপসি'ত হল। সবাই চেয়ে আছে মুহাম্মদ কি ফায়সালা করে দেয়। মুহাম্মদ সা. একটি কাপড় চাইলেন এবং বিবাদের সেই লক্ষ্যবস' “হজরে আসওয়াদ” নামক পাথরটি নিজ হাতে চাদরের উপর রাখলেন। তারপর দুই গোত্রপতি কে ডাকলেন এবং বললেন আপনারা দুইজন এই চাদরের দুই প্রান- ধরে পাথরটি যথাস'ানে স'াপন করুন। গোত্রপতিদ্বয় তাই করল। ফলে তাদের মধ্যকার সম্ভাব্য রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ নিমিষেই শেষ হয়ে গেল, শানি-পূর্ণ মিমাংসা হয়ে গেল। এত অল্প বয়সে এরকম বিচক্ষণতার পরিচয় আর কারো জীবনে দেখা যায় না। তাছাড়া যাকে ওহীর মাধ্যমে জ্ঞান দেয়া হতো তাঁর বিচক্ষণতার সাথে কোন কারও তুলনা হয়?
তাছাড়া আল্লাহ তাকে সরাসরি পরিচালনার মাধ্যমে সকল গুনে গুনাণ্বিত করেছেন। অতএব তাঁর কোন গুণের সাথে কারও গুণের তুলনা হয় না, সমকক্ষ হওয়া তো দুরের কথা। আল্লাহ তাআলা বিভিন্ন সময় তাঁর বক্ষমোবারক বিদীর্ণ করেছেন এবং আল্লাহ তাঁর নিয়ামতে নবীকে পরিপূর্ণ করেছেন। সহীহ আল বুখারীর ৩৩৬ নং হাদিসটিই তা প্রমাণ করে ঃ
আনাস ইবনে মালেক রা. বলেন। আবু যর রা. বর্ণনা করেন, রাসূলল্লাহ সা. বলেছেন ঃ মক্কায় থাকাকালীন এক রাতে আমার ঘরের ছাদ বিদীর্ন করা হল এবং জিবরাইল আ. অবতরন করে আমার বক্ষ বিদীর্ন করলেন। তারপর তা যমযমের পানি দিয়ে ধৌত করলেন। অতঃপর জ্ঞানও ইমানে পরিপূর্ণ একটি স্বর্ণপাত্র এনে আমার বক্ষে ঢেলে দিলেন। তারপর তা বন্ধ করলেন।
তারপর তিনি আমার হাত ধরে আকাশের দিকে নিয়ে গেলেন। যখন আমি নিকটবর্তী আকাশে উপনীত হলাম, তখন জিবরাইল আকাশের দাররক্ষীকে বললেন, দরজা খোল। সে বলল, কে? জিবরাইল বললেন, আমি। সে বললো, আপনার সাথে কেউ আছে কি? তিনি জিবরাইল বললেন, হ্যা! আমার সাথে মুহাম্মদ সা.। সে পুনরায় বললো, তাঁকে কি ডাকা হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তারপর আমি নিকটবর্তী আকাশে আরোহন করে দেখি, সেখানে একজন লোক বসে আছে এবং তার ডান ও বামপাশে অনেকগুলো লোক। সে ডানদিকে তাকালে হাসে এবং বাম দিকে তাকালে কাঁদে। সে লোকটি বললো, খোশ আমদেদ, হে পূণ্যবান নবী! হে পূন্যবান সন-ান! আমি জিবারাইলকে জিজ্ঞাসা করলাম, ইনি কে? তিনি জবাব দিলেন, আদম আ.। ডানে ও বামে এগুলো তাঁর সন-ানের আত্বা। ডানদিকের গুলো জান্নাতি এবং বামদিকের জাহান্নামী। এজন্য তিনি যখন ডানদিকে তাকান হাসেন এবং যখন বামদিকে তাকান কাঁদেন। তারপর তিনি আমাকে নিয়ে দ্বিতীয় আকাশে অরোহন করলেন এবং দাররক্ষীকে বললেন দরজা খোল। দাররক্ষী জীবরাইলকে প্রথম দাররক্ষীর মত জিজ্ঞেস করল এবং তারপর দরজা খুলল।
মতান-রে আনাস রা. বলেন, তিনি (আবু যর ) বলেছেন , নবী বা. আকাশসমূহে আদম, ইদরীস, মূসা, ঈশা, ও ইবরাহীম আ. এর সাথে সাক্ষাত করেছিলেন। কিন' তিনি (আবু যর) তাঁদের নির্দিষ্ট অবস'ানের কাথা বলেন নি। শুধু এতটুকুক বর্ণনা করেছেন, নবী সা. আদমকে নিকটবর্তী আকাশে ও ইবরাহীমকে ষষ্ঠ আকাশে দেখেছিলেন। আনাস বলেন, জিবরাঈল আ. নবী সা. কে নিয়ে ইদরীসের নিকট পোঁছলে তিনি বলেন, খোশ আমদেদ, হে পূণ্যবান নবী! হে পূন্যবান ভ্রাতা! আমি জিবারাইলকে জিজ্ঞাসা করলাম, ইনি কে? তিনি জানালেন, ইদরীস আ.। তারপর মূসা আ.এর নিকট গেলাম। তিনি বলেন, খোশ আমদেদ, হে পূণ্যবান নবী! হে পূন্যবান ভ্রাতা! আমি জিবরাইলকে জিজ্ঞাসা করলাম, ইনি কে? তিনি জানালেন, ইনি মূসা আ.।
তারপর ঈশা আ. এর নিকট গেলাম। তিনি বলেন, খোশ আমদেদ, হে পূণ্যবান নবী! হে পূন্যবান ভ্রাতা! আমি বললাম, ইনি কে? তিনি জানালেন, ইনি মূসা আ.। তারপর ইবরাহীম আ. এর নিকট গেলাম। তিনি বললেন, খোশ আমদেদ, হে পূণ্যবান নবী! হে পূন্যবান সন-ান! আমি প্রশ্ন করলাম, ইনি কে? তিনি বললেন, ইনি ইবরাহীম আ.।
মতান-রে ইবনে আব্বাস ও আবু হাব্বা আনসারী বলতেন, নবী সা. বলেছেন, তারপর আমাকে ঊর্ধে আরোহণ করানো হলো এবং আমি এমন এক সমতল ভূমিতে পোঁছলাম যেখানে কলমের ঘচ ঘচ শব্দ শোনা যেতে লাগল।
মতান-রে আনাস ইবনে মালেক রা. বলেন, নবী সা. বলেছেন, মহামহিম আল্লাহ আপনার উম্মতের ওপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামায ফরয করেছেন। ফেরার সময় আমি মূসা আ. এর নিকট পোঁছলে, তিনি বলেন, আপনার উম্মতের ওপর আল্লাহ কি ফরয করেছেন ? আমি জানালাম, পঞ্চাশওয়াক্ত নামায। তিনি বললেন, আপনার রবের নিকট ফিরে যান। কেনানা আপনার উম্মত এত নামায আদায় করতে সক্ষম হবে না। আমি ফিরে গেলাম। আল্লাহ কিছু অংশ কম করে দিলেন। তারপর আবার মূসা আ. এর নিকট ফিরে এসে বললাম কিছু কম করে দিয়েছেন। তিনি পূনরায় বললেন ,আবার যান। কেননা আপনার উম্মত তা আদায় করতে পারবে না। আমি আবার ফিরে গেলাম। আল্লাহ কিছু মাফ করে দিলেন। আমি আবার তার নিকট ফিরে আসলে তিনি বললেন, আবার যান। কেননা আপনার উম্মত এও আদায় করতে সক্ষম হবে না। আমি আবার ফিরে গেলাম। আল্লাহ বললেন,পাঁচ ওযাক্ত এটিই (আসলে সওয়াবের দিক থেকে) পঞ্চাশ (ওয়াক্তের সমান!)আমার কথার পরিবর্তন হয় না। আমি আবার মূসার নিকট আসলে তিনি আবার বললেন,আবার ফিরে যান। আমি বললাম, আমার যেতে লজ্জা করছে। তারপর আমাকে“সিদরাতুল মুনতাহায়”নিয়ে যাওয়া হলো। তা রঙে ঢাকা ছিল। আমি জানি না তা কি? অবশেষে আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হলো। আমি দেখি সেখানে মুক্তার হার এবং সেখানকার মাটি কস'রী।
---৩৩৬ নং হাদিস, কিতাবুস-সালাত অধ্যায়, সহীহ আল বুখারী ১ম খণ্ড।
এরকম হাজার হাজার হাদিস, কোরআনের আয়াত আছে যা মহানবী সা. এর সৎগুন বর্ণনা করে। অসংখ্য গুনে গুনান্বিত তিনিই আমাদের আদর্শ। তিনি নিষ্পাপ-সকল পাপ থেকে, ভুল-ভ্রানি- থেকে তিনি মুক্ত, তাঁর পবিত্রতা অনেক ঊর্ধে। তাঁর আগে পরের সকল গুনাহ আল্লাহ মাফ করে দিয়েছেন। যেমন হাদিসে আছে ঃ
যিয়াদ ইবনে ইলাকাতুস সা’লাবী রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি মুগীরাকে বলতে শুনেছি, রাতের বেলা নবী সা. এতক্ষণ নামাযে দাঁড়িয়ে থাকতেন যে, তাাঁর পা দুটি অথবা পায়ের নলা দুটি ফুলে যেত। তাঁকে বলা হতো আপনি এত কষ্ট করেন কেন, আল্লাহ তো আপনার অতীতের ও ভবিষ্যতের সকল গোনাহ মাফ করে দিয়েছেন। জবাবে তিনি বলতেন, আমি কি আল্লাহর মোকর গোযার (কৃতজ্ঞ) বান্দাদের একজন হবো না?
---১০৫৯নং হাদিস, কিতাবুত-তাহাজ্জুদ অধ্যায়, সহীহ আল বুখারী ১ম খণ্ড
হযরত আয়েশা রা. থেকে বণিত । তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সা. যখন লোকদেরকে হুকুম দিতেন, তখন এমন কাজের হুকুম দিতেন যা করার সাধ্য তারা রাখত। একবার তাঁরা সাহাবীরা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা তো আপনার মত নই। আল্লাহ তো আপনার আগের ও পরের সব ত্রুটি মাফা করে গিয়েছেন। (কাজেই আপনার চেয়ে বেশী ইবাদাত করা আমাদের কর্তব্য। এতে রাসূলুল্লাহ সা. রেগে গেলেন। এমনকি তাঁর চেহারায় রাগের চিহ্নও দেখা গেল। তারপর তিনি বললেন, “আমিই তো তোমাদের সকলের চেয়ে আল্লাহকে বেশী ভয় করি এবং আল্লাহকে তোমাদের চেয়ে বেশী জানি।
---১৯নং হাদিস, কিতাবুল-ইমান অধ্যায়, সহীহ আল বুখারী ১ম খণ্ড
মহান আল্লাহ বলেন ঃ
“হে নবী, আমি আপনাকে সুষ্পষ্ট বিজয় দান করেছি যাতে আল্লাহ আপনার আগের ও পরের সব ত্রুটি-বিচ্যুতি (গুনাহ) মাফ করে দিয়েছেন, আপনার জন্য তাঁর নিয়ামতকে পূর্ণত্ব দান করেছেন, আপনাকে সরল সহজ পথ দেখিয়ে দেন এবং অত্যন- বলিষ্ঠ ভাবে সাহায্য করেন।” --সূরা আল-ফাতহ ঃ ১-৩
যেহেতু তিনি আমাদের জন্য আদর্শ, আমাদের অনুকরনীয়-অনুসরণীয় তাই তাঁকে সকল পাপ গুনাহ থেকে মক্ত হতে হবে, নিষ্পাপ হতে হবে এবং তিনি তাইও অর্থাৎ তিনি নিষ্পাপ ছিলেন যা কুরআনে উল্লেখিত এবং তাই তিনি সকল গুনে গুনান্বিত। তাঁর সমান, সমকক্ষ কেউ হতে পারে না। যে বলবে (যেমন শিয়ারা বলে তাদের ইমানগণ নবী সা. এর মত নির্ভুল, নিষ্পাপ ও পবিত্র।)তার সমান গুনে গুনান্বিত, তাঁর মত সেই ব্যক্তি মূলত আল্লাহর রাসূলের মর্যাদায় বিশ্বাসী নয়।-তিনি কখনও রাসূলকে মর্যাদা, সম্মান করতে পারে না। আর যদি নবীকে সম্মান দেয়া না হয় সে কখনও মুসলমান থাকতে পারে না। নবী সা. এর সাথে ইমামগণের তুলনা যারা করেছে তারাই ভুল করেছেন, বিভ্রান-ী ছড়িয়েছেন সেই শিয়ারই বিভ্রান-। ইমামগণ তাদেরকে এরুপ করার শিক্ষা দেন নি। এসব মিথ্যা ও অতিরঞ্জিত কথা শিয়া আলেমদের বাননো, মনগড়া ও বানোয়াট-এতে কোন সন্দেহ নেই।
১৪. ইমামগণ আ. হলেন সেই কর্তৃপক্ষ যাদের আনুগত্য করা মহান আল্লাহর আমাদের জন্য বাধ্যতামূলক করেছেন। তাঁরা পৃথিবীর মানুষের নিরাপত্তা বিধায়ক। মহানবী সা. বলেন,
“তাঁদের উপমা, এ উম্মতের জন্য নূহের কিসি-র (নৌকা) মত, যে কেউ এতে আরোহন করল মুক্তি পেল। আর অমান্যকারীরা নিমজ্জিত হল।” অনুরূপভাবে, পবিত্র কুরআনে এ উক্তির প্রতিচ্ছবি দেখতে পাই যে,
“ইমামগণ আ. হলেন, “সম্মানিত বান্দা যার তাঁর অগ্রে কথা বলেন না এবং তাঁরা তাঁর (আল্লাহর) আদেশ উত্তমরূপে সম্পাদন করেন।” ---সূরা আল-আম্বিয়া ঃ ২৭
তাঁদের আদেশ হলো মহান আল্লাহরই আদেশ, তাঁদের (ইমামগণের) নিষেধ হল মহান আল্লাহরই নিষেধ, তাঁদের আনুগত্য আল্লাহরই আনুগত্য, তাদের অবাধ্যতা আল্লাহরই অবাধ্যতা। মূলত ঃ তাঁদেরকে অস্বীকার করার মানে হলো, রাসূল সা. কে প্রত্যাখান করা। আল্লাহর রাসূলকে প্রত্যাখান করা মানে আল্লাহকে অস্বীকার করা।
“শিয়াদের মৌলিক বিশ্বাস”বইয়ে লেখক আল্লামা মুহাম্মদ রেজা আল-মুজাফফর লিখেছেন ঃ
১৫. “যারা ইমামগন আ. কর্তৃক প্রশিক্ষত হয়নি এবং তাঁদের আলোয় যাদের অন-র আলোকিত হয়নি প্রকৃতার্থে তারা ইসলামের সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত ।”
উপরোক্ত ১৪ ও ১৫নং দাবীর জবাব ঃ
উপরোক্ত কথাগুলোর অসারতা ঃ
সহীত মুসলিম দ্বারা প্রমাণিত দ্বীনের মৌলিক বিষয়গুলো (ইসলামী আকিদাগুলো) ঃ ইসলামী আকায়েদ ছয়টি ঃ
১.আল্লাহর সত্তা ও তর গুনাবলীর উপর ইমান
২. ফেরেশতাদের উপর ইমান
৩.নবী-রাসূলের প্রতি বিশ্বাস ( খতমে নব্যুওয়াতের প্রতি ইমানসহ)
৪.আসমানী কিতাবসমূহের ইমান
৫. আখেরাতের উপর ইমান
৬.তকদীরে তথা ভাগ্যের উপর ইমান।
অর্থাৎ এখানে ইমামত অনুপসি'ত এবং ইমামতের স্বপক্ষে কোন হাদীস নেই, কুরআনেও উল্লেখ নেই, সেখানে উপরোক্ত বিষয়ের প্রতি বিশ্বাসের জন্য কুরআনেও বলা হয়নি। সুতরাং ইমামতে বিশ্বাস না করলে ইমান পরিপূর্ণ হয় না-এ কথাটি ভিত্তিহীন, অমূলক।
শিয়াদের দাবী যে, যারা ইমামগন কর্তৃক প্রশিক্ষিত হয়নি বা তাঁদের অন-র ইমামদের আলোয় আলোকিত হয়নি তারা ইসলাম থেকে বিচ্যুত।
এখন আমরা অবগত যে, শিয়ারা ইমামগনের শিক্ষা কে মিথ্যা, অতিরঞ্জিত ও বিকৃতভাবে উপস'াপন করেছে। তাছাড়া আমাদের হেদায়াত লাভের একমাত্র পথ হল কুরআন ও হাদিস। যদি ইমাম অন-র্ধানে থাকেন তবে তার দ্বারা প্রশিক্ষণ বা শিক্ষা না পেয়ে কি আমরা ইসলাম থেকে বিচ্যুত হয়ে যাব? কখনো নয়। কারন অনুসরনের জন্য, প্রশিক্ষণের জন্য এবং ইসলামকে জানা ও মানার জন্য মহাপবিত্র আল-কুরআন, রয়েছে রাসূলের রেখে যাওয়া আদর্শ। সুতরাং রাসূল সা. এর আদর্শই আমাদের একমাত্র অনুসরনীয়, অনুকরনীয় এবং অবশ্য পালনীয়; অন্য কারও আদর্শ নয়। অতএব রাসূল সা. কে অনুসরনের নামে ইমামগনকে অনুসরনের প্রশ্নই ওঠে না। রাসূল সা. কে অবহেলা করে ইমামগনকে অনুসরন তথা তাঁদের আদর্শ অনুসরন কখনও জায়েয নয়। কারন এরুপ করলে মানুষ ধীরে ধীরে নবী সা. কে অনুসরন করা ভুলে যায়। যার ফলশ্রুতিতে মানুষ রাসূল সা. কে ভুলে যায় এবং পরে রাসূল সা.কে বেখেয়ালেই প্রত্যাখান করে চলে। আর রাসূল সা.কে প্রত্যাখান মানে আল্লাহকে প্রত্যাখান। আর আল্লাহকে প্রত্যাখান কুফরের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ঠ্য।
হাদিসে আছে ঃ
“হযরত জাবির রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সা. বলেছেন ঃ সেই মহান সত্তার শপথ যার মুষ্ঠিতে মুহাম্মদের জীবন-প্রাণ। মুসাও যদি তোমাদের সামনে আত্বপ্রকাশ করেন এবং তোমরা তাঁহার অনুসরন কর আর আমাকে পরিত্যাগ কর, তবে তোমরা নিশ্চিত রুপে সঠিক সত্য পথ হতে ভ্রষ্ট হয়ে যাবে।
বাস-বিকই মূসা যদি এখন জীবিত থাকতেন এবং আমার নবুওয়াত পেতেন, তবে তিনিও আমার অনুসরন করতেন।”
উপরে বর্ণিত হাদীসটি শিয়াদের এসব মিথ্যা বিশ্বাসেরই প্রতিবাদ জানায়। হযরত আলী রা. স্বয়ং নিজেই এসব বিভ্রান- ও বাড়াবাড়ি বিশ্বাসের পরিণতি সম্পর্কে বলেছিলেন যা শিয়ারা তাদের বিভিন্ন বইয়ে উল্লেখ করেছেঃ
“আমাকে নিয়ে দুই শ্রেণীর লোক ধ্বংস হয়ে যাবে; এক শ্রেণী হল যারা আমাকে ভালোবেসে অতিরঞ্জিত করবে এবং অপর শ্রেণী হলো যারা আমাকে ঘৃনাভরে অবজ্ঞা করবে।”
---নাহ্জ আল-বালাগা
আমরা জানি অভিশপ্ত খারিজীরা হযরত আলী রা.কে ঘৃনা করত এবং শেষ পর্যন- তারা হযরত আলী রা.কে হত্যা করেছিল। অর্থাৎ “অপর শ্রেণী হলো যারা আমাকে ঘৃনাভরে অবজ্ঞা করবে’’ হল খারিজীরা। আর শিয়ারা হযরত আলী রা. সহ তাঁর বংশের ইমামদেরকে নিয়ে অতিরঞ্জিত কথাবার্তা বলে থাকে। তাই শিয়ারা হযরত আলী রা. এর বর্ণনা করা “এক শ্রেণী হল যারা আমাকে ভালোবেসে অতিরঞ্জিত করবে” এই বাণীর অন-র্ভূক্ত। তাই বলা যায় হযরত আলী রা. এর বাণী অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস' সমপ্রদায় দুটি হল ঃ শিয়া সমপ্রদায় ও মুরতাদ খারিজী সমপ্রদায়।
১৬. আহলে বাইতের প্রতি ভালবাসা সম্পর্কে আমাদের বিশ্বাস ঃ
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন ঃ
‘‘বলুন, আমি তোমাদের নিকট আমার নিকটাত্বীয়দের সৌহার্দ্য ব্যতিত কিছুই চাই না।”
---সূরা শূরা ঃ ২৩
১৭. ইমাম নিয়োগ সম্পর্কে আমাদের বিশ্বাস ঃ
আমরা বিশ্বাস করি যে, নবুওয়াতের মত ইমামতও রাসূূল কিংবা নিযুক্ত কোন ইমামের মাধ্যমে আল্লাহ কর্তৃক মনোনিত হতে হবে। এ দৃষ্টিকোণ থেকে ইমামত নবুওয়াতের মতই। এক্ষেত্রে কোনো প্রভেদ নেই। সুতরাং, যাকে মহান আল্লাহ মানুষের জন্য পথ প্রদর্শক নেতা রূপে প্রেরণ করেছেন তার সমপর্কে বাদানুবাদ করা সমীচীন নয়। অনুরূপ তাকে নির্বাচন, নির্ধারণ বা নিয়োগদানের অধিকার মানুষের নাই। কারণ যে ব্যক্তি পবিত্র সত্তার অধিকারী হবেন এবং মানুষের হেদায়েত ও নেতৃত্বের দায়িত্ব পালনের যোগ্যতার অধিকারী হবেন তাকে কেবলমাত্র, মহান আল্লাহ ব্যতীত কেউই তাদের পরিচয় করিয়ে দিতে পারে না কিংবা নিয়োগ বা অনুমোদন দিতে পারে না।
মহানবী সা. তার উত্তরাধিকারী (১ম খলিফা) ও ইমামের নাম ঘোষণা করেছিলেন। তিনি তার উত্তরাধিকারী হিসেবে তারই চাচাতো ভাই হযরত আলী ইবনে আবী তালিব রা. এর কথা ঘোষণা করেছিলেন। তিনি হলেন মহানবী সা.এর মুমিনদের আমীর (খলিফা) ওহির অভিভাবক এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষদের ইমাম।
মহানবী সা. আলী আ. এর উত্তরাধিকারীর ব্যাপারটি একাধিকবার ঘোষণা করেছিলেন। যেমন বলেছিলেন ঃ “তুমি আমার নিকট সেরুপ, যেরুপ মুসার নিকট হারুন। তবে আমার পরে নবী আসবে না”।
হযরত আলী আ.এর বেলায়েত এর প্রমাণ স্বরূপ হাদীস ব্যতীত একাধিক আয়াতও বিদ্যমান। যেমন পবিত্র কুরআনে সূরা মায়েদার ৫৫ নং আয়াতে বলা হয়েছে
“নিশ্চই তোমাদের ওয়ালী হলেন কেবলমাত্র আল্লাহ তার রাসূল এবং যারা ইমান এনেছে, যাকাত দিয়েছে রুকু অবস'ায়”। ---সূরা মায়েদা ঃ ৫৫
উপরোক্ত আয়াতের সর্বশেষ অংশটুকু নাযিল হয়েছিল ইমাম আলী আ. এর প্রসঙ্গে, যিনি রুকু অবস'ায় তার আংটি ভিক্ষুককে প্রদান করেছিলেন।
১৮. ইমামগণ আ.এর সংখ্যা ঃ
আমরা বিশ্বাস করি, ইমামগণ যাদের সত্যিকার অর্থে ইমামতের বৈশিষ্ট্য রয়েছে এবং যারা মহানবী সা.এর পর আমাদের জন্য শরীয়তের আহকামের উৎসরূপে আল্লাহর পক্ষ থেকে মনোনয়ন লাভ করেছেন। তাঁরা হলেন ১২ জন।
ইমামগণ-
১. আবুল হাসান আলী ইবনে আবী তালিব আল মুর্তাজা (হযরত আলী রা.)
২. আবু মোহাম্মদ আল হাসান ইবনে আলী (হযরত হাসান, রাসূলের বড় নাতি)
৩. আবু আব্দুল্লাহ আল হুসাইন ইবনে আলী (সাইয়েদুস শাহাদাত) (হুসাইন রা. রাসূলের ছোট নাতি)
৪. আবু মুহাম্মদ আলী ইবনীল হুসাইন (জয়নুল আবেদীন হুসাইনের ছেলে)
৫. আবু জাফর মুহাম্মদ ইবনে আলী (ইমাম বাকের, জয়নুল আবেদীন এর ছেলে)
৬. আবু আব্দুল্লাহ জাফর ইবনে মুহাম্মদ আস-সাদিক (ইমাম জাফর সাদিক- ইমাম বাকের এর ছেলে)
৭. আবু ইব্রাহিম মুসা ইবনে জাফর (আর কাসিম )
৮. আবুল হাসান আলী ইবনে মুসা (আর রেজা)
৯. আবু জফর মুহাম্মদ ইবনে আলী (আল জাওয়াদ)
১০. আবুল হাসান আলী ইবনে মুহাম্মদ (আল হাদি)
১১. আবু মুহাম্মদ আল হাসান ইবনে আলী (আল আশকারী)
১২.আবুল কাসেম মোহাম্মদ ইবনীল হাসান। (ইমাম মেহেদী)
শিয়াদের বিভিন্ন বইয়ে লিখিত মনগড়া বিশ্বাসগুলো নিুরুপ ঃ
১.আমরা বিশ্বাস করে যে, ইমাম হচ্ছেন বারোজন। আমরা আরও বিশ্বাস করে যে নবী সা. এর মতই একজন ইমামও নিষ্পাপ ও নিখুঁত। কারন তিনি যদি এরুপ না হন তবে তাঁর কথায় ও কাজের প্রতি বিশ্বাস স'াপন করা সম্ভব নয়। অথবা ইমামের কাজ অন্যদের জন্য উদাহরন বা আদর্শ হিসেবে বিবেচনা করা সম্ভব হবে না।”
----৯৫নং পৃষ্ঠা, শীয়া মাযহাবের মূলসুত্রসমুহ
২.“আমরা বিশ্বাস করি যে, ইমামগনের আ. নবী-রাসূলদের মতই প্রকাশিত অপ্রকাশিত সকল প্রকার পাপ-পঙ্কিলতা থেকে মুক্ত থাকা আবশ্যক। ইমামগন সকল প্রকার ভুল-ত্রুটির ঊর্ধে। যে কারনে নবী সা. এর পবিত্রতায় বিশ্বাস করা আমাদের জন্য আবশ্যক ঠিক একই কারনে ইমামগন আ.এর পবিত্রতায় বিশ্বাস করাও আমাদের জন্য আবশ্যক। এ ব্যাপারে কোন পার্থক্য নেই।”
---৪৩নং পৃষ্ঠা, শিয়াদের মৌলিক বিশ্বাস
৩.“ইমামগন হলেন সেই ব্যক্তিবর্গ যাদের সকল অপবিত্রতা দুর করে মহান আল্লহ তাদেরকে পবিত্রের মত পবিত্র করে দিয়েছেন।”---৪৫নং পৃষ্ঠা, শিয়াদের মৌলিক বিশ্বাস
৪.“আল্লাহ তো চাহেন যে, নবী পরিবার হতে অপরিচ্ছন্নতা দূর করে দিবেন এবং তোমাদেরকে পরিপূর্ণরূপে পবিত্র করে দিবেন। আয়াত আহযাব-৩৩ হযরত মুহাম্মদ সা. সহ হযরত আলী, ফাতেমা, হাসান ও হুসাইনকে উদ্দেশ্য করে অবতীর্ন হয়েছে। এ আয়াতে আহল বাইতের উদ্দেশ্যে হযরত মুহাম্মদ সা. এর বংশধর এই নিষ্পাপ ব্যক্তিবর্গ। নবী সা, এর নিষ্পাপ আহলে বাইত হযরত আলী, হযরত ফাতেমা, হাসান ও হুসাইন ছাড়া আর কেউ নন। তাঁর অন্যান্য আত্বীয় স্বজন ও স্ত্রীবর্গ এ মর্যাদার মধ্যে গন্য নন।”
---৪৫নং পৃষ্ঠা, হযরত মা ফাতিমা আ.
“আহলে বাইত ও ইমামগন নিষ্পাপ , পবিত্র” এর অসারতা“
উপরের বর্ণনা হতে বলা যায়, শিয়াদের মতে নবী সা. এর আহলে বাইত নিষ্পাপ। আর এ আহলে বাইতের মধ্যে রয়েছেন হযরত আলী, হযরত ফাতেমা, হাসান ও হুসাইন । এদের ছাড়া অন্য কেউ এর অন-র্ভূক্ত নন। তার মানে এ আহলে বাইত তথা নবী পরিবারে শিয়াদের বার ইমামের মধ্যে নবী পরিবারে শিয়াদের বার ইমামের মধ্যে রয়েছেন প্রথম তিনজন ইমাম। বাকী ৯ জন ইমাম আহলে বাই্তের মধ্যে গন্য নন। যেহেতু যারা আহলে বাইতের মধ্যে আছেন তারাই নবী সা. এর মত নিষ্পাপ অন্য কেউ নন। তাহলে বাকী ৯ জন ইমাম যারা আহলে বাইতের মধ্যে গন্য নন বলে তারা নিষ্পাপ নন। অথচ তারা তাদের বার ইমামের সবাইকে নিষ্পাপ বলে থাকেন। কেননা নিষ্পাপ হওয়ার শর্ত আহলে বাইতের অন-র্ভূক্তি। তাই উপরোক্ত আলোচনা হতে এ সিদ্ধানে- আসা যায় যে, তাদের কথা বা যুক্তি প্রমাণ করল যে তাদের প্রস-বিত ইামামদের মধ্যে শেষ নয়জন ইমাম নিষ্পাপ নন।
তাই বলা যায় যে, তাদের কথা ও কাজ বিশ্বাস স্ববিরোধী ও বহুরুপী। আর যে বিশ্বাসে স্ববিরোধিতা রয়েছে, বহুরুপীতা রয়েছে তা শুধুই বিভ্রানি-, বানোয়াট ও মিথ্যা ছাড়া অন্য কিছু নয়।
আবার তাদের মতে, কথায়, কাজে বিশ্বাসের ভিত্তি নিষ্পাপ হওয়া। ইমামগনের কথায় ও কাজে-আদর্শে বিশ্বাস করা যায় কারন তারা নিষ্পাপ। এখন কথা হল শিয়াদের আলেমগন, ধর্মীয় নেতাগন মানুষকে ইসলামে অনেক নির্দেশ দেন, বিধানের কথা ব্যাখ্যা করেন, এবং সে অনুসারে সাধারন শিয়াগন তাদের আলেমদের কথা ও কাজে এবং উপদেশের প্রতি বিশ্বাস করে। তাহলে কি তাদের অলেমগন নিষ্পাপ ? যদি নিষ্পাপ না হন (কখনও নিষ্পাপ নন) তবে তাদের কথায় মানুষ উঠাবসা করে কেন?
বার বার পাঠকদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে , শিয়াদের যে বার ইমামের কথা বলে তারা অবশ্যইসম্মানের পাত্র, যথেষ্ট মর্যাদার যোগ্য, তাদেরকে আমরা আমাদের সর্বোজ্জ মর্যাদা দিব। এসব মিথ্যা বিশ্বাসের জন্য সেসব ইমামগন দোষী নন। যারা তাদেরকে ভিত্তি েেদখিয়ে, তাদের ব্যাপারে অতিরঞ্জিত কথা বলে ( যা তারা বলেন নি, করেন নি বা নির্দেশ দেননি) বেড়ায়া তারাই মিথ্যাাবাদী, মহাঅপরাধী। সেই শিয়ারাই বিভ্রান-, পথভ্রষ্ট।
নবী সা. এর মত তাদের আহলে বাইত ও ইমামগন নিষ্পাপ-এবার এ কথটির অসারতা প্রমাণ করব। যেহেতু আমাদের তথা কিয়ামত পর্যন- সকল মানুষের একমাত্র আদর্শ রাসূল সা. তাই তাঁকে তো আল্লাহ নিষ্পাপ থাকার জন্য নিজেই সকল সময় পরিচালনা করেছেন। তাছাড়া নবী সা. নিষ্পাপ ছিলেন সে কথা হাদিসে বা কুরআনে সরাসরিভাবে প্রমাণিত। যেমন হাদিসে আছে ঃ
যিয়াদ ইবনে ইলাকাতুস সা’ লাবী রা. থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন, আমি মুগীরাকে বলতে শুনেছি, রাতেরবেলা নবী সা. এতক্ষণ নামাযে দাঁড়িয়ে থাকতেন যে, তাাঁর পা দুটি অথবা পায়ের নলা দুটি ফুলে যেত। এ তাঁকেবলা হতো আপনি এত কষ্ট করেন কেন , আল্লাহ তো আপনার অতীতের ও ভবিষ্যতের সাকল গোনাহ মাফ করে দিয়েছেন। জবাবে তিনি বলতেন, আমি কি আল্লাহর মোকর গোযার (কৃতজ্ঞ) বান্দাদের একজন হবো না?
---১০৫৯নং হাদিস, কিতাবুত-তাহাজ্জুদ অধ্যায়, সহীহ আল বুখারী ১ম খণ্ড
হযরত আয়েশা রা. থেকে বণিত । তিনি বলেন,রাসুলুল্লাহ সা. যখন লাকদেরকে হুকুম দিতেন, তখন এন কাজের হুকুম দিতেন যা করার সাধ্য তারা রাখত। একবার তাঁরা সাহাবীরা বলরেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা তো আপনার মত নই। আল্লাহ তো আপনার আগের ও পরের সব ত্রটি মাফা করে গিয়েছেন। (কাজেই অঅপনার চেয়ে বেশী ইবাদাত করা আমাদের কর্তব্য। এতে রাসূলুল্লাহ সা. রেগে গেলেন। এমনকি তাঁর চেহারায়া রাগের চিহ্নও দেখা গেল।তারপর তিনি বললেন, “আমিই তো তোাদের সকলে চেয়ে বেশী আল্লাহকে ভয় কারি এবং আল্লাহকে তোমাদের চেয়ে বেশী জানি।
---১৯নং হাদিস, কিতাবুল-ইমান অধ্যায়, সহীহ আল বুখারী ১ম খণ্ড
মহান আল্লাহ বলেন ঃ
“হে নবী, আমি আপনাকে সুষ্পষ্ট বিজয় দান করেছি যাতে আল্লাহ আপনার আগের ও পরের সব ত্রুটি-বিচ্যুতি (গুনাহ) মাফ করে দিয়েছেন, আপনার জন্য তাঁর নিয়ামতকে পূর্ণত্ব দান করেছেন, আপনাকে সরল সহজ পথ দেখিয়ে দেন এবং অত্যন- বলিষ্ঠভাবে সাহায্য করেন।” --সূরা আল-ফাতহ ঃ ১-৩
অর্থাৎ নবী সা. এার আগে-পরোর সকল ত্রুটি-বিচ্যুতি, পাপ-পঙ্কিলতা মাফ করে দিয়েছেন। তাছাড়া যখনই মহানবী সা. কোন সমস্যার সম্মুখীন হতেন তখনই হাকে ওতীর মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হতো । আর এ কারনেই নবী সা. ছিলেন নিষ্পপাপ ,ছিলেন নির্ভুল অপরদিকে শিয়াদের ইমামগনের নিষ্পাপত্বের ব্যাপারে আল্লাহর রাসূল কিছুই বলেন নি। আর তাছাড়া যে আয়াতের ভিত্তিতে (সূরা আল-আহযাব ঃ৩৩) তারা আহলে বাইতকে নিষ্পপ বলেন সেখানে তাদের আগে জরের ভুল-ত্রুটি মাফের কথা বলা হয় নি, বলা হয়েছে পবিত্রতার কথা । আর পবিত্রতাও নিষ্পাপত্ব একই কথা নয়। নিষ্পাপ মানে যার কোন পাপ নেই, পঙ্কিলতা নেই,,কোন ভুল নেই। অপরদিকেপবিত্রতাঅর্জনের মাধ্যমে, সৎগুনে অর্জনের মাধ্যমে পবিত্র হওয়া যায়,মহৎ হওঅয়া যায়। তাদের স্বপক্ষের আয়াতটিাত অপবিত্রতা থেকে পবিত্রতার কথা বলা হয়েছে। আগে-পরেরভুল-ত্রুটি মাফের কথা বলা হয়নি। তাছাড়া এ আঅয়াত দ্বারা নিষ্পাপত্বের বিষয়টি প্রমাণ করা যায় না-যাদি প্রমাণ করা হয়- তবে তা হবে অপব্যাখ্যা-যা শিয়ারা করেছেন।
পবিত্র কুরআনের সূরা আল-আহযাব এর ৩৩ আয়াতের শেষ অংশ “আল্লাহ তো চাহেন যে, নবী পরিবার হতে অপরিচ্ছন্নতা দূর করে দিবেন এবং তোমাদেরকে পরিপূর্ণরূপে পবিত্র করে দিবেন।” এর ব্যাখ্যাঅয় বিভিন্ন তাফসীরে যা লেখা অঅছে সেদিকে একটু দৃষ্টি নিক্ষেপ করলে বুঝা যাবে যে শিয়ারা অপব্যাখ্যাঅয় কতটুকু পটু।
তাফসীরে তাফহীমূল কুরআনে পবিত্র কুরআনের সূরা আল-আহযাব এর ৩৩ আয়াতের শেষ অংশ “আল্লাহ তো চাহেন যে, নবী পরিবার হতে অপরিচ্ছন্নতা দূর করে দিবেন এবং তোমাদেরকে পরিপূর্ণরূপে পবিত্র করে দিবেন।” এর ব্যাখ্যায় লেখা হয়েছে ঃ
অপর একদল আলেম (শিয়া আলেম) আলোচ্য আয়াতের তাফসীরে আরও সাংঘাাতিক রকমের স্বেচ্ছাচারিতা প্রদর্শন করেছেন। তারা নবী সা. এর পবিত্র স্ত্রীগণকে আহলে বাইতের মধ্যে শামিল মনে করেন না এবং কেবলমাত্র হযরত আলী, হযরত ফাতেমা রা. ও তাঁদের সন-ান তথা হাসান ও হুসাইনকেই এর মধ্যে শামিল মনে করেছেন বরং এর উপর এভাবে বাড়াবাড়ি করেছেন যে, “আল্লাহ তো চান যে, তোমাদের থেকে ময়লা দুর করে তেরমাদেরকে পুরোপুরি পবিত্র করে দিতে”কুআনের এ শব্দগুলো থেকে এ সিদ্ধানে- পৌঁচেছেন যে, হযরত আলী, হযরত ফাতেমা ও তাঁদের সন-ান-সন'তি আম্বিয়া আলাইহিমুস সাল্লামগনের (নবী-রাসূলগনের মত)মতই মাসুম তথা গোনাহমুক্ত নিষ্পাপ।
তাদের বক্তব্য হচ্ছে , ময়লা অর্থ ভ্রানি-ও গোনাহ এবং আল্লাহর উক্তি অনুযায়ী আহেলে বাইতকে এগুলো থেকে মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। অথচ আয়াতে অকথ া বলা হয়নি যে, তোরমাদের থেকে ময়লা দুর করে দেয়া হয়েছে, তোমাদের পাকপবিত্র করা হয়েছে, আগে -পরের সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়েছে। বরং বলা হয়েছে , আল্লাহ তোমাদের থেকে ময়লা দুর করতে এবাং তোমাদের পুরোপুরি পাক-পবিত্র করতে চান। পূর্বাপর আলোচনাও এখানে আহলে বাইতের মর্যাদা বর্ণনা করাই উদ্দেশ্য একথা বলে না। বরাং এখানে তো আহলে বাইতকে এ মর্মে নসিহত করা হয়েছে, তোমরা উমুক কাজ করো এবং উমুক কাজ করো না কারন আল্লাহ তো তোমাদের পবিত্র করতে চান।
অন্য কথায় এর অর্থ হচ্ছে, তোমরা অমুক নীতি অবলম্বন করলে পবিত্রতার নিয়ামতে সমুদ্ধ হবে, অন্যাথায় তা লাভ করতে পারবে না । তবু যদি --আরবী--- এর অর্থ এই ধরে নেয়া হয় যে, আল্লাহ তাঁদেরকে নিষ্পাপ করে দিয়েছেন ,তাহলে ওযু , গোসলও তায়াম্মুমকারী প্রত্যেক মসলমানকে নিষ্পাপ বলে মেনে না নেয়ার কোন কারন নেই । কারন তাদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন ঃ
‘হে ঈমানদারগণ! যখন তোমরা নামাযের জন্য তৈরী হও, তখন তোমাদের মুখমণ্ডল ও হাত দুটি কনু্ই পর্যন- ধুয়ে ফেলো, মাথার ওপর হাত বুলাও এবং পা দুটি গেরো পর্যন- ধুয়ে ফেল। যদি তোমরা ‘জানাবাত’ অবস'ায় থাকো, তাহলে গোসল করে পাক সাফ হয়ে যাও। যদি তোমরা রোগগ্রস- হও বা সাফরে থাকো অথবা তোমাদের মধ্যে কোন ব্যক্তি মলমূত্র ত্যাগ করে আসে বা তোমরা নারীদেরকে স্পর্শ করে থাকো এবং পানি না পাও, তাহলে পাক-পবিত্র মাটি দিয়ে কাজ সেরে নাও। তার ওপর হাত রেখে নিজের চেহারা ও হাতের ওপর মাসেহ করে নাও। আল্লাহ তোমাদের জন্য জীবনকে সংকীর্ণ করে দিতে চান না কিন' তিনি চান তোমাদেরকে পাক-পবিত্র করতে এবং তাঁর নিয়ামত তোমাদের ওপর সম্পূর্ণ করে দিতে, হয়তো তোমরা শোকর গুজার হবে।’ ---সূরা আল-মায়েদাহ ঃ ৬”
----------৫০-৫১নং পৃষ্ঠা, ১২শ খণ্ড, তাফহীমূল কুরআন
আয়াতটির ব্যাখ্যায় তাফসীরে ফি-যিলালিল কুরআনে তাফসীরকারক সাইয়েদ কুতুব শহীদ বলেন ঃ
“আল্লাহ তো চাহেন যে, নবী পরিবার হতে অপরিচ্ছন্নতা দূর করে দিবেন এবং তোমাদেরকে পরিপূর্ণরূপে পবিত্র করে দিবেন।”
এ আয়াতটির ব্যাখ্যা করতে গেলে অনেকগুলো মূল্যবান তথ্য পাওয়া যায়; এবং সেগুলোর প্রত্যেকটিই আকর্ষনীয় এক ্লেহ মায়ামমতায় ভরা। আয়াতটির মধ্যে ‘আহলুল বাইত’ (গুহবাসী) শব্দ ব্যবহার করা হােয়ছে। এর মধ্যে কোন ঘর তা বলা হয়নি। কিন' আল-বায়াত শব্দের মধ্যে ‘আল’ নিদিষ্টসূচক অব্যয় ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন ঃ আশ-শামসু , আল-ক্বামারু ও আল কাবা অর্থাৎ এ শব্দগুলো দ্বারা য সব জিনিসকে বুঝায় গেুলোর প্রত্যেকটি নিজ নিজ স'নে একক বোধক, এগুলোর কোন দ্বিতীয় নেই।এগুলোর জন্য ইংরেজীতে যেমন “ঞযব-দি” ব্যবাহার করা হয়েছে, আরবীতে তেমনি সমঅর্থে ব্যবহার করা হয়েছে “ -আল” । সুতরাং বুঝা যাচ্ছে যে, আল বায়ত হচ্ছে সেই একক ও অদ্বিতীয় ঘরবা বাড়ী যার সমকক্ষ ঘর দুনিয়াতে আর নেই। বায়াত+আল্লাহ=বায়তুল্লাহ এবং বায়ত+আল+হারাম=বায়তুল হারামবলে যেমন আল্লাহর মর্যাদাবান ঘর বলে অভিহিত করা হয়েছে , তেমনি আহল+আল+বায়ত=আহলুল বায়ত বলে াএকমাত্র নবীসা. এর ঘরকেসারা পৃথিবীর বুকে মর্যাদাবান কলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে এবং এ মর্যাদাকে অক্ষুন্ন রাখতে আল্লাহ নিজেই মোমেনদের জানাচ্ছেন-
“ অবশ্য তিনি তোমাদের থেকে সকল কলুষ কালিমাকে দু করে দিতেচান এবং তোমাদেরকে সর্বতোভাবে পবিত্র করতে চান।” এখানে বিশেষভাবে বলা হয়েছে যে, তাদের প্রতি আল্লাহক-রাব্বুল আলামীন এর ্লেতের কথা এবং এই ্লেহের কারন বর্ণনা করে বলা হচ্চে , আল্লাহ সোবহানাহু তাআলা তাদের মর্যাদা সম্পর্কে তাদের মধ্যে সচেতনতা আনতে চান, তিনি তাদেরকে পবিত্র বানাতে চান এবং তাদের মমধ্যে থেকে সকল কলুষ কালিমাকে দুর করতে চান। হ্যাঁ তাদেরকে পরিচালনা র জন্য আল্লাহ পাকের সরাসরি মর্যাদাপূর্ণ হস-ক্ষেপ । যখন আমরা চিন-া করি -এ কেরন মহান সত্তা , যিিন এ পবিত্র বাণী উচ্চারণ করেছেন, তখন দেখতে পাই, এ বাণী উচ্চারনকারী হচ্ছেন সেই মহামহিম সম্রাট যিনি গোটা বিেশ্েবর প্রতিপালক, যিানিতাঁর সৃষ্টিকে লক্ষ্য করে বলেন,“হয়ে যাও, ব্যস তেমনি হয়ে যায়।”
এহা সম্মানিত ও মহা মর্যাদাবান আল্লাাহ ,তিনি সবার দারী করেন, হেফাযত করেন,তিনি মহাশক্তিমান,যিনি শক্তি বলেসবইকে নিয়ন্ত্রন করেন----তাঁর এ শব্দগুলো সামনে রেখে যখন আরা চিন- িভাবনাকরি, তখন তাঁরকথার অর্থসমূহ একে একে আমাদের বোধগম্য হতে থাকে ; হৃদয়ের অভ্যন-রে পরম মর্যাদাপূর্ণ আল্লাহ তাআলার পবিত্র অসি'ত্বের কাথা শ্রদ্ধাসহকারে অনুভূত হতে থাকে।
এ মহান অল্লাহর কুরআনের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে কোটি কোটি মানুষ অঅল্লাহ তাআলার আনুগত্য প্রকশ করে চলেছ। এ পাক কালামের আলাচ্য আয়াতগুলোই ঘোষণা দিচ্ছে যে, এ আকর্ষনী বাক্যসমূহ “আল-বায়ত” এর মধ্যে থেকে সকল অআবিলতাকে দূরীভূত করতে চায়, এবং এ ঘরকেস্কল পাপ-পঙ্কিলতা থেকে পবিত্র করার উদ্দেশ্যেই এগুলো অবতীর্ণ হয়েছে ।
এখানে তাত্বহীর” শব্দটি ব্যবহৃদ হয়েছে , যার অর্থ হচ্ছে পবিত্রকরন। আর আল্লাহ তাআলা কর্তৃতক অপবিত্রতা বা কলুষতা দূরীভূত করন দ্বারা সেই সব উপািয় অবলম্বন করা সম্ভব হয় যেগুলোর ফলে মানুষ নিজেদেরকে নিষ্কলুষ বানানোর এরাদা করতে পারে া, অর্থাৎ আল্লাহ যখন নিজেই কাউকেপবিত্র করতে চান, তখন সে লক্ষ্য অর্জনের জন্য যে সব উপায় ও পদ্ধতি অবলম্বন করা প্রয়োজন মহান আল্লাহ পাক সেগুলো তার জন্য সহজ করে দেন । এর ফলে তারা তাদের কার্য কর্মজীবনে সে সব উপায়ও পদ্ধতিকে বাস-বায়িত করে ।এটাই হচ্ছে আল্লাহ তাআলার ইচ্ছা----অন-রের মধ্যে চেতনা ও তাকওয়া সৃষ্টি করা। যার প্রতিফলন ঘটবে ব্যবহার ও কাজের মধ্যে। এভাবেই পরিপূর্ণ ইসলামী জীবন-ব্যবস'া জায়েম হবে এবং জীবনের সর্বক্ষেত্রে এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জিত হবে। নবী সা. এর স্ত্রীদেরকে যেভাবে আল্লহা তাআল গড়তে চেয়েছিলেন তার বিবরণ শেষ হচ্ছে ,রাসূলুল্লাহ সা. এর স্ত্রী হবার কারনে তাঁদর মর্যাদার বিবরণও এখানে শেষ হচ্ছে ; সমাপ্ত হচ্ছে তঁদের প্রতি মহান আল্লাহ তাআলার মেহেরবানীর বিবরণ ।
তারপর মহান রাব্বুল আলামীন তাঁদের ঘরগুলোকে কুরআন ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের কথা নাযিলে হওযার উপযুক্ত স'ানে পরিনত করলেন, এ েঘরগুলোকে আলো, হেদায়াত ও ইমানের উৎস বানালেন। এরশাদ হচ্ছে-“ স্মরণ কর! (হে নবীর স্ত্রীগন ) আল্লাহ তাঅঅলার সেই সব আয়াত এবং জ্ঞানগর্ভ কথাগুলোকে-যা তোমাদের ঘরসমূহে পঠিত হয়ে থাকে। নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা সূক্ষাতিসূক্ষ বিষয় সমূহ সম্পার্কে সম্যক অবগত।” অর্থাৎ , এই মহাগ্রন' আল-কুরআন মহাসৌভগ্যেরা প্রতীক,উপদেশ দেয়ার জন্য এ পাকপবিত্র কালামই যথেষ্ট । এটা এজনা্য যেন মানুষ তার মহান মর্যাদা বুঝাতে পারে । আল্লাহ তাআলার কীর্তিসমূহ অনুভব করে, এবং আল্লাহর ভাণ্ডারে রক্ষিত চির নেয়ামত সমূতের প্রাচুর্য হৃদয়ংগম করতে পারে ,যার সমকক্ষ অন্য কোন নেয়ামত হতে পারে নআ।
আরেকটি মূল্যবান উপদেশের কথা এখানে আসছে, যা নবী সা. এর স্ত্রীদেরকে সম্বোধন করে দেয়া হলেছিল , আর তা হচ্ছে , তারা যেন ক্ষণসস'ায়ী এ দুনিয়ার সুখ সৌন্দর্যও সাজ-সজ্জার কাথে আল্লাহ তাআলারা তাঁর রাসূল এর সন'ষ্টি এবঙ আখেরাতের স'ায়ী জিন্দেগীর তুলনা করে দেকে এবং বুঝতে চেষ্টা করে যে,কোনটা বেশি গ্রহনযোগ্য।এতে করে তারা বুঝতে পারবে যে, আল্লাহ তাআলা তাদেরকে সারা দুনিয়ার নারীকূলের মধ্যে যে মর্যাদা দান করেছেন তা কাত বড় নেয়ামত এবং দুনিয়ার জিন্দেগীর সুখ-সম্পদ সে মহা নেয়ামতের তুলনায় কত তুচ্ছ কত সামান্য।
উপরোক্ত আয়াতটুকুর (আহযাব এর ৩৩ আয়াতের শেষ অংশ) তাফসীরে জানা গেল নবী সা. অর্থাৎ নবী ও রাসূল ছাড়া কোন মানুষ, সাহাবী, তাবেঈ, তাবেঈন ইত্যাদি কেউ নিষ্পাপ হতে পারে না। যদি “আল্লাহ তো চান যে, তোমাদের থেকে ময়লা দুর করে তোমাদেরকে পুরোপুরি পবিত্র করে দিতে” দ্বারা নবী পরিবারোর সকলকে (নবী সা. ছাড়া) নিষ্পাপ বলে প্রমাণ করা যায়, তবে সূরা মুহাম্মদের ২-৩ নং আয়াত অনুযায়ী ইমানদার ব্যক্তি যারা (রাসূল সা. এর সাহাবী) রাসূলের আন্দোলনে যোগ দিয়ে তাঁর প্রতি নাযিল করা কিতাব বিশ্বাস করে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে অংশগ্রহন করে ইসলামী বিপ্লব সাধনের চেষ্টা করেছিলেন সেইসব সাহাবীগণও নিষ্পাপ ছিলেন। যেমন আল্লাহ বলেন ঃ
“যারা ইমান এনেছে নেক আমল করেছে এবং মুহাম্মদের প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে-তা মেনে নিয়েছে- বস'ত তা তো তাদের রবের পক্ষ থেকে নাযিলকৃত অকাট্য সত্য কথা -আল্লাহ তাদের থেকে ময়ালা দুর করে দিয়েছেন এবং তাদের অবস'া শুধরে দিয়েছেন।”
---সূরা মুহাম্মদ ঃ ২-৩ নং আয়াত
কিন' সাহাবীগন নিষ্পাপ ছিলেন না কারন নবী-রাসূল ব্যতিত কেউ নিষ্পাপ হতে পারে না।
অতএব শিয়ার সূরা আহযাােবর ৩৩ নং আয়াতের ভিত্তিতে যে আহলে বাইত ও তাদের নিষ্পাপ হওয়ার ব্যাখ্যা করেছেন, তা নিতান-ই মিথ্যা, বানোয়াট এবং রাসূলের মর্যাদা হানিক র । কেনানা শুধু নবী সা. সহ অন্যান্য নবী-রাসূলগনই একমাত্র নিষ্পাপ ও নির্ভুল ছিলেন। অন্য কেউ নন।আহযাবের ৩২-৩৩ নং আয়াত থেকে জানা গেল শিয়ারা কুরআনের অপব্যাখ্যাকারী, মিথ্যাবাদী। এবং আহলে বাইতের মধ্যে নবীর পবিত্র স্ত্রীগণের সাথে হযরত আলী, হযরত ফাতেমা এবং তাঁদের সন-ান হাসানও হুসাইন রা. অন-র্ভক্ত ।
আরও জানলাম যে, আহলে বাইত ও ইমামগন কখনো নবী সা, এর মত নিষ্পপা নন, নির্ভুল নন।যদি তারা নিষ্পাপ হতো, তাঁদের আগে-পরের সকল গুাহ মাফের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা আয়াত নাযিল করে জানিয়ে দিতেন
যেমন নবী সা. এর নিষ্পাপত্বের ব্যাপারে আয়াত নাযিল হয়েছিল কুরআনের আল-ফাতহ এর ১-৩ নং আয়াত।
ইসলামের সকল ইবাদত ও ভাল আমলের ভিত্তিই হচ্ছে ইমান। যে কোন আমল যতোই নেক বা খাঁটি মানের হোক না কেন তার ভিত্তি যদি ইমান না হয়, তবে সেই খাঁটি বা নেক আমলকারীর চরিত্রে সৎভাব জেগে ওঠে না, সে পরিপূর্ণ সৎব্যক্তি হতে পারে না। কারণ তার সৎ কাজের ভিত্তি ইমান নয়। তাই এ যে আমল কোন মর্যাদার দাবিদার নয়। যদি কারও ইমান থাকে তাকে মুমিন বলে এবং সেই মুমিনের নেক আমলের ভিত্তি ইমান।
আল্লাহ বলেন ঃ
“যে ব্যক্তিই নেক আমল করবে তা সে পুরুষ হোক বা নারী, সে যদি মুমিন হয়, তাহলে তার জন্য আমি পূতপবিত্র জীবন-যাপনের ব্যবস'া করে দেব।”
---সূরা আন-নমল ঃ ৯৭
এখানে পুতপবিত্র জীবন মানে জান্নাতের ব্যবস'া করে দেবো।
এখন ইমান বলতে কি বুঝায় ঃ-
কালেমা তাইয়্যেবা ও কালেমা শাহাদাতের মর্ম অন-র দিয়ে মেনে নিয়ে সে অনুযায়ী আমল করা ও মুখে উচ্চারণ করাকেই ইমান বলা হয় ।
কালেমা তাইয়্যেবা ঃ
--আরবী--
আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ (সকল বিষয়ের সকল সমস্যার সমাধান দাতা) নেই এবং মুহাম্মদ সা. আল্লাহর রাসূল।
ও কালেমা শাহাদাত ঃ
--আরবী--
আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ (সকল বিষয়ের সকল সমস্যার সমাধান দাতা) নেই। আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ সা. তাঁর বান্দা ও রাসূল।
এখানে ইলাহ মানে সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, বিধানদাতা, আইনদাতা, বিপদে উদ্ধারকারী অর্থাৎ সকল বিষয়ে তার বিধান মেনে নেয়া। আমরা মুখে আল্লাহকে সকল বিষয়ের মালিক বলে স্বীকৃতি দেয়, আল্লাহর ও রাসূলের দলে নিজেকে শামিল মনে করি অথচ বাস-বে যে শক্তি সমাজ তথা রাষ্ট্রে আল্লাহর আইন-বিধান চায় না, মানুষের মনগড়া মতবাদ, মানুষের তৈরি আইন-বিধান দিয়ে রাষ্ট্র-সমাজ পরিচালনা করে অথবা চেষ্টা করতে থাকে, সেই শক্তির সাথে হাত মিলিয়ে, সমর্থন দিয়ে আল্লাহর বিরুদ্ধাচরণ করি যা কখনও ইমান বলা যেতে পারে না এবং সেই ব্যক্তি বা দল কে কখনও মুমিন বা মুমিনের দল বলা যেতে পারে না।
অর্থাৎ কালেমা তাইয়্যেবা ও শাহাদাতের উপর ইমান (কথায় ও কাজে আল্লাহকে ইলাহ বলা) আনার পর যে যে বিষয়ের প্রতি ইমান তথা স্বীকৃতি দেয়া জরুরী তাকে বলা হয় ইসলামী আকায়েদ।
ইসলামী আকায়েদ ছয়টি ঃ
১. আল্লাহর সত্তা ও তাঁর গুনাবলীর উপর ইমান
২. ফেরেশতাদের উপর ইমান
৩. নবী-রাসূলের প্রতি বিশ্বাস (খতমে নব্যুওয়াতের প্রতি ইমানসহ)
৪. আসমানী কিতাব সমূহের ইমান
৫. আখেরাতের উপর ইমান
৬. তকদীরে তথা ভাগ্যের উপর ইমান।
উপরোক্ত ছয়টি বিষয়ের মধ্যে পারষ্পারিক এমন গভীর ও গুরুত্বপূর্ন এবং অনিবার্য সম্পর্ক বিদ্যমান যে, এ সবের কোন একটিকে অস্বীকার করলে সবগুলোকেই অস্বীকার করা হয়। ইমানের প্রকৃত অর্থ এই যে, উপরের সবকটি আকীদাকে অন-র দিয়ে মেনে নেয়া এবং সেই অনুযায়ী আমল করা। কেউ যদি এই আকীদাগুলো (আকীদা হলো একবচন আর বহুবচন আকায়েদ) এর মধ্যে কোন একটিকে গুরুত্ব কম দেয় অথবা মেনে নিতে অস্বীকার করে তাহলে তাকে কিছুতেই মুমিন বলা যাবে না।
অথচ শিয়াদের মৌলিক বিশ্বাসগুলো (আকায়েদ) এর মধ্যে ফেরেশতাদের উপর বিশ্বাস, আসমানী কিতাবসমূহের (আসমানী কিতাব মোট ১০৪ খানা, যার বড় আসমানী কিতাব হচ্ছে তাওরাত, যাবুর, ইঞ্জিল, কুরআন এবং ছোটগুলো ১০০ খানা) উপর বিশ্বাস ও তকদীরের উপর বিশ্বাস ইত্যাদি মোট ৩ টি আকায়েদ অনুপসি'ত।
শিয়া লেখক আল্ল্লামা কাশিফুল গীতা রচিত “শীয়া মাজহাবের মুলসূত্র সমূহ”নামক বইয়ের ৯৬-১১৬ নং পৃষ্ঠায় ‘মৌলিক বিশ্বাসের উপাদানসমূহ’ নামক শিরোনামের নিচে তাদের আকীদাগুলো হলোঃ
১. তাওহীদ তথা একত্ববাদ -আল্লাহর সত্তা ও তাঁর গুনাবলীর উপর ইমান
২. নবুওয়াত- নবী-রাসূলের প্রতি বিশ্বাস
৩. ইমামত
৪. আদল বা ন্যায় বিচার
৫. আখেরাত বা পুনরুত্থান দিবস
তাহলে, শিয়াগন তাদের মৌলিক বিশ্বাস থেকে ক.আসমানী কিতাবসমূহের ইমান, খ.ফেরেশতাদের উপর ইমান, গ.তকদীরে তথা ভাগ্যের উপর ইমান ইত্যাদি আকিদাগুলো বাদ দিয়েছেন। মৌলিক বিশ্বাস থেকে এ তিনটি তাদের কাছে গুরুত্বের দাবিদার নয়। যদি তারা এ তিনটি আকায়েদকে গুরুত্ব দিত তবে তাদের আকীদা থেকে কখনো বাদ দিতে পারত না। এ তিনটির মধ্যে আসমানী কিতাবও আছে যার মধ্যে সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানী কিতাব আল-কুরআন অত্যন- গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। শিয়ারা ইমামত নামক ভিত্তিহীন ও বিভ্রান-ী সৃষ্টিকারী আকীদাকে তাদের আকীদায় রাখতে পারল আর তার চেয়ে অধিক গুরুত্বের দাবীদার আসমানী কিতাব তথআ কুরআনকে তাদের আকীদায় রাখতে কষ্ট হয়েছে। যদি শিয়ারা কুরআনকে তাদের মৌলিক আকায়েদ বা বিশ্বাসসমূহ থেকে বাদ দেয়, তাহলে তারা মানব জাতির সকল সমস্যার সমাধান (ঈড়সঢ়ষবঃব পড়ফব ড়ভ যঁসধহ ষরভব) ইসলাম পেল কোথায়?
শিয়া মাজহাবে বাদ পড়ে যাওয়া আকীদাগুলো পারষ্পারিক অনিবার্য সম্পর্কযুক্ত এবং অত্যন- গুরুত্বপূর্ণ ও অবশ্য পালনীয় বিষয়। কেননা যদি ফেরেশতাদের উপর ইমানের প্রতি গুরুত্ব দেয়া না হয়, তবে ওহী বাহক হযরত জিবরাইল আ. এর উপর ইমানে ফাটল ধরে। ফেরেশতা জিবরাইল এর উপর ইমানের ভিত নড়বড়ে হলে তাঁর দ্বারা বাহনকৃত শেষ আসমানী কিতাব অর্থাৎ আমাদের মহাগ্রন' আল কুরআনের উপর ইমান নড়বড়ে হয়ে যায়। কারণ হযরত জিবরাইল আ. ই আল্লাহর রাসূল সা. এর কাছে আল্লাহর পবিত্র বাণী কুরআনের আয়াত নিয়ে হাযির হতেন। আর কুরআনের তথা আসমানী কিতাবের উপর ইমান না থাকলে অথবা দুর্বল হলে অথবা গুরুত্ব কম দিলে তাওহীদ-আল্লাহর সত্তা ও তাঁর গুনাবলীর উপর ইমান ও আখেরাতের উপর ইমান টিকে থাকে না। যদি শিয়াদের এ অবস'া হয়, তবে তাদের ইমানদার বলা যায় কি?
ইসলামী আকাইদ ছয়টি ঃ
১. আল্লাহর সত্তা ও তর গুনাবলীর উপর ইমান
২. ফেরেশতাদের উপর ইমান
৩. নবী-রাসূলের প্রতি ইমান (খতমে নব্যুওয়াতের প্রতি ইমানসহ)
৪. আসমানী কিতাব সমূহের প্রতি ইমান
৫. আখেরাতের উপর ইমান
৬. তকদীর তথা ভাগ্যের উপর ইমান ইত্যাদি আকাইদ থেকে
১. ফেরেশতাদের উপর ইমান
২. আসমানী কিতাবসমূহের ইমান
৩. তকদীরে তথা ভাগ্যের উপর ইমান
ইত্যাদি তিনটি গুরুত্বপূর্ন আকীদা তাদের মৌলিক বিশ্বাস থেকে বাদ দিয়ে আল্লাহর একটি গুরুত্বপূর্ণ হুকুমকে অবহেলা করেছেন। সেজন্য শিয়ারা মহান আল্লাহর কঠিন রোষের মধ্যে পড়েছেন। কেননা আল্লাহ ঘোষণা করছেন ঃ
“তোমরা কখনোই কোন মূল সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত হবে না। যতক্ষণ না তোমরা তাওরাত, ইন্জীল ও তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে নাযিল করা অন্যান্য কিতাবগুলোকে প্রতিষ্ঠিত করবে।” ---সূরা আল-মায়েদা ঃ ৬৮
মহান আল্লাহ আরও ঘোষণা করছেন ঃ
“তোমাদের মুখ পূর্ব দিকে বা পশ্চিম দিকে ফিরাবার মধ্যে কোন পুন্য নেই। বরং সৎকাজ হচ্ছে এই যে, মানুষ আল্লাহ, কিয়ামতের দিন, ফেরেশতা, আল্লাহর অবতীর্ণ কিতাব ও নবীদেরকে মনে প্রাণে মেনে নেবে এবং আল্লাহর প্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজের প্রাণপ্রিয় ধন-সম্পদ, আত্বীয়-স্বজন, এতীম, মিসকীন, মুসাফির, সাহায্যপ্রার্থী ও ক্রীতদাসদের মুক্ত করার জন্য ব্যয় করবে আর নামায কায়েম করবে এবং যাকাত দান করবে। যারা অংগীকার করে তা পূর্ণ করবে এং বিপদে-অনটনে ও হক-বাতিলের সংগ্রামে সবর করবে তারাই সৎ সত্যাশ্রয়ী এবং তারাই মুত্তাকী।”
---সূরা আল-বাকারাহ ঃ ১৭৭
এ ছয়টি বিষয়ের প্রতি ঈমান আনার জন্য স্বয়ং নবী সা. বলেছেন-
“হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন আমরা একদা নবী সা. এর নিকট বসেছিলাম। হঠাৎ এক ব্যক্তি সামনে এসে উপসি'ত হল। তার পোশাক অত্যন- সাদা ও পরিচ্ছন্ন ছিল। মাথার চুল কুচকুচে কালো ছিল এবং দূরদেশ হতে সফর করে আসার কোন চিহ্ন তাঁহার উপর পরিস্ফুট ছিল না। অথচ আমাদের মধ্যে কেউই এই নবাগতকে চিনত না। (ফলে তাঁকে দূর দেশের লোক মনে হল)
এ ব্যক্তি উপবিষ্ট লোকের মধ্যে দিয়ে অগ্রসর হয়ে নবী সা. এর সামনে এসে দুই হাঁটু বিছিয়ে বসলো এবং নিজের দুই হাঁটু নবী করিম সা. এর দুই হাঁটুর সাথে মিলিয়ে দিল ও নিজের দুই হাত নিজের দুই হাঁটুর উপর রাখল। অতঃপর সে বললো, হে মুহম্মদ সা.! বলুন, ইসলাম কাকে বলে? উত্তরে নবী সা. বললেন ঃ ইসলাম (উহার স-ম্ভ) এই যে, (১) তুমি সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ- উপাস্য ও আনুগত্য করার যোগ্য নাই এবং মুহম্মদ সা. তাঁর রাসূল। (২) নামাজ কায়েম করবে (৩) যাকাত আদায় করবে (৪) রমজান মাসের রোজা রাখবে এবং (৫) আল্লাহর ঘরের হজ্জ্ব করার সামর্থ্য থাকলে হজ্জ্ব পালন করবে। এ নবাগত প্রশ্নকারী নবী করিম সা. এর উত্তর শুনে বললেন ঃ আপনি ঠিকই বলেছেন।
এ হাদীসের বর্ণনাকারী ওমর রা. বলেন ঃ এই নবাগত ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করতে ও তার উত্তরকে সত্য ও ঠিক বলে ঘোষণা করতে দেখে আমরা অত্যন- আশ্চর্যান্বিত হলাম। অতঃপর সেই ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করল ঃ এখন বলুন ঈমান কাকে বলে? নবী করিম সা. উত্তরে বললেন ঃ ঈমান হচ্ছে এই যে, তুমি আল্লাহকে, তাঁহার ফেরেশতা, তাঁহার কিতাব, পয়গম্বর ও পরকালকে সত্য বলে বিশ্বাস করবে ও সত্য বলে মানবে এবং প্রত্যেক ভাল-মন্দ সম্পর্কে আল্লাহর নির্ধারণ (তাকদীর) কে সত্য জানবে ও মানবে। এটা শুনে নবাগত লোকটি বললেন ঃ আপনি ঠিকই বলেছেন। এরপর সে নবাগত বললেন ঃ আমাকে বলে দিন ইহসান কাকে বলে? উত্তরে নবী সা. বললেন ঃ ইহসান বলা হয় এমনভাবে আল্লাহর বন্দেগী করাকে, যেন তুমি তাঁকে দেখতে পাচ্ছ-এ কথা মনে জাগরুক রাখা। সেই লোকটি বলল ঃ কিয়ামত কবে হবে আমাকে বলুন। উত্তরে নবী সা. বললেন যার নিকট প্রশ্নটি করা হয়েছে সেই সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রশ্নকারী অপেক্ষা অধিক কিছু জানেন না। সে বলল ঃ আপনি তার নিদর্শনসমূহ বলে দিন। তিনি নবী সা. বললেন ঃ তার একটি নিদর্শন এই যে, দাসী নিজের সম্রাজ্ঞী ও মনিবকে প্রসব করবে। দ্বিতীয় নিদর্শন এই যে, তুমি দেখতে পাবে যাদের পায়ের জুতা ও গায়ে কাপড় নাই, যারা শূন্য হাত ও ছাগলের রাখাল, তারা বড় বড় প্রাসাদ নির্মাণ করছে এবং এ কাজে তারা পরস্পর প্রতিযোগিতা করছে। হযরত ওমর রা. বলেন, এসব বলবার পর নবাগত লোকটি চলে গেল। এরপর আমি বসে থেকে কিছুক্ষণ অতিবাহিত করলাম। তারপর নবী করিম সা. আমাকে সম্বোধন করে বললেন, হে ওমর! এ প্রশ্নকারী ব্যক্তি কে ছিল তা কি তুমি জান? আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভাল জানেন। নবী সা. বললেন ঃ এ নবাগত ছিলেন জিবরাঈল আ.। তিনি তোমাদেরকে দ্বীন ইসলাম শিক্ষা দেয়ার জন্যই তোমাদের এ মজলিসে এসেছিলেন।
---সহীহ মুসলিম।
এটি একটি প্রসিদ্ধ হাদীস। এ হাদীসটি হাদীসে জিবরাঈল নামে খ্যাত।
রাসূলে করিম সা. নির্দেশিত ছয়টি আকীদার মধ্যে শিয়ারা যে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ আকীদা-ফেরেশতা,আসমানী কিতাব ও তাকদীরের প্রতি ঈমান প্রত্যাখ্যান করল, শুধু তাই নয় ,তারা নতুন একটি আকীদা ইমামত যার উপর ঈমান আনার নির্দেশ রাসুল সা. দেননি তার উপর বিশ্বাস শুরু করল। তাদের ইমামতে তারা বার জন ইমামকে অনুসরণ করে।
এখানেই শেষ নয়, তারা বলে ঃ ইমামত নবী রাসূলদের মত খোদায়ী কার্যক্রম। যেমন “শিয়া মাজহাবের মূলসূত্রসমূহ”বইয়ে আল্লামা কাশিফুল গীতা লিখেছেন-
১. “শিয়াদের দৃষ্টিকোণ থেকে ইমামত নব্যুয়াতের (রিসালাতের) মতই একটি খোদায়ী কার্যক্রম। সর্বশক্তিমান আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাঁকে এ দায়িত্বে মনোনীত করেন এবং নবী সা. এর মাধ্যমে তাঁকে এ দায়িত্বে মনোনীত করে থাকেন।”
---১০১-১০২নং পৃষ্ঠা, শিয়া মাজহাবের মূলসূত্রসমূহ
উপরোক্ত ১নং এর আলোচনা ঃ
শিয়াদের বিশ্বাস ইমামত (বারো ইমামে বিশ্বাস) নবুয়াতের মতই খোদায়ী কার্যক্রম। শুধু তাই নয় তারা বলেছেন, প্রত্যেক যুগেই পথ প্রদর্শক ইমাম থাকবেন যিনি মানুষের হেদায়েত কারী এবং দুনিয়া ও আখিরাত এ কল্যাণদাতা হিসেবে মহানবী সা. এর প্রতিনিধিত্ব করবেন। তাদের প্রস-াবিত বারো ইমামের মধ্যে ইমাম আবুল কাসেম মোহাম্মদ ইবনীল হাসান (ইমাম মেহেদী-যাকে সকল মুসলমান ইমাম হিসেবে গ্রহণ করবেন) দুনিয়া থেকে অদৃশ্য হয়েছিলেন ২৫৬ হিজরীতে যা ( ১৪৩১-২৫৬) = ১১৭৫ বছর আগের কথা।
এখন যেহেতু শিয়ারা বিশ্বাস করেন এটি নবুওয়াত বা রিসালতের মত খোদায়ী কার্যক্রম ও প্রত্যেক যুগেই ইমাম পথ প্রদর্শক হিসেবে থাকবেন। সুতরাং তার অন-র্ধানকালীন (ইমাম মেহেদীর) সময়ে শিয়ারা সঠিক পথ পাবে কিভাবে। আর যেহেতু রিসালতের ধারায় মানুষকে পথের দিশা দেওয়ার জন্য নবী এসেছিলেন সেই মহানবী সা. তো কখনো অদৃশ্য হয়ে যান নি। তাহলে আমরা কি ধরে নিতে পারি না যে, ইমাম মেহেদীর অদৃশ্যকালীন সময়ে (তাদের যুক্তিতে) ইমামের সঠিক পথের অভাবে শিয়ারা আজ বিভ্রান- ও ইসলাম নামক শানি- ধর্ম ও মানব জাতির সকল উদ্ভূত পরিসি'তি মোকাবেলাকারী শানি-দাতা ধর্ম থেকে বিচ্যুত?
তাই মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা ঃ “হে আল্লাহ ইমাম মেহেদীর অদৃশ্যকালীন সময়ে পথভ্রষ্ট শিয়ারা প্রলাপ বকছে, ইসলামের ইতিহাস বিকৃত করছে। তাদের প্রস-াবিত ইমামগণকে এতই বেশি ভালবাসে যে, আল্লাহর রাসূল সা.কে বাদ দিয়ে রাসূল সা. চেয়ে অনেক নিচু মর্যাদার ইমামদের কথা বেশি বলছে, আলোচনা, বই পত্রিকায় যে কোনও প্রসঙ্গে আল্লাহর রাসূলের আদর্শের কথা না বলে ইমামগনের আদর্শ তুলে ধরছে-যা মুসলিম উম্মাহর জন্য চরম হুমকি স্বরূপ। আর এরকম আচরণ রাসূল সা.কে বাদ দিয়ে তাদের প্রস-াবিত ইমামকে বেশি গুরুত্ব দেয়ার নামান-র। তাই তুমি ইমাম মেহেদীকে পৃথিবীতে পাঠিয়ে শিয়াদের বিভ্রান-ী দূর করে তোমার কুরআনকে রক্ষা কর যে ওয়াদা তুমি করেছ। রাসূলের হাদীসকে তথা সুন্নাতকে সংরক্ষণ কর, ইসলামের ইতিহাসকে বিকৃতির হাত থেকে রক্ষা কর।
আবার ইমামত নবুওয়াত তথা রিসালতের মতই খোদায়ী কার্যক্রম হলে আল্লাহ কেন ইমামতের স্বপক্ষে প্রত্যক্ষভাবে আয়াত নাজিল করেন নি। তাছাড়া ইমামত খোদায়ী কার্যক্রম হলে ইমামতে বিশ্বাসের ব্যাপারে আল্লাহর রাসূল সা. এর অনেক হাদীস পাওয়া যেত। কিন' এরকম কোনও হাদীস নেই। যেরকম হাদীস ইসলামের আকীদার ৬টি বিষয়ের ব্যাপারে আছে হযরত ওমর ফারুক রা. এর বর্ণিত মুসলিম শরীফে।
“শিয়া মাজহাবের মূলসূত্রসমূহ”বইয়ে আল্লামা কাশিফুল গীতা আরও লিখেছেন ঃ
২. “শিয়ারা বিশ্বাস করে সর্বশক্তিমান আল্লাহ মহানবী সা. কে নির্দেশ প্রদান করেছিলেন জনগণের কাছে ইমাম আলী (চতুর্থ খলিফা) কে তাঁর উত্তরাধিকারী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য। যেভাবেই হোক মহানবী (সাঃ) এও জানতেন যে, একদলের কাছে তাঁর এ ঘোষণা মেনে নেয়া কঠিন হবে।”
৩. “কেননা ইমাম আলী আ. (হযরত আলী রা. কে শিয়ারা তাদের প্রথম ইমাম বলে থাকে এবং নবীদের চাইতে অধিক মর্যাদার মনে করে তাদের ইমামদের নামের শেষে আলাইহি ওয়াসাল্লাম-আ. শব্দটি যুক্ত করে) এর মাসুম (নিষ্পাপ) হওয়ার ব্যাপারে সবার জ্ঞান একস-রের ছিল না। অনেকে এটা ভাবতে পারেন যে, মহানবী সা.এর এ ঘোষণা ইমাম আলীর সাথে তাঁদের পারস্পরিক সম্পর্ক ও জামাই হওয়ার কারণে তাঁর ব্যক্তিগত ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ ছিল। তবুও সর্বশক্তিমান আল্লাহ পছন্দ করেননি যে, এই অযুহাতে মহানবী সা. এ বাস-ব ঘোষণা থেকে বিরত থাকবেন। তাই আল্লাহ নিম্নোক্ত আয়াতে স্পষ্টভাবে ঘোষণা করে দিলেন যে, ইমাম আলীর উত্তরাধিকার (খিলাফাতের অধিকার) অবশ্যই জনগণের কাছে তুলে ধরা হোকঃ
“হে রাসূল! যা কিছু আপনার প্রতিপালকের তরফ হতে আপনার প্রতি নাযিল করা হয়েছে আপনি (মানুষকে) তা বলে দিন; আর যদি তা না করেন, তাহলে আপনি যেন আল্লাহর একটি বাণীও পৌঁছান নাই। আর আল্লাহ তা’য়ালা আপনাকে মানুষের ভয় থেকে সংরক্ষিত রাখবেন।”(সূরা মায়েদা-৬৭)
৪. “রাসূলের উপর যখন আল্লাহর গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা নাযিল হয়, তখন জনগণের কাছে আল্লাহর আদেশ পৌঁছে দেয়া ছাড়া রাসূল .সা এর আর কোন উপায় ছিল না। সুতরাং বিদায় হজ্জ্ব থেকে ফেরার পথে ‘গাদীর-ই-খুম’ নামক স'ানে তিনি এক ভাষণ প্রদান করেন। সমবেত জনতাকে উচ্চস্বরে বললেন, “আমি তোমাদের উপর তোমাদের নিজেদের অপেক্ষা কি বেশি অধিকার রাখিনা?(অর্থাৎ আমি কি তোমাদের উপর কর্তৃত্বশীল এবং অভিভাবক নই?)তারা বলল, “হ্যাঁ, অবশ্যই আপনি তাই।” তারপর তিনি ঘোষণা করলেন, “যে আমাকে তার নেতা ও অভিভাবক মনে করে, সে যেন আলীকে ও তার নেতা ও অভিভাবক মনে করে।”
৫. “রাসূল সা. এর ওফাতের পর মুসলমানদের মধ্যে কিছু বয়স্ক লোক তাদের নিজেদের মত এ হাদীসের ব্যাখ্যা করেছিলেন “ইসলামের স্বার্থের প্রতি দৃষ্টি রেখে।” তারা কিছু লোকের উপর অন্য কিছু লোকের প্রাধান্য দিয়েছিল এবং বলেছিল প্রতিটি অবস'া ও প্রতিটি ঘটনার নিজস্ব ব্যাখ্যা রয়েছে।”
৬. বইটির পাদটীকায় ব্যাখ্যা করা হয়েছেঃ-
“ইসলাম ও মুসলমানদের স্বার্থ সংরক্ষণের অযুহাতে তারা (আবু বকর, ওমর ফারুক, ওসমানসহ অনেক সাহাবী) উত্তরাধিকার সম্পর্কে রাসূল সা.এর আদেশ (অর্থাৎ রাসূলের পরই তাঁর উত্তরাধিকারী বা ১ম খলিফা হিসেবে আলীকে নির্বাচনের নির্দেশ) প্রত্যাখান করেছিলেন।”
---১০১-১০২ পৃষ্ঠা, শিয়া মাজহাবের মূলসূত্রসমূহ
উপরোক্ত ২-৬নং আপত্তির জবাব ঃ
শিয়াদের মনগড়া উপরোক্ত আলোচনায় যা বুঝা গেল যে, মহানবী সা.কে আল্লাহ আয়াত নাজিল করে হযরত আলী রা. কে নবী সা. এর উত্তরাধিকারী অর্থাৎ ১ম খলিফা হিসেবে জনগণের সামনে পরিচয় করানোর জন্য বলেছিলেন। সেজন্য আল্লাহ বিদায় হজ্জে সূরা মায়েদার ৬৭ নং আয়াত নাজিল করলেন যেন রাসূল সা. এর ওফাতের পর আলীই প্রথম খলিফা হয় এবং পরবর্র্র্র্র্র্র্তী খিলাফতের অধিকার আলী রা. এর বংশের মধ্যেই সংরক্ষিত থাকে।
শুধু তাই না উপরোক্ত অংশে শিয়ারা বলতে চেয়েছে ঃ আল্লাহর রাসূল সা.তার চাচাত ভাই হযরত আলী রা. কে ১ম খলিফা হিসেবে নির্বাচিত করার জন্য সাহাবীদের বলেছিলেন। কিন' হযরত আবু বকর রা. (১ম খলিফা) হযরত ওমর রা.(২য় খলিফা) হযরত ওসমান রা.(৩য় খলিফা) সহ আরও সাহাবীগণ রাসূলের আদেশ প্রত্যাক্ষান করেছিলেন এবং আলীর অধিকার ছিনিয়ে নিয়ে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছিলেন। (নাউজুবিল্লাহ) (এ ব্যাপারে অনেক কথাবার্তা-আলোচনা পড়ে আসবে)
শিয়াদের দাবি আলীর প্রথম খলিফা হওয়ার ব্যাপারে রাসূল সা.এর প্রতি নাজিল হয় সূরা মায়েদার ৬৭ নং আয়াত। কিন' আয়াতটি মূলত নাযিল হয়েছিল রাসূল সা.কে রিসালাতের মত মহান দায়িত্বের গুরুত্ব বোঝানোর জন্য এবং তা যথাযথভাবে পালন করতে হবে-তা স্মরণ করিয়ে দেবার জন্য এবং এ মহান দায়িত্ব পালনের সময় মহান আল্লাহ তাঁর রাসূলের সংরক্ষণের ব্যবস'া করবেন। আর উপরোক্ত আয়াতের বিষয়বস'ও মূলত এটাই। অর্থাৎ উপরোক্ত আয়াতে প্রদত্ত শিয়াদের ব্যাখ্যা যে অসারতা পূর্ণ অপব্যাখ্যা তা আমরা দেখতে পাব আয়াতটির ব্যাখ্যায় কয়েকজন বিখ্যাত তাফসীরকারকের আলোচনায়।
আয়াতটির ব্যাখ্যায় হাফেজ ইমাজউদ্দিন ইবনে কাসীর রহ. তার “তাফসীর ইবনে কাসীর” এ লিখেছেন ঃ
মহান আল্লাহ এখানে স্বীয় নবী সা. কে রাসূল এ প্রিয় শব্দ দারা সম্বোধন করে বলেছেন, তুমি মানুষের কাছে আমার সমস- আহকাম পৌছিয়ে দাও। রাসূলুল্লাহ সা.ও তাই করলেন। সহীহ বুখারীতে রয়েছে, হযরত আয়েশা রা. বলেন, “যে ব্যক্তি আমাকে বলে যে, মুহাম্মদ সা. তাঁর উপর নাজিলকৃত কোনকিছু গোপন করেছেন, সে মিথ্যা বলছে”। এখানে হাদীসটি সংক্ষিপ্তভাবে আছে।
সহীহ বুখারী ও মুসলিম এ হযরত আয়েশা রা. থেকেই বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন ঃ যদি মুহাম্মদ সা. কুরআনের কোনও অংশ গোপন করতেন তবে তিনি অবশ্যই ............................... অর্থাৎ
এ আয়াতটি গোপন করতেন।
ইবনে আবী হাতিম রা. বর্ণনা করেছেন যে, একজন লোক হযরত ইবনে আব্বাস রা. কে বলে ঃ লোকদের মধ্যে আলোচনা চলছে যে, আপনাদের রাসূলুল্লাহ সা. এমন কতগুলো কথা বলেছেন যা তিনি অন্য লোকদের নিকট প্রকাশ করেন নি। তখন তিনি এ আয়াতটি শপথ করে বলেন ঃ “আল্লাহর শপথ! রাসূলুল্লাহ সা. আমাদেরকে এরূপ কোন বিশিষ্ট জিনিসের উত্তরাধিকারী করেননি”। এই হাদীসের ইসনাদ খুবই উত্তম।
সহীহ বুখারীতে রয়েছে যে, একজন লোক হযরত আলী রা. কে জিজ্ঞেস করলেন ঃ “আপনাদের কাছে কী কুরআন ছাড়া অন্য ওহি আছে?” আলী রা. উত্তরে বললেন ঃ “যে আল্লাহ শস্য উৎপন্ন করেছেন এবং জীব জন' সৃষ্টি করেছেন তার শপথ! না, শুধু এ বুদ্ধি ও বিবেক, যা তিনি কোনও লোককে কুরআনের ব্যাপারে দিয়েছেন এবং যা কিছু এ সহিফায় রয়েছে (এছাড়া আর কিছুই নাই)। ” লোকটি আবার জিজ্ঞেস করলেন ঃ “সহিফায় কী রয়েছে?” উত্তরে আলী রা. বললেন ঃ “এর মধ্যে দিয়াতের মাসয়ালা ও বন্দীদের কে ছেড়ে দেওয়ার আহকাম রয়েছে এবং এ বিধান রয়েছে যে, কাফির কে হত্যা করার কারনে কিসাস হিসেবে কোনও মুসলমানকে হত্যা করা হবে না।”
সহীহ আল বুখারীতে যুহরি রা.এর উক্তি রয়েছে। তিনি বলেন, “আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে হচ্ছে রিসালাত, রাসূলুল্লাহ সা. এর দায়িত্ব হচ্ছে প্রচার করা এবং আমাদের কর্তব্য হচ্ছে মেনে নেওয়া।” রাসূলুল্লাহ সা. আল্লাহর সমস- কথা পৌঁছিয়ে দিয়েছেন। তার সমস- উম্মতই এর সাক্ষী। প্রকৃতপক্ষে তিনি আমানত পূর্ণভাবে আদায় করেছেন এবং সেটা সবচেয়ে বড় সম্মেলনের দিন সবাই স্বীকার করে নিয়েছেন। অর্থাৎ হুজ্জাতুল বিদা বা বিদায় হজ্জের খুতবায় সকল সাহাবী এ কথা স্বীকার করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ সা.তাঁর দায়িত্ব পূর্ণভাবে পালন করেছেন এবং আল্লাহর বাণী সকলের কাছে পৌছিয়ে দিয়েছেন।
সহীহ মুসলিমে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ সা. তার এ ভাষণে জনগণকে সম্বোধন করে বলেছিলেন ঃ “তোমরা আল্লাহর কাছে আমার ব্যপারে জিজ্ঞাসিত হবে। তাহলে বলত তোমরা কী উত্তর দিবে?” সবাই (সকল সাহাবী) সমস্বরে বললেন ঃ “আমরা সাক্ষ্য দান করছি যে, আপনি প্রচার করেছেন, রিসালতের হক পুরোপুরী আদায় করেছেন এবং পূর্ণভাবে আমাদের মঙ্গল কামনা করেছেন।” তিনি তখন স্বীয় হস- ও মস-ক আকাশের দিকে উত্তোলন করে জনগণের দিকে ঝুকিয়ে দিয়ে বললেন ঃ “হে আল্লাহ, আমি কী পৌঁছিয়ে দিয়েছি, হে আল্লাহ আমি কী পৌঁছিয়ে দিয়েছি?”
মুসনাদে আহমাদে এটাও রয়েছে যে, রাসূল সা. এ ভাষণে জনগণকে জিজ্ঞেস করেছিলেন ঃ “হে লোক সকল! এটা কোন দিন?” সবাই উত্তরে বললেন ঃ “মর্যাদাসম্পন্ন দিন।” নবী সা. আবার প্রশ্ন করলেন ঃ‘‘এটা কোন শহর?’’ সবাই জবাবে বললেন ঃ “সম্মানিত শহর।” পূনরায় রাসূল সা. জিজ্ঞেস করলেন ঃ “এটা কোন মাস?” সবাই বললেন ঃ “মর্যাদাসম্পন্ন মাস।” তখন নবী সা. বললেন ঃ ‘‘তোমাদের মাল, তোমদের রক্ত এবং তোমাদের ইজ্জত ও আবরু একে অপরের কাছে এ রকমই মর্যাদায় রয়েছে যেমন এ দিনের, এ শহরের এবং মাসের সম্মান ও মর্যাদা রয়েছে।” বার বার তিনি এর পূনারাবৃত্তি করলেন। তারপর তিনি স্বীয় আঙ্গুলি আকাশের দিকে উঠিয়ে বললেন ঃ “হে আল্লাহ! আমি কী পৌঁছিয়ে দিয়েছি?”
হযরত ইবনে আব্বাস রা. বলেন ঃ “আল্লাহর শপথ! এটা তাঁর প্রভুর পক্ষ থেকে তাঁর প্রতি অসিয়ত ছিল।”অতঃপর রাসূল সা. বললেন ঃ‘‘দেখো! তোমাদের প্রত্যেক উপসি'ত ব্যক্তি যেন প্রত্যেক অনুপসি'ত ব্যক্তির নিকট এটা পৌঁছিয়ে দেয়। দেখো! তোমরা আমার পরে যেন কাফের হয়ে যেয় না এবং একে অপরকে হত্যা করো না। ” ইমাম বুখারীও এটা বর্ণনা করেছেন।
অতঃপর ইরশাদ হচ্ছে ঃ “হে নবী! তুমি যদি আমার হুকুম আমার বান্দা পর্যন- পৌঁছিয়ে না দাও, তবে তুমি রিসালাতের হক আদায় করলে না। তারপর এর যা শাসি- তা তো স্পষ্ট। যদি তুমি একটি আয়াতও গোপন করো তবে তুমি রিসালাত ভেঙে দিলে।” হযরত মুজাহিদ রা. বলেন যে, যখন ‘যা কিছু অবতীর্ণ হয়েছে তা পৌঁছিয়ে দাও’ এর হুকুম নাযিল হয় তখন রাসূলুল্লাহ সা. বলেন ঃ “আমি তো একা, আর এইসব কিছু মিলে আমার উপর ভারী হয়ে যাচ্ছে। সুতরাং আমি কিভাবে এটা পালন করতে পারি?” তখন এ দ্বিতীয় বাক্যটি অবতীর্ণ হয় ঃ “তুমি যদি এটা পালন না করো, তবে তুমি রিসালাতের দাায়িত্বই পালন করলে না।”
তারপর আল্লাহ পাক বলেন ঃ “তোমাকে লোকদের থেকে রক্ষা করার দায়িত্ব আমার; তোমার রক্ষক ও সাহায্যকারী আমি। তুমি নির্ভয়ে থাক, কেউই তোমার কোন ক্ষতি করতে পারবে না।”
এ আয়াত নাযিল হওয়ার পূর্বে নবী সা. নিজের প্রহরী রাখতেন। সাহাবীগণ নবী সা. কে রক্ষার কাজে নিযুক্ত থাকতেন। আয়েশা রা .বলেন ঃ একদা রাতে রাসূল সা. জেগেই ছিলেন। তাঁর ঘুম হচ্ছিল না। আমি জিজ্ঞেস করলাম, “হে আল্লাহর রাসূল! ব্যাপার কি?” তিনি উত্তরে বললেন ঃ “যদি আজ রাত্রে আমার কোন হৃদয়বান সাহাবী আমাকে পাহারা দিতো!” তিনি একথা বলতে না বলতেই, হটাৎ আমার কানে অস্ত্রের শব্দ আসলো। নবীজী জিজ্ঞেস করলেন ঃ “কে?” উত্তর আসলো ‘‘সাদ ইবনে মালিক রা.।”রাসূল সা. জিজ্ঞেস করলেন ঃ “কেন আসলে?” তিনি উত্তরে বললেন ঃ “হে আল্লাহর রাসূল! আপনাকে পাহারা দেয়ার জন্য এসেছি।”
এরপর নবীজী সা. নিশ্চিনে- ঘুমিয়ে পড়লেন। এমনকি আমি তাঁর নাক ডাকার শব্দ শুনতে পেলাম। (সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম)
একটি রিওয়ায়েতে আছে যে, এটা ২য় হিজরীর ঘটনা। এই আয়াতটি নাজিল হওয়া মাত্রই রাসূলুল্লাহ সা. তাবু হতে মাথা বের করে দিয়ে প্রহরীদের বললেন ঃ “তোমরা চলে যাও, আমি আমার প্রভুর আশ্রয়ে এসে গেছি। সুতরাং এখন তোমাদের পাহারা দেওয়ার কোনই প্রয়োজন নাই।” আর একটি বর্ণনায় আছে যে, আবু তালিব সদা রাসূলুল্লাহ সা.এর সাথে কোনও না কোনও লোক রাখতেন, যখন এ আয়াত নাজিল হল তখন তিনি চাচা আবু তালিব কে বললেন ঃ “চাচাজান এখন আর আমার সাথে কোনও লোক পাঠাবার প্রয়োজন নাই। আমি মহান আল্লাহর রক্ষণাবেক্ষণে এসে গেছি।”
কিন' এ রেওয়াতটি গরীব ও মুনকার। এটাতো মক্কার ঘটনা, এ আয়াতটি মদীনায় অবতীর্ণ হয়েছিল।
এতে কোনও সন্দেহ নাই, মহান আল্লাহ তাআলা মক্কাতেই স্বীয় রাসূল সা.কে পূর্ণভাবে রক্ষণা-বেক্ষণ করেছেন। চতুর্দিকে অস্ত্রশস্ত্র সজ্জিত শত্রু দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকা সত্ত্বেও মক্কার নেতৃস'ানীয় লোকেরা রাসূল সা.এর চুল পরিমাণ ক্ষতি করতে স্বক্ষম হয় নাই। রিসালাতের প্রথম ভাগে তার চাচা আবু তালিবের মাধ্যমে তার রক্ষণা বেক্ষণ হতে থাকে । কেননা আবু তালিব ছিলেন কুরাইশদের প্রভাবশালী নেতা। আল্লাহ তার অন-রে স্বীয় রাসূল সা.এর প্রতি ভালোবাসা স'াপন করেছিলেন। এ ভালোবাসা ছিল প্রকৃতিগত স্বাভাবিক ভালোবাসা, শরিয়তগত ভালোবাসা (মুসলিম হয়ে ওপর মুসলিমের প্রতি ভালোবাসা) নয়। আবু তালিবের এ ভালোবাসা যদি শরিয়তগত ভাবে হত, তবে কুরাইশরা রাসূলুল্লাহ সা.এর সাথে তার চাচাকেও হত্যা করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হতো।
আবু তালিবের মৃত্যুর পর আল্লাহ তাআলা মদীনার আনসারদের অন-রে রাসূল সা.এর প্রতি শরীয়তগত মুহব্বত পয়দা করে দেন এবং নবী সা. তাদের কাছেই চলে যান। তখন মুশরিক ও ইহুদীরা অত্যন- উত্তেজিত হয়ে উঠে ও ভারী ভারী অস্ত্রে সজ্জিত সেনাবাহিনী নিয়ে নবী সা.এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার মানসে দ্রুত এগিয়ে আসে। কিন' বারবার অকৃতকার্য হওয়ার ফলে তাদের আশায় গুড়ে বালি পড়ে যায়।
অনুরূপভাবে তাদের গোপন ষড়যন্ত্রও আল্লাহর ফজল ও করমে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। একদিকে তারা নবী সা.এর উপর জাদু করে, অপরদিকে সূরা “আল খালাক” নাজিল হয় এবং জাদু ক্রিয়া নষ্ট করে দেওয়া হয়। একদিকে তারা শত চেষ্টা করেও ছাগীর গোশতে বিষ মিশিয়ে রাসূলুল্লাহ সা.কে দাওয়াত করে তার সামনে পেশ করে, অন্যদিকে আল্লাহ পাক স্বীয় নবী সা. কে ওই ব্যাপারে সতর্ক করে দেন এবং তারা বিফল মনোরথ হয়। এ ধরনের আরো বহু ঘটনা তার জীবনে পরিলক্ষিত হয়।
তাফসীর ইবনে কাসীর এও রয়েছে যে, এক সফরে রসুল সা. একটি ছায়াদার বৃক্ষের নীচে দুপুরে ঘুমিয়ে ছিলেন। এরূপ ছায়াদার বৃক্ষ অভ্যাসগতভাবে প্রতি মঞ্জিলে সাহাবীগণ খুঁজে খুঁজে নবী সা. এর জন্য নির্দিষ্ট করে রাখতেন। হঠাৎ এক বেদুইন সেখানে এসে যায়। বৃক্ষের শাখায় ঝুলন- নবী সা.এর তরবারী খানা নামিয়ে বেদুইন তা খাপ থেকে বের করল এবং বলল ঃ “বলত এখন তোমাকে কে রক্ষা করবে?” রাসূল সা.বললেন ঃ “আল্লাহ আমাকে রক্ষা করবেন।” তখনই বেদুইনের হাত কেপে উঠল এবং তরবারি খানা তার হাত থেকে পড়ে গেল। আর সেই বেদুইনের মাথা গাছের সাথে সজোরে আঘাত প্রাপ্ত হল। ফলে তার মাথা চূর্ণ-বিচূর্ণ গেল। সে সময় আল্লাহ তাআলা এ আয়াত নাজিল করলেন।
ইবনে হাতিম রা. বর্ণনা করেছেন যে, যখন রাসূল সা. বনু আনসার গোত্রের সাথে যুদ্ধ করছিলেন সে সময় তিনি “জাতুর রিকা” নামক খেজুরের বাগানে একটি কুপে পা লটকিয়ে (ঝুলিয়ে) বসে ছিলেন। এমন সময় বনু নাজ্জার গোত্রের ওয়ারিম নামক একজন বলে ওঠে ঃ “দেখ আমি এখনই মুহাম্মদকে হত্যা করছি।” লোকেরা জিজ্ঞেস করল কিরূপে? সে লোকটি বলল ঃ “আমি কোন বাহানা করে তার তরবারিটি নিয়ে নিব। তারপর ওই তরবারী দ্বারাই তার জীবন শেষ করব।” এ কথা বলে সে রাসূল সা. এর কাছে আসল এবং এ কথা বলার পর রাসূলের তরবারীটা দেখতে চাইল। নবী সা. তাকে তরবারীটা দিয়ে দিলেন। কিন' ওটা হাতে নেওয়া মাত্রই সে এত কাপতে শুরু করল যে, শেষ পর্যন- তরবারী হাতে রাখতে পারল না। হাত থেকে পড়ে গেল। তখন রসুল সা. বললেন ঃ তোমার ও তোমার কুমতলবের মাঝে আল্লাহ প্রতিবন্ধক হয়েছিলেন। ওই সময় এ আয়াতটি নাজিল হয়।
হুয়াইরীশ ইবনে হারিসেও এইরূপ একটা ঘটনা প্রসিদ্বি লাভ করেছে। ইবনে মিরদুয়াই রা. বর্ণনা করেছেন ঃ সাহাবায়ে কেরামের অভ্যাস ছিল যে, সফরে তারা যেখানে বিশ্রামের জন্য থাকতেন সেখানে রাসূল সা. এর জন্য ঘন ছায়াযুক্ত একটি বড় গাছ রেখে দিতেন। নবীজি সেই গাছের নীচে বিশ্রাম করতেন। একদা তিনি ঐরূপ একটি গাছের নীচে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন এবং নবীজির তরবারীখানা গাছেই লটকানো ছিল। এমন সময় একটি লোক এসে পড়ে এবং তরবারী খানা হাতে নিয়ে বলে যে, “এখন তোমাকে কে বাচাবে?” তিনি বললেন ঃ “আল্লাহ বাচাবেন। তুমি তরবারি রেখে দাও।” তখন সে এতই আতঙ্কিত হয়ে পড়ে যে, তাকে হুকুম পালন করতেই হয়। সে তরবারি রসূল সা. এর সামনে রেখে দেয়। সে সময় আল্লাহ এ আয়াত নাজিল করেন।
সাহাবাগণ একটি লোককে নবী সা.এর কাছে ধরে নিয়ে আসেন এবং তাঁকে বলেন এ লোকটি আপনাকে হত্যা করার ইচ্ছা করছিল। তখন লোকটি কাপতে শুরু করে। রাসূল তাকে তখন বলেন তুমি আমাকে হত্যা করতে চাইলেও আল্লাহ তোমার ইচ্ছা পূর্ণ করবেন না।
---৪-৭ম খণ্ড,তাফসীর ইবনে কাসীর
উপরোক্ত আলোচনা থেকে বুঝা গেল যে, আলীকে ১ম খলিফা হিসেবে জনগণের কাছে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য কখনো এ আয়াতটি নাজিল হয়নি। অর্থাৎ আয়াতটির ব্যাখ্যায় শিয়ারা মনগড়া ও অযৌক্তিক কাহিনী বর্ণনা করেছে-যা সর্বজনস্বীকৃত নয়।
আবার সৈয়দ কুতূব শহীদ রহ. তার “তাফসীর ফি যিলালিল কুরআন” এ সূরা মায়েদার ৬৭নং আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখেছেন:-
দাওয়াতের কাজে আপোষের কোন সুযোগ নেই ঃ
এখানে রাসূল সা. কে এই মর্মে চূড়ান- নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ পুরো বিধান পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তিনি যেন জনগণের কাছে পৌঁছিয়ে দেন। আর নবী সা.এ হকের বাণী প্রচার করতে গিয়ে পার্থিব কোনও বিবেচনাকে যেন সামনে না রাখেন। অন্যথায় মনে রাখতে হবে তিনি যেন রিসালাতের দায়িত্ব পুরোপুরি আঞ্জাম দেননি এবং আল্লাহর পয়গাম সঠিক ভাবে মানুষের কাছে পৌঁছাননি। আল্লাহ তাআলা তাঁকে মানুষের অনিষ্ট থেকে হেফাজত করবেন। যার হেফাজতের দায়িত্ব স্বয়ং রাব্বুল আলামীন নিজ হাতে গ্রহণ করেছেন, অন্য মানুষ তার কোনও ক্ষতি করতে পারে না।
নিঃসন্দেহে ঈমানের বাণী প্রচারে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভোগা উচিত নয়। বরং তা পুরোপুরি নিঃসঙ্কোচে মানুষের কাছে পৌছিয়ে দেওয়া উচিত। এতে বিরুদ্বাচরণকারীরা যা বলার বলুক এবং দ্বীনের শত্রুরা যা করার করুক। কারণ আকীদা বা বিশ্বাসের সত্য বাণী কামনা-বাসনার তোষামোদ ও তাবেদারী করে না।
অনুরূপভাবে তা মনের অনাকাংখিত ইচ্ছার প্রতিও ভ্রূক্ষেপ করে না বরং তা এ বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখে যে, ঈমানের প্রচার এমন হবে যেন তা মানব অন-রের অন-স'লে কার্যকরী অবস'ায় পৌছে। আকীদার এ সত্য বাণী বলিষ্ঠ ও চূড়ান- ভাবে প্রচার করার অর্থ কর্কশতা ও নিষ্ঠুরটা নয়। আল্লাহ তাআলা তার রাসূল সা. কে হেকমত ও উত্তম উপদেশের মাধ্যমে মানুষ কে তার পথে আহ্বান করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। এক্ষেত্রে কুরআনে হাকিমের বিভিন্ন নির্দেশের মাঝে পরষ্পর কোনও বিরোধিতা পরিলক্ষিত হয় নাই।
হেকমত (কৌশল) ও উত্তম উপদেশ স্বয়ং বর্ণনার ক্ষেত্রে চূড়ান- ও অকাট্য এবং সততা নির্দেশের পরিপন'ী নয়। প্রচারের মাধ্যম ও প্রকৃতি আর খোদ প্রচার ও তার বিষয় বস' এক জিনিস নয়, এক্ষেত্রে কাম্য হচ্ছে পরিপূর্ণ আকীদার হক বাণী। বর্ণনার ক্ষেত্রে উচিৎ অসপষ্টতা, তোষামদ ও নমনীয়তার আশ্রয় গ্রহণ না করা।
আকীদাগত বাস-ব সত্যের ক্ষেত্রে আংশিক সমাধান এবং আপোষমূলক বক্তব্য বলতে কিছুই নেই। দাওয়াতের সূচনালগ্ন থেকেই রাসূল সা. দাওয়াতী কাজের ক্ষেত্রে হেকমত ও উত্তম উপদেশের পন'া অবলম্বন করে দাওয়াত দিতেন। তিনি আকীদার ক্ষেত্রে চূড়ান- বক্তব্য রাখতেন, কোন প্রকার আপোষমূলক বক্তব্য থেকে বিরত থাকতেন। তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে এ কথা বলার জন্য আদিষ্ট হয়েছিলেন ঃ
“হে কাফেররা! তোমরা যার ইবাদত কর, আমি তার ইবাদত করি না। ”-এখানে রাসূল নাফারমান ্বান্দাদেরকে বিশ্লেষণ সহ (কাফের) সম্বোধন করেন এবং স্পষ্ট ভাবে উভয়ের কাজের ভিন্নতা বর্ণনা করেন। এক্ষেত্রে তিনি তাদের উপস'াপিত আংশিক সমাধান গ্রহন করেন নি এবং তিনি তাদেরকে সম্বোধন করে বলেন যে, তারা নিঃসন্দেহে নির্ভেজাল বাতিলের উপর প্রতিষ্ঠিত। আর নবী সা. নিজে পরিপূর্ণ সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত। সুতরাং তিনি হকের বানী উঁচু, বলিষ্ঠ, পূর্নাঙ্গ ও চূড়ান-ভাবে এমন বাচনভঙ্গিতে উপস'াপন করেছেন, যাতে কোন প্রকার কর্কশতা, কঠোরতা এবং দুর্বলতা ছিল না।
---১৮০, ৫ম খণ্ড, ফি যিলালিল কুরআন
তাফসীরে মাআ’রেফুল কুরআনে হযরত মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ শফী রহ. বলেছেন ঃ
প্রচারকার্যের তাগিদ ও রাসূল সা. এর প্রতি সান-না ঃ
আয়াতদ্বয়ে এবং এর পূর্ববর্তী উপর্যুপুরি দুই রুকুতে ইহুদী ও খ্রিষ্টানদের বক্রতা, বিপথগামীতা , হটকারিতা এবং ইসলাম বিরোধী ষড়যন্ত্র বর্ণিত হয়েছে। মানুষ হিসেবে এর একটি স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া এরুপ হওয়াও সম্ভাব পর ছিল যে, এর ফলে মহানবী সা. নিরাশ হয়ে পড়তেন কিংবা বাধ্য হয়ে প্রচার কার্যে ভাটা দিতে পারেতেন। আর এর দ্বিতীয় প্রতিক্রিয়া এরুপও হতে পারত যে, তিনি বিরোধিতা, শক্রুতা ও নির্যাতনের পওয়া না করে প্রকারাকার্যে ব্যাপৃত থাকতেন, ফলে তাঁকে শত্রুর পক্ষ থেকে নানা রকম কষ্ট ও বিপদাপদের সম্মুখীন হতে হতো। তাই তৃতীয় আয়াতে এর দিকে রাসূল সা. কে জোরালো ভাষায় নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, আপনার প্রতি অল্লাহর পক্ষ থেকে যা কিছু অবতরণ করা হয়, তার সম্পূর্নটিই বিনা দ্বিধায় মানুষের কাছে পৌঁছে দিন; কেউ মন্দ বলুক অথবা ভাল, বিরোধিতা করুক অথবা গ্রহণ করুক।
অপরদিকে তাকে এ সংবাদ দিয়ে আশ্বস' করা হয়েছে যে, প্রচারকার্যে কাফেররা আপনার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। আল্ল্লাহ তাআলা স্বয়ং আপনার দেখা শুনা করবেন আয়াতের বাক্যটি প্রনিধানযোগ্য।-এর উদ্দেশ্যে এই যে, যদি আপনি আল্লাহ তাআলার একটি নির্র্দেশও পৌঁছাতে বাকী রাখেন তবে আপনি পয়গম্বরির দায়িত্ব থোক পরিত্রাণ পাবেন না। এ কারনেই রাসূল সা. আজীবন এ কর্তব্য পালনে পূর্ন সাহসিকতা ও সর্বশক্তি নিয়োগ করেন।
বিদায় হজ্জের সময় মহানবী সা. এর একটি উপদেশ ঃ
বিদায় হজ্জের প্রসিদ্ধ ভাষণটি একদিক থেকে ছিল ইসলামের আইন এবং অপরদিকে দিয়েছিলেন দয়ার সাগর , পিতা-মাতার চেয়েও অধিক ্লেহশীল পয়গম্বরের অনি-ম উপদেশ। এ ভাষণে তিনি সাহাবায়ে-কেরামের অভূতপূর্ব সমাবেশকে লক্ষ্য করে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ জারি করার পর প্রশ্ন করলেন ঃ بلغٺ ١لاہل শোন আমি কি তোমাদের কাছে দ্বীন পৌঁছে দিয়েছি? সাহাবীগণ স্বীকার করলেন, “জি হ্যাঁ, অবশ্যই পোঁছে দিয়েছেন।’’ এরপর নবী সা. বললেন ঃ “তোমরা সাক্ষী থেকো।” তিনি আরও বলেলেন- قليبلغ١لشاہد١لغاءب অর্থাৎ এ সমাবেশে যারা উপসি'ত আছো, তারা আমার কথাটি অনুপসি'তদের কাছে পৌঁছে দিবে।
অনুপসি'ত বলতে দুই শ্রেণীর লোকদের বুঝানো হয়েছে।
এক.যারা তখন পৃথিবীতে বিদ্যমান ছিল কিন' সমাবেশে উপসি'ত ছিল না এবং দুই. যারা তখন পর্যন- জন্মগ্রহণ করেনি। তাদের কাছে পয়গাম পৌঁছানোর পন'া, ইসলামী আন্দোলনের প্রচার ও প্রসার। সাহাবী ও তাবেয়ীগণ এ কর্তব্য যাথাযথভাবে পালনের চেষ্টা করেছেন। এর প্রভাবেই সাধারণ অবস'ায় সাহাবায়ে কেরামগণ রাসূল সা. এর বাণী ও হাদিসকে আল্লাহর একটি বিরাট অমানতের ন্যায় অনুভব করেছেন। তাঁরা রাসূলুল্লাহ সা.এর পবিত্র মুখ নিঃসৃত প্রত্যকটি কথাই উম্মাতের কাছে পৌঁছে দিতে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন। যদি কোন বিশেষ কারণ অথবা অদক্ষতার দরুণ কেউ বিশেষ হাদীস অন্যদের কাছে বর্ণনা করতেন তবে, মৃত্যুর মুহূর্তে তা দু-চারজনকে অবশ্যই শুনিয়ে দিয়েছেন যাতে এ আমানতের দায়িত্ব থেকে অব্যহতি লাভ করতে পারেন। সহীহ বুখারীতে হযরত মুয়ায রা. এর একটি হাদীস সম্পর্কে এমনি ধরনের একটা ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। বলা হয়েছে ঃ
----আরবী--- অর্থাৎ এ আমানত না পৌঁছানের কারণে গোনাহগার হওয়ার ভয়ে হযরত মুয়ায হাদীসটি মৃত্যুর সময় বর্ণনা করেছেন। আয়াতের এ দ্বিতীয় বাক্যে সুসংবাদ দেয়া হয়েছে যে, যতই বিরোধিতা করুক, শত্রুরা আপনার কেশাগ্রও স্পর্শ করতে পারবে না।
হাদিসে বলা হয়েছে ঃ
এ আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বে কয়েকজন সাহাবী দেহরক্ষী হিসেবে সাধারণভাবে নবী সা. এর সাথে থাকতেন এবং গৃহে ও প্রবাসে তাঁকে পাহারা দিতেন। এ আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর রাসূল সা. তাঁর প্রহরী সাহাবীদেরকে বিদায় করে দেন। কারণ এ দায়িত্ব স্বয়ং আল্লাহ তাআলা স্বহসে- গ্রহন করেছেন।
হযরত হাসান রা. থেকে বর্ণিত এক হাদীসে মহানবী সা. বলেন ঃ ইসলামী আন্দোলনের নির্দেশ পাওয়ার পর আমার মনে বেশ ভীতির সঞ্চার হয়েছিল। কারণ চারদিক থেকে হয়ত সবাই আমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করবে এবং বিরোধীতা করবে। অতপর যখন এ আয়াত নাযিল হল, তখন ভয়-ভীতি দুর হয় মন প্রশান- হয়ে যায়। ---তাফসীরে কবীর
এ আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর ইসলমী আন্দোলনের কাজে কেউ রাসূল সা. এর বিন্দুমাত্র ক্ষতি করতে পারে নি। অবশ্য যুদ্ধ ও জেহাদে সাময়িকভাবে কোনরুপ কষ্ট পাওয়া এর পরিপনি' নয়।
---৩৪৪নং পৃষ্ঠা, তাফসীরে মাআ’রেফুল কুরআন
আহলে বাইত (নবী পরিবার) ও ইমামত (বার ইমামে বিশ্বাস) নিয়ে অতিরঞ্জিত কথাবার্তার সমাহার “শিয়াদের মৌলিক বিশ্বাস” নামক বইতে শিয়া লেখক আল্লামা মুহাম্মদ রেজা আল-মুজাফফর লিখেছেনঃ
৭. শরীয়তের দলিলগুলোর (ইসলামের জ্ঞানের উৎস) উৎস হলো ঃ- পবিত্র কুরআন, রাসূল সা. ও ইমামগণ আ.এর সুন্নাত, ইজমা এবং বুদ্ধিবৃত্তি (আকল)।
---৯-১০, শিয়াদের মৌলিক বিশ্বাস
উপরোক্ত ৭ নং দাবির জবাব ঃ
আমরা জানি যে, শরীয়তে ইসলামী জ্ঞানের দ্বিতীয় উৎস হল রাসূলের সুন্নাত। কিন' শিয়ারা তাদের ইমামত নামক কাল্পনিক বিশ্বাসকে মজবুত করার জন্য ইসলামী জ্ঞানের উৎসের দ্বিতীয়টিতে রাসূলের সুন্নাত এর সাথে তাদের ‘ইমামদের সুন্নাত’ কথাটি জুড়ে দিয়েছেন। রাসূলের জীবনাদর্শই আমাদের সুন্নাত কিন' ইমামদের জীবনাদর্শ কিভাবে আমাদের সুন্নাত হতে পারে? শুধু তাই নয়, তারা তাদের বারজন ইমামদেরকে বক্তব্যে, আলোচনায়, বই-পত্র-পত্রিকায় এমনভবে উপস'াপন করে যেন রাসূল সা.এর আদর্শ মুসলমানদের জন্য যথেষ্ট নয় এবং হযরত আলী রা. হচ্ছেন শিয়াদের নবী (নাউযুবিল্লাহ)। আসলে শিয়ারা হযরত আলী রা. সহ তাদের অন্যান্য ইমামগণকেই বিভিন্ন প্রসঙ্গে বেশি উপস'াপন করেন এবং রাসূলের আদর্শের কথা কম বলেন, নবী সা. এর হাদীস কম উপস'াপন করে থাকেন। এসব কারনে অনেকের ধারণা শিয়াদের নবী হচ্ছেন হযরত আলী রা.।
তারা কখনো কখনো কোথাও ইমামাতকে নবুওয়াত-রিসালতের মত খেদায়ী কার্যক্রম বলেছেন, কোথাও ইমামদের সহপাটীকে উমুক ইমামের সাহাবী, আবার ইসলামের জ্ঞানের দ্বিতীয় উৎসের অংশে রাসূলের আদর্শ তথা সুন্নাতের সাথে তাদের ইমামদের আদর্শকে বা বাণীকে সুন্নাত বলে চালিয়ে দিয়েছেন।
তাছাড়া শিয়ারা কোন একটি প্রসঙ্গে কথা বলতে বা আদর্শের উদাহরণ দিতে রাসূলের হাদীস বা আদর্শকে উপেক্ষা করে তাদের ইমামদের বাণী বর্ণনা করে থাকে এবং তা হাদীস বলে অভিহিত করে। যা একান-ই অভিশপ্ত কাজ। কেননা ইমামতে বিশ্বাসের সাথে তারা রিসালাতকেই সমূলে উৎপাটিত করে চলেছে। কারন এভাবে তারা তাদের ইমামদের আদর্শ বা বাণী দ্বারা রাসূলের আদর্শ বা বাণীকে প্রতিস'াপন করবে, রাসূলের সুন্নাত তথা তাঁর আদর্শকে বাদ দিয়ে দিবে। যা রিসালাতের জন্য মারাত্বক হুমকিস্বরুপ।
শিয়ারা তাদের ইমামদের সহচরকে সাহাবী, ইমামদের বাণীকে হাদীসের মত বর্ণনা করে তা হাদীস নামে চালিয়ে দেয় তার কিছু প্রমাণ নিুরুপ ঃ
মুজতাহিদ সম্পর্কে আমদের বিশ্বাস ঃ
আহলে বাইতের ইমাম জাফর সাদিক আ. বলেন,
“মুজতাহিদকে প্রত্যাখান করার অর্থ হলো ইমাম আ. কে প্রত্যাখান করা। আর ইমামকে প্রত্যাখান করার অর্থ হলো আল্লাহকে প্রত্যাখান করা। আর এটা অংশীবাদ ও শিরকের নামান-র বৈ কিছু নয়।”
---১০, শিয়াদের মৌলিক বিশ্বাস
মহান আল্লাহ সম্পর্কে আমাদের বিশ্বাস ঃ
ইমাম বাকের আ.বলেন ঃ “তিনি বিজ্ঞদের ব্যাখ্যার উর্ধে এবং তিনি সূক্ষ্ন জ্ঞানের নাগালের বাইরে।” ---১১,শিয়াদের মৌলিক বিশ্বাস
তাকিয়া সম্পর্কে আমাদের বিশ্বাস ঃ
বিশেষ করে ইমাম সাদিক আ. বলেন, “যার তাক্যিয়া নেই, তার দ্বীন নেই।”
হযরত ফাতিমা আ. এর স্বর্গীয় ব্যক্তিত্ব ঃ
ইমাম সাদেক আ. এর কাছে জনৈক ব্যক্তি প্রশ্ন করল, ‘‘কেন হযরত ফাতিমা আ. কে যাহরা বা আলোকোজ্জল বলা হয়েছে?’’ উত্তরে তিনি বলেন ঃ “তার কারণ হচ্ছে, হযরত ফাতেমা যখন ইবাদাতের উদ্দেশ্যে মেহরাবে দণ্ডায়মান হতেন, তখন তাঁর নূর আসমানের অধিবাসীদের জন্য প্রজ্জলিত হয়ে উঠত, যেমনিভাবে জমিনের অধিবাসীদের জন্যে আকাশের তারকা আলোকোজ্জল দৃষ্ট হয়।
---২২, হযরত মা ফাতেমা আ.
ইমাম জাফর সাদিক আ. বলেছেন ঃ “যদি আল্লাহ আমিরুল মুমিনীন আলী আ. কে ফাতেমার জন্য সৃষ্টি না করতেন তাহলে তাঁর জন্য ভূপৃষ্ঠে কোন স্বামীই পাওয়া যেত না।”---২১, হযরত মা ফাতেমা আ.
ঠিক হাদীসের মত করেই তারা তাদের ইমামদের কথা বর্ননা করে যার প্রমাণ ঃ
‘‘হযরত সুফিয়ান বিন ওয়াইনাহ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইমাম জাফর সাদেক আ. বলেছেন ঃ “দুই সমুদ্রকে প্রবাহিত করেন যেন, তারা পরষ্পর মিলিত হয়” আয়াতটি দ্বারা হযরত আলী আ. ও হযরত ফাতেমা আ. কে বোঝানো হয়েছে।”
---২১, হযরত মা ফাতেমা আ.
এছাড়াও শিয়ারা তাদের ইমামদের সহচরদেরকে সাহাবী বলে প্রচার করতেও দ্বিধাবোধ করেনি। সাহাবী একটি ইসলামী পরিভাষা যার ব্যবহার বা প্রয়োগক্ষেত্রও নির্ধারিত। সাহাবী বলা হয় তাদের যারা আজীবন বা জীবনের কোন এক সময় মহানবী সা.এর সাক্ষাত পেয়েছেন এবং আমৃত্যু ইসলামের পথে টিকে ছিলেন। কিন' এ মর্যাদাপূর্ণ পরিভাষাটি শিয়ারা ইমামদের সহচরদের ক্ষেত্রেও ব্যবহার করেছে। যারা রাসূলের সাহাবী তাঁরা হলেন নবী মোহাম্মদ সা. এর পরেই সবচেয়ে মর্যাদাবান ও পূণ্যবর্তী ব্যক্তি।
যারা মর্যাদার দিক দিয়ে সাহাবীদের ধারের কাছেও যেতে পারে না, শিয়ারা তাদের সাহাবী বলে সম্বোধন করেছে তার প্রমাণ ঃ
‘‘এ বিষয়টির ওপর লক্ষ্য রেখেই ইমাম সাদিক আ. তাঁর কোন একজন সাহাবী মোয়াল্লা বিন খুনাইসের প্রশ্নের জবাবে এ ব্যপারে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। মোয়াল্লিম বিন খুনাইস ইমামকে ভাতৃত্বের অধিকার সম্পর্কে প্রশ্ন করেছিলেন।’’---১০৫, শিয়াদের মৌলিক বিশ্বাস
‘‘তবে শিয়াদের নিকট ইমামগণ আ. ভাতৃত্ব কামনা করেছেন, তা এ ভাতৃত্বের চেয়েও উর্ধ্বে। একাধিক হাদীস বর্ণিত হয়েছে যা এ বক্তব্যের সত্যতা প্রমাণ করে। উদাহরণস্বরুপ আযান বিন তাগলিব নামে ইমাম সাদিক আ. এর এক সাহাবীর সাথে তার কথোপকথন উল্লেখ করাই যথেষ্ট।’’
---১০৫, শিয়াদের মৌলিক বিশ্বাস
এবার আমরা দেখবো, কিভাবে শিয়ারা তাদের ইমামদের উক্তি বা আদর্শকে অবিকল হাদিসের মতই উল্লেখ করেছেন, যা অনেকে বিশেষ করে ইসলামী জ্ঞানে অপরিচিত ব্যক্তিগণ হাদীস মনে করবেন, আসলে যা কখনই হাদীস নয়। হাদীস হল রাসূল (সাঃ) এর কথা, কাজ বা মৌন সম্মতি। তাহলে শিয়াদের এ কাজের প্রমাণ দেখুন:-
আবু বাসির থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইমাম বাকির আ. বলেছেন ঃ “একবার পালা অনুযায়ী রাসূল সা. হযরত আয়েশার ঘরে ছিলেন .........এজন্য কুরআন অবতীর্ণ করিনি যে আপনি কষ্টে নিপতিত হবেন।”
---উসূলে কাফি,খন্ড ২,পৃষ্ঠা ৯৫,হাদীস নং ৬ ; নিউজ লেটার, মে-জুন ২০০৯
ইমাম জাফর সাদিক আ. বলেন, “যদি আল্লাহ আমিরুল মুমীনিন আলী আ. কে ফাতেমার জন্য সৃষ্টি না করতেন তাহলে তার জন্য ভূপৃষ্ঠে স্বামীই পাওয়া যেত না।
---২১,হযরত মা ফাতিমা আ.
ইমাম সাদেক আ. এর কাছে এক ব্যক্তি প্রশ্ন করল,“কেন হযরত ফাতেমাকে যাহরা বা আলোকজ্জল বলা হয়েছে ? .............. আকাশের তারকা আলোকোজ্জল দৃষ্ঠ হয়।” ---২২, হযরত মা ফাতিমা আ.
“শিয়াদের মৌলিক বিশ্বাস” বইয়ের ১০৫ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে-
“এ কথার স্বপক্ষে প্রমাণ স্বরূপ মোয়াবিয়া ইবনে ওহাবের হাদীসটি পাঠকের সামনে তুলে ধরাই যথেষ্ঠ মনে করছি।”
“মোয়াবিয়াহ ইবনে ওহাব থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আমি ইমাম সাদিক আ.এর কাছে সবিনয়ে বললাম, অন্যান্য মুসলিম যাদের সাথে আমরা বসবাস করি কিন- তারা শিয়া নয়, তাদের সাথে কিরুপ ব্যবহার করব? ইমাম সাদিক আ. বললেন ঃ তোমাদের ইমামগণ তাদের অসুস' জনকে দেখতে যায়, তাদের জানাযায় অংশ গ্রহণ করে, তাদের পক্ষে বা বিপক্ষে সাক্ষীও দেয়, আর তাদের আমানতের খেয়ানত করে না।”
---১০৫নং পৃষ্ঠা, শিয়াদের মৌলিক বিশ্বাস
ইমাম সাদিক আ.তার কোন একজন সাহাবী মোয়াল্লা বিন খুনাইসের প্রশ্নের জবাবে বলেন ঃ
মেয়াল্লা বিন খুনাইস থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,আমি ইমাম সাদিক আ. এর কাছে জিজ্ঞাসা করলাম “এক মুসলমানের ওপর অপর মুসলমানের অধিকার কি?” ইমাম সাদিক (আ:) বললেন ‘‘ প্রত্যেক মুসলমানই অপর মুসলমানের ওপর ৭টি অত্যাবশ্যকীয় অধিকার রাখে। এ অধিকার গুলোর প্রত্যেকটিই অপর মুসলমানের জন্যেও আবশ্যক। যদি তাদের কেউ এ অধিকার হরন করে তবে সে আল্লাহর আনুগত্য ও বেলায়েত এবং আনুগত্য থেকে বহিষ্কৃত হয়েছে।”
---শিয়াদের মৌলিক বিশ্বাস
ছিঃ ধিক শিয়াদের! উসূলে কাফী নামক শিয়াদের বইয়ে ইমামগণের উক্তিকে তারা হাদীস বলে ব্যক্ত করেছে। কিন- হাদীসে থাকে আল্লাহর রাসূল সা. এর উক্তি। এভাবে তারা হাদীস নামক ইসলামী শরীয়তের জ্ঞানের উৎসকে ধ্বংস করার চেষ্টা করছে।
রাসূলের পরেই শ্রেষ্ঠ যে ব্যক্তিবর্গ, “সাহাবী” তাদের জন্য বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ উপাধী, সেটা কেন যেখানে সেখানে ব্যবহার করা হবে। এবার সাহাবী ও তাদের মর্যাদার ব্যাপারে কিছু কথা বলা প্রয়োজন মনে করছি। শিয়ারা যেভাবে ইমামগণের বাণীকে বর্ণনা করে এবং বর্ণনাকারীকে সাহাবী বলে সম্ভোধন করে যেন সেগুলো হাদীস এর মত মনে হয়। উসুলে কাফী নামে শিয়াদের একটি গ্রন' যেখানে রাসূলের বাণীর তুলনায় ইমামগণের বাণীই অধিক পরিমানে রয়েছে, যেটিকে তারা হাদীসগ্রন' বলে অভিহিত করে থাকে। তাদের কাছে রাসূলের হাদীসের পরিমান কম। এর একটি কারণ আছে-শিয়াদের আকায়েদ এর মধ্যে অন্যতম আকীদা হচ্ছে সাহাবী বিদ্ধেষ। অর্থাৎ সাহাবীদের ব্যাপারে মিথ্যা, মনগড়া অপবাদ প্রদান করা। তারা শুধু হযরত সালমান ফারসী, আবূ জর গিফারী, মেকদাদ ও আম্মাার ইবনে ইয়াসির প্রমুখ অল্প সংখ্যক সাহাবী ব্যাতিত অন্য সকল সাহাবী (বিশেষ করে হযরত আবু বকর রা. , হযরত উমার রা. এবং হযরত উসমান রা. আবু হুরায়রা ও হযরত আয়েশা রা. সহ অন্যান্য সাহাবীগণ) থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করে, এমনকি তাঁদেরকে মুনাফিক এবং কাফের পর্যন- বলে গালি দেন। যেহেতু তারা অধিকাংশ সাহাবী কে ঘৃনা করে তাই তাদের দ্বারা বর্ণনা করা হাদীস তাদের কাছে গ্রহনযোগ্য নয়। আর এই ঘাটতি পূরণ করার জন্য তারা এসব মিথ্যার আশ্রয় গ্রহন করেছে অর্থাৎ ইমামগণের বাণীকে হাদীস বলে চালিয়ে দিয়েছে। আর তাই এসব হাদীস ইসলামে জাল হাদীস নামে পরিচিত। সাহাবীদের মিথ্যা অপবাদ দিয়ে জাল হাদীস তৈরির পরিণাম যে কত ভয়াবহ তা কল্পনা করা যায় না। কুরআন ও হাদীসে স্বয়ং রাসূল সা. তাঁর সাহাবীদের মর্যাদার ব্যাপারে অনেক কথা বলেছেন যা নিুে বর্ণিত হল ঃ
সাহাবী কারা?
‘সাহাবী’ শব্দটি আরবী “সুবহত”শব্দের একটি রূপ। এক বচনে সাহাবী আর বহু বচনে সাহাবা। আবিধানিক অর্থ সঙ্গী, সাথী, এক সাথে জীবনযাপনকারী, সহচার্যে অবস'ান করা ইত্যাদি। ইসলামী পরিভাষায় সাহাবী শব্দ দ্বারা রাসূল সা. এর সঙ্গী-সাথীদের বোঝায়।
আল্লামা ইবনে হাজার রা. “আল-ইসাবা ফি তাময়ীযিম সাহাবা” গ্রনে' সাহাবীর সংজ্ঞা দিয়েছেন এভাবে ঃ
“সাহাবী সেই ব্যক্তি যিনি রাসূল সা. এর সাথে ঈমান সহকারে সাক্ষাত লাভ করেছেন এবং ইসলামের ওপরই মৃত্যু বরণ করেছেন।”
সাহাবীদের মর্যাদা ঃ
সাহাবীদের মর্যাদার পার্থক্য থাকতে পারে, স-রভেদ থাকতে পারে। কিন'ু তাদের পরবর্তী যুগের কোন মুসলমানই,তা তিনি যত বড় জ্ঞানী, গুণী ও সাধক হোন না কেন, কেউই একজন সাধারণ সাহাবীর ধারের কাছেও যেতে পারেননা এবং তা কোরআন, সুন্নাহ এবং ইজমা দ্বারা প্রমানিত।
সাহাবীগণই রাসূল সা. ও তার উম্মতের মধ্যে একমাত্র যোগসূত্র, সেতুবন্ধন। পরবর্তী উম্মত অর্থাৎ আমরা পবিত্র কুরআন, কুরআনের ব্যাখ্যা, রাসূলের পরিচয়, তার শিক্ষা, আদর্শ অর্থাৎ দ্বীনের সবকিছু একমাত্র তাদের সূত্রে জানতে পেরেছি। অতএব তাদের বাদ দিলে বা তাদের প্রতি অবিশ্বাস করলে দ্বীনের মূল ভিত্তিই ধ্বসে পড়ে।
হাফেজ আবু বকর ইবনে খতিব আল বাগদাদী বলেন ঃ
“আল্লাহর রাসূল সা. তাঁদের সম্পর্কে কোন ঘোষণা না দিলেও তারা হিজরত, জিহাদ, সাহায্য, আল্লাহর পথে তথা ইসলামী আন্দোলনে নিজেদের সম্পদ অকাতরে ব্যয়, দ্বীনের ব্যপারে উপদেশ, ঈমান ও ইয়াকীনের দৃঢ়তা ইত্যাদি কর্মকাণ্ড প্রমাণ করতো যে, আদালাত , ঈমান, বিশ্বাস, পবিত্রতা ইত্যাদি ক্ষেত্রে কিয়ামত পর্যন- পৃথিবীতে যত ন্যায়পরায়ন ব্যক্তিই জন্মগ্রহণ করুন না কেন, তারা ছিলেন সকলের থেকে উত্তম।
রাসূল সা. তার সাহাবীদের গালি দেয়া, অপবাদ দেয়া, হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে সমালোচনা করতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। এরপরও শিয়ারা সাহাবীদের ব্যাপারে কল্পিত, মনগড়া ও মিথ্যা অপবাদ দিয়ে আল্লাহর রাসূলের নির্দেশ প্রত্যাখ্যান করেছে, আল্লাহর রাসূলের লানত কুড়িয়েছে। এব্যপারে পরে আলোচনা হবে।
“শিয়াদের মৌলিক বিশ্বাস”বইয়ে লেখক আল্লামা মুহাম্মদ রেজা আল-মুজাফফর লিখেছেন ঃ
৮. “ইমামগণ আ. কে প্রত্যাখান করার অর্থ আল্লাহকে প্রত্যাখান করা। আর এটা অংশীবাদ ও শিরকের নামান-র ছাড়া আর কিছুই নয়।”
---৯-১০, শিয়াদের মৌলিক বিশ্বাস
উপরোক্ত ৮ নং দাবীর জবাব ঃ
মনগড়া মতবাদ আর কাল্পনিক ইতিকথার এখানেই শেষ নয়। তারা তাদের ইমামত নিয়ে, বার ইমাম নিয়ে যেমন ইচ্ছা তেমনভাবে কল্পকাহিনী লিখেছেন, অনেক ক্ষেত্রে মিথ্যা কাহিনী লিখেছেন। যেমন শিয়াদের মৌলিক বিশ্বাস বইয়ের ১০নং পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে ঃ
“ইমামগণ আ. কে প্রত্যাখান করার অর্থ রাসূল সা. কে প্রত্যাখান করা, আর রাসূলকে প্রত্যাখান করা মানে আল্লাহকে প্রত্যাখান করা যা অংশীবাদ ও শিরক”।
আমরা যারা সুন্নি তারা কখনই ইমামদের প্রত্যাখান করি না। তবে যেহেতু রাসূল সা. ই আমাদের প্রথম এবং প্রধান আদর্শ, তাই আগে তিনি, পরে অন্যকেউ। ইমামদের আমরা সম্মান করি, মর্যাদা দেই তার মানে এই নয় যে, যত্রতত্র রাসূল সা. এর আদর্শ বাদ দিয়ে শুধু ইমামদের আদর্শ নিয়ে ব্যস- থাকব, তাদেরকে বাণীকে হাদীস বলব এবং ইমামদেরকে রাসূল সা. এর সমান মর্যাদার মনে করব। ইমামদের নিয়ে যতসব অতিরঞ্জিত ও বাড়াবাড়ি কথাবার্তা বলা যা ইমামগণ বলে যাননি ইত্যাদি শিয়াদের গুরত্বপূর্ণ আকিদা-যা ইমামত নামে পরিচিত।
রাসূল সা. এবং রিসালাতের মর্যাদা অনেক উর্ধ্বে, কিন- শিয়ারা বিভিন্ন ভাবে নবী সা. এর সাথে ইমামগণকে এবং রিসালাতের সাথে ইমামতকে এক করে ফেলেছেন যা একান-ই অভিশপ্ত কাজ। কুরআন-হাদীস অনুযায়ী ইমামতের কোন ভিত্তি নেই। রাসূল সা.এর আদর্শ মুসলমানদের সবার, অনাগত সকলের প্রধান, একমাত্র ও অবশ্য পালনীয় আদর্শ যা প্রত্যাখান করা আল্লাহকে প্রত্যাখান করারই নামন-র। আর আল্লাহকে প্রত্যাখান মানে কুফর। তার মানে তাওহিদ ও রিসালাত পরষ্পর সম্পর্ক যুক্ত। যেখানে আল্লাহর রাসূলের আদর্শই আমাদের জন্য যথেষ্ঠ সেখানে ইমামদের আদর্শ কেন আমাদের জন্য অবশ্য পালনীয় হবে? রাসূলের সা.এর আদর্শ জীবন- থাকতে ইমামদের আদর্শ পালন করতে হবে কেন? শিয়ারা ইমামদের কথাবার্তা ও জীবন আদর্শ এমন ভাবে প্রচার করে, যেন রাসূল্লাহর সা. আদর্শের কোন গুরুত্বই নেই। এর প্রমাণ হিসেবে আমরা দেখতে পাই যে, তারা তাদের বইয়ে বিভিন্ন প্রসঙ্গে রাসূলের হাদীস কমই উল্লেখ করেন, অনেক ক্ষেত্রে উল্লেখই করেন না, সেখানে ইমামদের কথা, কাজ, জীবনাদর্শ বা প্রসঙ্গই বেশি প্রচার করেন। শিয়াদের এসবই প্রমাণ করে যে, শিয়াদের কাছে রাসূলের চাইতে ইমামগণের গুরুত্ব অনেক বেশি। আর শিয়াদের এসব বিভ্রান- আচরণের জন্যই তাদের ১ম ইমাম আলী রা. কে অনেকে তাদের নবী ভাবেন। এসব বিভ্রান- আচরণ-আকীদা ইসলামের জন্য যে কতো বড়ো হুমকি তা আলোচনার অপেক্ষা রাখে না।
বিভ্রান- শিয়াদের এ অপরাধ চলতে থাকলে অনেক শিয়ারাই রাসূলের আদর্শ-হাদীসকে প্রয়োজন মনে করবে না। ইমামগণের বাণীকে আসল হাদীস মনে করবে।
ইমামত সম্পর্কে বাড়াবাড়ি আরও কিছু কথাবার্তা নিুে বর্ণিত হল ঃ
৯. “আমরা বিশ্বাস করি যে, নবীগণ হলেন সবদিক থেকে পবিত্র। তাদের মত ইমামগণ আ.ও পবিত্র। আমরা মনে করি যে, ইমামগণ আ.ও মহান আল্লাহ কর্তৃক মানুষের হেদায়াতের জন্য নবী সা.এর প্রতিনিধি বা উত্তরাধিকারী হিসেবে নিয়োগকৃত হবেন।”---শিয়াদের মৌলিক বিশ্বাস
৪. “ইমামত হলো দ্বীনের মৌলিক বিষয়সমূহের একটি, যার উপর বিশ্বাস ছাড়া ইমান পূর্র্ণ হয় না। এক্ষেত্রে পূর্বপুরুষ, আত্বীয়-স্বজন ও শিক্ষক কাউকেও অনুসরণ করা বৈধ নয়। নবুওয়াতের মত ইমামতও হলো মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে দয়া ও করুণা। সুতরাং প্রত্যেক যুগেই পথ প্রদর্শক ইমাম থাকা আবশ্যক যিনি মানুষের হেদায়াতকারী এবং দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণের সংবাদদাতা হিসেবে রাসূল সা.এর প্রতিনিধিত্ব করবেন।”---শিয়াদের মৌলিক বিশ্বাস
“শিয়াদের মৌলিক বিশ্বাস”বইয়ে লেখক আল্লামা মুহাম্মদ রেজা আল-মুজাফফর লিখেছেন ঃ
১০. “ইমামত হল প্রকান-রে নবুওয়াতের মিশনেরই ধারাবাহিকতা। নবী রাসূল প্রেরণ যে কারণে আবশ্যিক, ঠিক একই কারণেই রাসূলের পরে ইমাম নিযুক্ত করাও আবশ্যক।” ---শিয়াদের মৌলিক বিশ্বাস
“নবুওয়াতের মত ইমামতও হলো মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে দয়া ও করুণা। সুতরাং প্রত্যেক যুগেই পথ প্রদর্শক ইমাম থাকা আবশ্যক, যিনি মানুষের হেদায়াতকারী এবং দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণের সংবাদদাতা” ---শিয়াদের মৌলিক বিশ্বাস
“ইমামগণ আ. হলেন সেই কর্তৃপক্ষ যাদের আনুগত্য করা মহান আল্লাহর আমাদের জন্য বাধ্যতামূলক করেছেন। তাঁদের আদেশ হলো মহান আল্লাহরই আদেশ, তাঁদের (ইমামগণের) নিষেধ হল মহান আল্লাহরই নিষেধ, তাঁদের আনুগত্য আল্লাহরই আনুগত্য, তাদের অবাধ্যতা আল্লাহরই অবাধ্যতা। মূলতঃ তাঁদেরকে অস্বীকার করার মানে হলো রাসূল সা. কে প্রত্যাখান করা। আল্লাহর রাসূলকে প্রত্যাখান করা মানে আল্লাহকে অস্বীকার করাা।” ---শিয়াদের মৌলিক বিশ্বাস
উপরোক্ত ১০ নং দাবীর জবাব ঃ
অর্থাৎ শিয়ারা তাদের ইমামত কে মহান আল্লাহর পবিত্র নবুওয়াতের সমান মর্যাদা দিয়েছেন। কিন' নবুওয়াত ও ইমামত কখনও সমান হতে পারে না। নবুওয়াত ও ইমামত এর মর্যাদার মধ্যে রয়েছে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। ইমামত হল সামান্য বিষয় যা মেনে চলা না চলা সমান। কারন আমাদের কাছ রয়েছে মহাপবিত্র আল-কুরআন, হাদীস তথা রাসূলের আদর্শ, অপরদিকে নবুওয়াতে কেউ বিশ্বাস না করলে সে কাফির বলে পরিগনিত হয় যা কুরআনে অনেকবার উল্লেখিত হয়েছে। ইমামতে বিশ্বাস না করলে কোন মুসলমান কখনো কাফির বলে গণ্য হবে না।
শিয়ারা অবশ্যই খতমে নবুওয়াতে বিশ্বাস করেন। কারণ কুরআনের ভাষা অনুযায়ী খতমে নবুওয়াতে অবিশ্বাসীরা কাফের। কুরআনে আছে ঃ
“মুহাম্মদ তোমাদের পুরুষদের মধ্যে কারো পিতা নন। বরং তিনি হলেন আল্লাহর রাসূল এবং নবীদের ধারাবাহিকতার সমাপ্তকারী ।”---সূরা আল-আহযাব ঃ ৪০
হাদীসে আছে ঃ
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত রাসূল সা. বলেছেন ঃ আমার ও আমার পূর্ববর্তী নবীদের দৃষ্টান- হচ্ছে- এরূপ, এক ব্যক্তি একটি সুন্দর সুরম্য অট্টালিকা নির্মাণ করল। কিন' এক কোণে একটি ইটের জায়গা খালি রেখে দিল। অতঃপর লোকেরা এসে অট্টালিকা ঘুরে ফিরে দেখতে লাগলো এবং তারা বিস্মিত হয়ে বলতে লাগল- ঐ ইটটি কেন লাগানো হয়নি। রাসূল সা. বললেন ঃ আমিই সেই ইট, আমিই সর্বশেষ নবী।
---সহীহ মুসলিম
আবদুল্লাহ ইবনুল আস রা. থেকে বর্ণিত। তিনি নবী সা. হতে বর্ণনা করেন যে, নবী সা. ইরশাদ করেছেন ঃ আল্লাহ তাআলা আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর পূর্বে স্বীয় প্রতিটি সৃষ্টি সম্পর্কে পরিমান ঠিক করে দিয়েছেন এবং লাওহে মাহফুজে (-) এই কথাও লিখে দিয়েছেন যে, মুহাম্মদ সা. খাতামুন্নাবিয়ীন বা শেষ নবী।
---সহীহ মুসলিম
খতমে নবুওয়াতে বিশ্বাসী শিয়ারা কিভাবে বলেন যে, তাদের ইমামত নবুওয়াতের মিশনেরই ধারাবহিকতা? যারা এসব কথা বলেন তারা কি সত্যিই খতমে নবুওয়াতে বিশ্বাসী? কেননা খতমে নবুওয়াতের মাধ্যমে নবুওয়াতের মিশনের ধারাবহিকতা শেষ হয়েছে, পূর্ণ হয়েছে। কিন' শিয়ারা দাবি করেন, ইমামাত নবুওয়াতের মিশনেরই ধারাবাহিকতা। যদি নবুওয়াতের মিশনের ধারাবাহিকতা খতমে নবুওয়াতের মাধ্যমে শেষ হয়ে যায়, তাহলে মানুষের পথ প্রদর্শনের জন্য নবুওয়াতের মিশনের ধারাবাহিকতা হিসেবে ইমামত ভিত্তিহীন, অপ্রয়োজনীয় বিভ্রান-মূলক। আর এ কারনেই শিয়াদের এ দাবি মিথ্যা। যদি তারা ইমামতে বিশ্বাস করেন তাতে দোষের কিছু নেই। কিন' বিদাআত ও অপরাধতো সেটাই যে, ইমামত নবুওয়াতের মিশনেরই ধারাবাহিকাতা-একথা বিশ্বাস করা। কেননা এ কথায় বিশ্বাস করা খতমে নবুওয়াতে বিশ্বাস না করারই নামান-র।
যেহেতু শিয়াদের দাবী ইমামত নবুওয়াতের মিশনের ধারাবাহিকতা, তাই বলা যায় নবুওয়াতের ধারাবাহিকতা শেষ হয়নি-ইমামতের মাধ্যমে তার ধারাবাহিকতা জারি রয়েছে। অর্থাৎ শিয়ারা খতমে নবুওয়াতে বিশ্বাস ও অবিশ্বাসের মাঝে দোদুল্যমান। এখানে বলা যায় শিয়ারা মুসলমান ও কাফেরদের মাঝখানে অবস'ান করছে। কেননা মুসলমানরা খতমে নবুওয়াতে বিশ্বাস করে আর কাদিয়ানীরা যারা খতমে নবুওয়াতে বিশ্বাস করে না বলে কাফের অপরদিকে শিয়ারা মুখে খতমে নবুওয়াতে বিশ্বাস করে, কিন' বাস-বে এমন ইমামতে বিশ্বাস করে যা মূলত খতমে নবুওয়াতের মূলে কুঠারাঘাত করে। এই যুক্তির ভিত্তিতে শিয়াদের স'ান মুসলিম ও কাদিয়ানী কাফেরদের মাঝখানে। তাই শিয়াদের কাফের বলা যায় না আবার মুসলিম বললেও বেমানান মনে হয়।
আর এ অপরাধের দরুন বলা যেতে পারে যে, শিয়ারা খতমে নবুওয়াতে বিশ্বাস করে না। এখান থেকে আরও বলা যায়, কাদিয়ানীরা-যারা খতমে নবওয়াতে বিশ্বাস করে না। তারা বলে কুরআন ৩০ পারা নয় আরও বেশি আর তা তাদের বানানো ভণ্ড নবীর মাধ্যমে নাযিল হয়, এই কাদিয়ানীরা শিয়াদের ইমামাতের ভিত্তিহীন দাবির ধারাবাহিকতা, ইমামতের সৃষ্টি। কারন শিয়ারা ইমামতকে গুরুত্ব দিয়ে পরোক্ষভাবে খতমে নবুওয়াতকে কম গুরুত্ব দেয়, আর কাদিয়ানীরা খতমে নবুওয়াতকে অস্বীকার করে। অর্থাৎ কাফির কাদীয়ানীরা যে শিয়াদের ভিত্তিহীন বিশ্বাস ইমামতের ফলেই সৃষ্টি হয়েছে এতে কোন সন্দেহ নেই। তাই বলা যায় কাদিয়ানীরা শিয়াদের বিভ্রান-ী সৃষ্টিকারী আকিদা ইমামতের শুভ পরিণতি।
“শিয়াদের মৌলিক বিশ্বাস”বইয়ে লেখক আল্লামা মুহাম্মদ রেজা আল-মুজাফফর লিখেছেন ঃ
৪. “প্রত্যেক যুগেই পথ প্রদর্শক ইমাম থাকা আবশ্যক যিনি মানুষের হেদায়াতকারী এবং দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণের সংবাদদাতা হিসেবে রাসূল সা.এর প্রতিনিধিত্ব করবেন।”
১০. “নবী রাসূল প্রেরণ যে কারণে আবশ্যিক, ঠিক একই কারণেই রাসূলের পরে ইমাম নিযুক্ত করাও আবশ্যক।”
উপরোক্ত ৪+১০নং দাবীর জবাব ঃ
আমরা অবগত আছি যে, নবী-রাসূলের প্রেরণের উদ্দেশ্যে বিভ্রান- মানুষকে সঠিক পথের দিশা দেয়া, পথভোলা মানুষকে ইসলামের দিকে আহবান করা। আর এজন্যই আমাদের শেষ নবী সা. এসেছিলেন নবুওয়াতের মিশন নিয়ে এবং মানুষকে পথ দেখিয়ে সঠিক পথের দিশা দেয়ার জন্য। আমাদের নবী সা. পূর্ণাঙ্গভাবে পথ দেখিয়ে দিয়ে গেছেন এবং কুরআন ও তাঁর আদর্শ (হাদীস) আমাদের জন্য রেখে গেছেন-সেখানে মানুষকে পথ দেখানোর জন্য আল্লাহর রাসূল সা.ই যথেষ্ট এবং পথ প্রদর্শক হিসেবে ইমামগণের প্রেরণ ভিত্তিহীন-যা কুরআন হাদিসের মাধ্যমে প্রমানিত এবং খতমে নবুওয়াতের পরিপনি'। হ্যাঁ ইমাম মেহেদী আসবেন বিভিন্ন দল উপদলে বিভক্ত মুসলিমদেরকে একত্রিত করার জন্য, মুসলিম উম্মাহর মধ্যে সোহার্দ্য ও সমপ্রীতি সৃষ্টির মাধ্যমে সকল অন্যায় প্রতিহত করার জন্য।
একজন ইসলামী ব্যক্তিত্ব মানুষকে আল্লাহর দিতে ডেকে ঘূনে ধরা সমাজ ভেঙে ইসলামী বিপ্লবের মাধ্যমে ইসলামী সমাজ বিনির্মাণ করার চেষ্টা করতে পারেন, ইসলামী বিপ্লব কায়েম করতে পারেন। তবে সেই ব্যক্তি নিজেকে নবী প্রেরণের মতই প্রেরিত একজন পথ-প্রদর্শক হিসেবে উপস'াপন করলে তা হবে ভিত্তিহীন-যা মেনে নেয়া যায় না- আর যেটা শিয়াদের ভিত্তিহীন দাবি।
তাদের ইমামগণ হেদায়াত করার জন্য মানুষকে আহ্বান করতে পারেন কিন' নিজেকে আল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত নবীর মত পথ-প্রদর্শক বলে অভিহিত করেন তবে সে দাবি ভিত্তিহীন এবং নবুওয়াতকে ছোট ও অপমান করার নামান-র, গুরুত্ব না দেয়ার প্রয়াস-সন্দেহ নেই।
ইমামত সম্পর্কে বাড়াবাড়ি আরও কিছু কথাবার্তা নিুে বর্ণিত হল ঃ
১১. “যদি কেউ তার যুগের ইমামকে না চিনে মৃত্যুবরণ করে, তবে তার মৃত্যু হবে জাহেলিয়াতের মৃত্যু।”
১২. “ইমামগণ আ.এরও নবী-রাসূলগণের মতই প্রকাশিত ও অপ্রকাশিত সকল প্রকার পাপ-পঙ্কিলতা থেকে মুক্ত থাকা আবশ্যক। অনুরূপ তাঁরা সকল প্রকার ভুল-ত্রুটির উর্ধ্বে, কারণ ইমামগণ আ. হলেন শরীয়াতের রক্ষাকরী ও প্রতিষ্ঠাতা, যেরুপ করেছিলেন নবী সা.। যে কারনে নবী সা. এর পবিত্রতায় বিশ্বাস করা আমাদের জন্য আবশ্যক, ঠিক একই কারণে ইমামগণ আ.এর পবিত্রতায় বিশ্বাস করাও আমাদের জন্য আবশ্যক। এ ব্যাপারে কোন পার্থক্য নেই।”---শিয়াদের মৌলিক বিশ্বাস
“শিয়াদের মৌলিক বিশ্বাস”বইয়ে লেখক আল্লামা মুহাম্মদ রেজা আল-মুজাফফর লিখেছেন ঃ
১৩. ইমামগণেরও মহানবী সা.এর মত বীরত্ব, মহত্ত্ব, আত্ব-সম্মান, সত্যবাদিতা, ন্যায়-পরায়ণতা, বিচক্ষণতা, জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও নৈতিকতা ইত্যাদি পরিপূর্ণ গুনের ক্ষেত্রে সবার শ্রেষ্ঠ। এক্ষেত্রে নবী সা. শ্রেষ্ঠত্বের জন্য যে দলিল প্রযোজ্য, ইমামের শ্রেষ্ঠত্বের জন্যও সেই একই দলিল প্রযোজ্য। ইমাম তাঁর শিক্ষা, ঐশী হুকুম সমূহ এবং সমস- জ্ঞান নবীর মাধ্যমে বা পূর্ববর্তী ইমামগণের মাধ্যমে লাভ করে থাকেন। যদি কোন নতুন প্রশ্নের সৃষ্টি হয়, তবে তিনি তা আল্লাহ প্রদত্ত তার পবিত্র আত্বিক যোগ্যতার কারণে ইলহাম বা স্বপ্নযোগে জানতে পারেন। সুতরাং আমার মনে করি যে, ইমাম এলহাম লাভের সর্বোচ্চ যোগ্যতায় পৌঁছে যান এবং এটা আল্লাহ প্রদত্ত শক্তি। ফলে তাঁর পবিত্র-পরিশুদ্ধ আত্বার মাধ্যমে তিনি যেকোন অবস'ায় যে কোন মুহূর্তে যে কোন বিষয় সম্পর্কে অবহিত হতে পারেন। তিনি যখন কোন বিষয় সম্পর্কে জানতে চান তখন তা তাঁর পবিত্র আত্বার উপর সুস্পষ্টভাবে আপতিত হয়, যেমন আপতিত হয় নির্মল আয়না উপর কোন বস'র প্রতিচ্ছবি। মহানবী সা. এর মত ইমামগণও আশৈশব জীবনের কোন সময়ই কারো নিকট প্রশিক্ষণ লাভ করেন নি, কোন শিক্ষকের শরনাপন্ন হননি, এমনকি লেখাপড়াও করেননি। ইমামদের জীবনে কোন শিক্ষক ছিল না। অথচ তাঁরা হলেন পৃথিবীতে সমস- জ্ঞানের আধার এবং অতুলনীয়। সুতরাং তাদের জীবনে এমন কোন প্রশ্ন আসে নি যার তাৎক্ষনিক জবাব তারা দেন নি। তাঁরা কখনো ‘জানিনা ”কথাটি উচ্চারণ করেননি। এমন কোন প্রশ্ন ছিল না, যার জন্য তারা কালক্ষেপণ করেছিলেন কিংবা চিন-ার আশ্রয় নিয়েছিলেন ।
---৪৩-৪৪,শিয়াদের মৌলিক বিশ্বাস
উপরোক্ত ১৩নং বাড়াবাড়ি দাবীর জবাব ঃ
শিয়ারা তাদের ইমামগণকে আল্লাহর রাসূলের সাথে তুলনা করেছেন-তুলনা করেছেন বললে ভুল হবে। বিভিন্ন গুনাবলীতে ইমামগণকে রাসূলের সমান বলেছেন, সমকক্ষ হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন যা কখনো সম্ভব নয়। এরুপ কথা বলা বা বিশ্বাস করা স্পষ্ট আল্লাহর রাসূল সা. কে অপমান করা, হীন করে দেখার নামান-র এবং যা নবুওয়াতের জন্য মারাত্বক হুমকি তথা ইসলামের জন্য হুমকি। কারণ বিভিন্ন গুনে ইমামগণ কখনেই রাসূল সা. এর সমকক্ষ হতে পারেন না।
প্রথমে নবী সা এর বীরত্বের কথাই বলা যাক। তিনি বদর, ওহুদ, খন্দকের মত বড় বড় যুদ্ধে প্রধান সেনাপতির দায়িত্ব পালন করে বিজয়ী হয়েছিলেন। শেষে মক্কা অভিযানে বের হয়ে কোন রকম রক্তপাত-প্রতিশোধ ছাড়াই মক্কা বিজয় করেন। আজ পর্যন- এমন কোন বীর সেনাপতি খুঁজে পাওয়া অসম্ভব যে কোন রক্তপাত ছাড়াই বিজয় লাভ করেছেন। এছাড়া অনেক অভিযান পরিচালনা করে ইসলামের আলোতে সারা পৃথিবী আলোকিত করেছিলেন। মাত্র ২৩ বছরের অক্লান- পরিশ্রমের বিনিময়ে তিনি সর্বকালের অনুকরনীয় আদর্শ তথা ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করেছিলেন যা আর কোন ব্যক্তির পক্ষে সম্ভব হয়নি। তাই মহানবী সা. কে মহাবীর বলা হয়, যার বীরত্বের সাথে আর কারও তুলনা হয় না।
তাই বীরত্বের ক্ষেত্রে ইমামগণ আল্লাহর রাসূলের মত বা সমকক্ষ কথাটি বানোয়াট, মিথ্যা, অতিরঞ্জিত।
জ্ঞান ও প্রজ্ঞায় নবী সা. ছিলেন সবার শীর্ষে। কারণ তাঁর জ্ঞানের মাধ্যম ছিল আল্লাহর ওহী। যে ওহীর মাধ্যমে রাসূল সা. উদ্ভুত পরিসি'তিকে মোকাবিলা করতেন, সমস্যার সমাধান করতেন। তিনি ইলহামের (অর্থাৎ স্বপ্নযোগে প্রাপ্ত জ্ঞান) মাধ্যমেও জ্ঞান লাভ করতেন। অর্থাৎ মহানবীর সা. এর জ্ঞানের উৎস ছিল ওহী ও ইলহাম কিন' ইমামগণের মাধ্যম ছিল শুধু ইলহাম। তাহলে ইমামগণের জ্ঞান ও প্রজ্ঞা কি করে নবীর সা. এর সমান হতে পারেন অথবা জ্ঞানে নবীর সমকক্ষ হতে পারেন?
তাই ইমামতে বিশ্বাসী শিয়াদের এ বিশ্বাস ভিত্তিহীন। কারণ রাসূল পরিচালিত হয়েছিলেন ওহীর মাধ্যমে আল্লাহর সরাসরি পরিচালনায়। যেমন ঃ
“হে নবী বল, আমাকে অহী পাঠানো হয়েছে।” সূরা জীন ঃ ১
“কোন মানুষই এ মর্যদার অধিকারী নয় যে, আল্লাহ তার সাথে সরাসরি কথা বলবেন। তিনি নবী সা. এর সাথে কথা বলেন হয় ওহীর মাধ্যমে, অথবা পর্দার আড়াল থেকে কিংবা তিনি কোন বার্তাবাহক (ফেরেশতা) পাঠান এবং সে তাঁর হুকুম তিনি যা চান ওহী হিসেবে দেয় । তিনি সুমহান ও বিজ্ঞ। ---সূরা শূরা ঃ ৫১
অর্থাৎ উপরোক্ত আলোচনায় বলতে পারি যে, নবী সা. এর জ্ঞানের উৎস ছিল ওহী, তাঁর কখনো কোন ব্যক্তি তাঁর সমকক্ষ হতে পারে না। এমনকি ধারে কাছেও পৌঁছেতে পারে না। এছাড়া অন্যান্য গুন আত্ব-সম্মান, সত্যবাদীতা, ন্যায়পরায়তা, বিচক্ষণতা, নৈতিকতা ইত্যাদির ক্ষেত্রে বলার অপেক্ষা রাখে না যে, তিনি সবার উর্ধে। এ ব্যাপারে তাঁর অনেক আদর্শ কাহিনী আছে যা প্রায় সবার জানা এবং এখানে যা আলোচনা করার প্রয়োজন মনে করছি না।
তবে ছোটবেলা হতেই নবী সা.কে সকলে আল-আমিন বলে ডাকত। যখন নবী সা. হিজরাত করার জন্য রাতের আধারে বের হয়ে চলে গেলেন কিন' মহান নেতা আমানতের কথা ভুলে যাননি। তিনি সকলের কাছে শত্রু হলেও বিশ্বস' ছিলেন বলে কাফেররা তাঁর কাছে বিভিন্ন জিনিসপত্র আমানত হিসেবে রাখত। হিজরাতের সেই কঠিন মুহূর্তে মহানবী সা. হযরত আলী রা .কে নিজ ঘরের বিছানায় শুইয়ে রেখে আমানত ফেরত দেয়ার অসিয়ত করে গেলেন। কাফেররা রাসূলের ঘর ঘেরাও করলো, রাসূল সা. কে পেলনা, তবে তাদের আমানত ফেরত পেয়ে অভিভূত হয়ে গেল। এরূপ বিপদের মুহূর্তে মৃত্যু আশংকার মধ্যেও রাসূল সা. তাঁর আমানতদারীতা ভুলে যাননি।
ছোট বেলা থেকে নবী সা. ছিলেন অত্যন- সৎ ও বিচক্ষণ। তাঁর নবুওয়াত প্রাপ্তির আগের ঘটনা। সে সময় কাবাঘরের কোন সেবাকে কুরাইশ বংশের লোকেরা অত্যন- মর্যাদাবান মতে করত। একবার “হজরে আসওয়াদ” নামক পাথর কাবাঘরের মধ্যে স'ানান-র নিয়ে কুরাইশ বংশের দুই গোত্র তুমুল সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়ার উপক্রম। তখন তারা তাদের বিচারের ভার মহানবী সা. এর ওপর দিয়ে বলল, ‘‘আমাদের আল-আমিন মুহাম্মদ যে বিচার করবে আমরা তাই মেনে নেব।”
পরের দিন মুহাম্মদ কাবাঘরে সেই বিবাদমান গোত্রকে গোত্রপতিসহ উপসি'ত হতে বললেন। সবাই উপসি'ত হল। সবাই চেয়ে আছে মুহাম্মদ কি ফায়সালা করে দেয়। মুহাম্মদ সা. একটি কাপড় চাইলেন এবং বিবাদের সেই লক্ষ্যবস' “হজরে আসওয়াদ” নামক পাথরটি নিজ হাতে চাদরের উপর রাখলেন। তারপর দুই গোত্রপতি কে ডাকলেন এবং বললেন আপনারা দুইজন এই চাদরের দুই প্রান- ধরে পাথরটি যথাস'ানে স'াপন করুন। গোত্রপতিদ্বয় তাই করল। ফলে তাদের মধ্যকার সম্ভাব্য রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ নিমিষেই শেষ হয়ে গেল, শানি-পূর্ণ মিমাংসা হয়ে গেল। এত অল্প বয়সে এরকম বিচক্ষণতার পরিচয় আর কারো জীবনে দেখা যায় না। তাছাড়া যাকে ওহীর মাধ্যমে জ্ঞান দেয়া হতো তাঁর বিচক্ষণতার সাথে কোন কারও তুলনা হয়?
তাছাড়া আল্লাহ তাকে সরাসরি পরিচালনার মাধ্যমে সকল গুনে গুনাণ্বিত করেছেন। অতএব তাঁর কোন গুণের সাথে কারও গুণের তুলনা হয় না, সমকক্ষ হওয়া তো দুরের কথা। আল্লাহ তাআলা বিভিন্ন সময় তাঁর বক্ষমোবারক বিদীর্ণ করেছেন এবং আল্লাহ তাঁর নিয়ামতে নবীকে পরিপূর্ণ করেছেন। সহীহ আল বুখারীর ৩৩৬ নং হাদিসটিই তা প্রমাণ করে ঃ
আনাস ইবনে মালেক রা. বলেন। আবু যর রা. বর্ণনা করেন, রাসূলল্লাহ সা. বলেছেন ঃ মক্কায় থাকাকালীন এক রাতে আমার ঘরের ছাদ বিদীর্ন করা হল এবং জিবরাইল আ. অবতরন করে আমার বক্ষ বিদীর্ন করলেন। তারপর তা যমযমের পানি দিয়ে ধৌত করলেন। অতঃপর জ্ঞানও ইমানে পরিপূর্ণ একটি স্বর্ণপাত্র এনে আমার বক্ষে ঢেলে দিলেন। তারপর তা বন্ধ করলেন।
তারপর তিনি আমার হাত ধরে আকাশের দিকে নিয়ে গেলেন। যখন আমি নিকটবর্তী আকাশে উপনীত হলাম, তখন জিবরাইল আকাশের দাররক্ষীকে বললেন, দরজা খোল। সে বলল, কে? জিবরাইল বললেন, আমি। সে বললো, আপনার সাথে কেউ আছে কি? তিনি জিবরাইল বললেন, হ্যা! আমার সাথে মুহাম্মদ সা.। সে পুনরায় বললো, তাঁকে কি ডাকা হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তারপর আমি নিকটবর্তী আকাশে আরোহন করে দেখি, সেখানে একজন লোক বসে আছে এবং তার ডান ও বামপাশে অনেকগুলো লোক। সে ডানদিকে তাকালে হাসে এবং বাম দিকে তাকালে কাঁদে। সে লোকটি বললো, খোশ আমদেদ, হে পূণ্যবান নবী! হে পূন্যবান সন-ান! আমি জিবারাইলকে জিজ্ঞাসা করলাম, ইনি কে? তিনি জবাব দিলেন, আদম আ.। ডানে ও বামে এগুলো তাঁর সন-ানের আত্বা। ডানদিকের গুলো জান্নাতি এবং বামদিকের জাহান্নামী। এজন্য তিনি যখন ডানদিকে তাকান হাসেন এবং যখন বামদিকে তাকান কাঁদেন। তারপর তিনি আমাকে নিয়ে দ্বিতীয় আকাশে অরোহন করলেন এবং দাররক্ষীকে বললেন দরজা খোল। দাররক্ষী জীবরাইলকে প্রথম দাররক্ষীর মত জিজ্ঞেস করল এবং তারপর দরজা খুলল।
মতান-রে আনাস রা. বলেন, তিনি (আবু যর ) বলেছেন , নবী বা. আকাশসমূহে আদম, ইদরীস, মূসা, ঈশা, ও ইবরাহীম আ. এর সাথে সাক্ষাত করেছিলেন। কিন' তিনি (আবু যর) তাঁদের নির্দিষ্ট অবস'ানের কাথা বলেন নি। শুধু এতটুকুক বর্ণনা করেছেন, নবী সা. আদমকে নিকটবর্তী আকাশে ও ইবরাহীমকে ষষ্ঠ আকাশে দেখেছিলেন। আনাস বলেন, জিবরাঈল আ. নবী সা. কে নিয়ে ইদরীসের নিকট পোঁছলে তিনি বলেন, খোশ আমদেদ, হে পূণ্যবান নবী! হে পূন্যবান ভ্রাতা! আমি জিবারাইলকে জিজ্ঞাসা করলাম, ইনি কে? তিনি জানালেন, ইদরীস আ.। তারপর মূসা আ.এর নিকট গেলাম। তিনি বলেন, খোশ আমদেদ, হে পূণ্যবান নবী! হে পূন্যবান ভ্রাতা! আমি জিবরাইলকে জিজ্ঞাসা করলাম, ইনি কে? তিনি জানালেন, ইনি মূসা আ.।
তারপর ঈশা আ. এর নিকট গেলাম। তিনি বলেন, খোশ আমদেদ, হে পূণ্যবান নবী! হে পূন্যবান ভ্রাতা! আমি বললাম, ইনি কে? তিনি জানালেন, ইনি মূসা আ.। তারপর ইবরাহীম আ. এর নিকট গেলাম। তিনি বললেন, খোশ আমদেদ, হে পূণ্যবান নবী! হে পূন্যবান সন-ান! আমি প্রশ্ন করলাম, ইনি কে? তিনি বললেন, ইনি ইবরাহীম আ.।
মতান-রে ইবনে আব্বাস ও আবু হাব্বা আনসারী বলতেন, নবী সা. বলেছেন, তারপর আমাকে ঊর্ধে আরোহণ করানো হলো এবং আমি এমন এক সমতল ভূমিতে পোঁছলাম যেখানে কলমের ঘচ ঘচ শব্দ শোনা যেতে লাগল।
মতান-রে আনাস ইবনে মালেক রা. বলেন, নবী সা. বলেছেন, মহামহিম আল্লাহ আপনার উম্মতের ওপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামায ফরয করেছেন। ফেরার সময় আমি মূসা আ. এর নিকট পোঁছলে, তিনি বলেন, আপনার উম্মতের ওপর আল্লাহ কি ফরয করেছেন ? আমি জানালাম, পঞ্চাশওয়াক্ত নামায। তিনি বললেন, আপনার রবের নিকট ফিরে যান। কেনানা আপনার উম্মত এত নামায আদায় করতে সক্ষম হবে না। আমি ফিরে গেলাম। আল্লাহ কিছু অংশ কম করে দিলেন। তারপর আবার মূসা আ. এর নিকট ফিরে এসে বললাম কিছু কম করে দিয়েছেন। তিনি পূনরায় বললেন ,আবার যান। কেননা আপনার উম্মত তা আদায় করতে পারবে না। আমি আবার ফিরে গেলাম। আল্লাহ কিছু মাফ করে দিলেন। আমি আবার তার নিকট ফিরে আসলে তিনি বললেন, আবার যান। কেননা আপনার উম্মত এও আদায় করতে সক্ষম হবে না। আমি আবার ফিরে গেলাম। আল্লাহ বললেন,পাঁচ ওযাক্ত এটিই (আসলে সওয়াবের দিক থেকে) পঞ্চাশ (ওয়াক্তের সমান!)আমার কথার পরিবর্তন হয় না। আমি আবার মূসার নিকট আসলে তিনি আবার বললেন,আবার ফিরে যান। আমি বললাম, আমার যেতে লজ্জা করছে। তারপর আমাকে“সিদরাতুল মুনতাহায়”নিয়ে যাওয়া হলো। তা রঙে ঢাকা ছিল। আমি জানি না তা কি? অবশেষে আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হলো। আমি দেখি সেখানে মুক্তার হার এবং সেখানকার মাটি কস'রী।
---৩৩৬ নং হাদিস, কিতাবুস-সালাত অধ্যায়, সহীহ আল বুখারী ১ম খণ্ড।
এরকম হাজার হাজার হাদিস, কোরআনের আয়াত আছে যা মহানবী সা. এর সৎগুন বর্ণনা করে। অসংখ্য গুনে গুনান্বিত তিনিই আমাদের আদর্শ। তিনি নিষ্পাপ-সকল পাপ থেকে, ভুল-ভ্রানি- থেকে তিনি মুক্ত, তাঁর পবিত্রতা অনেক ঊর্ধে। তাঁর আগে পরের সকল গুনাহ আল্লাহ মাফ করে দিয়েছেন। যেমন হাদিসে আছে ঃ
যিয়াদ ইবনে ইলাকাতুস সা’লাবী রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি মুগীরাকে বলতে শুনেছি, রাতের বেলা নবী সা. এতক্ষণ নামাযে দাঁড়িয়ে থাকতেন যে, তাাঁর পা দুটি অথবা পায়ের নলা দুটি ফুলে যেত। তাঁকে বলা হতো আপনি এত কষ্ট করেন কেন, আল্লাহ তো আপনার অতীতের ও ভবিষ্যতের সকল গোনাহ মাফ করে দিয়েছেন। জবাবে তিনি বলতেন, আমি কি আল্লাহর মোকর গোযার (কৃতজ্ঞ) বান্দাদের একজন হবো না?
---১০৫৯নং হাদিস, কিতাবুত-তাহাজ্জুদ অধ্যায়, সহীহ আল বুখারী ১ম খণ্ড
হযরত আয়েশা রা. থেকে বণিত । তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সা. যখন লোকদেরকে হুকুম দিতেন, তখন এমন কাজের হুকুম দিতেন যা করার সাধ্য তারা রাখত। একবার তাঁরা সাহাবীরা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা তো আপনার মত নই। আল্লাহ তো আপনার আগের ও পরের সব ত্রুটি মাফা করে গিয়েছেন। (কাজেই আপনার চেয়ে বেশী ইবাদাত করা আমাদের কর্তব্য। এতে রাসূলুল্লাহ সা. রেগে গেলেন। এমনকি তাঁর চেহারায় রাগের চিহ্নও দেখা গেল। তারপর তিনি বললেন, “আমিই তো তোমাদের সকলের চেয়ে আল্লাহকে বেশী ভয় করি এবং আল্লাহকে তোমাদের চেয়ে বেশী জানি।
---১৯নং হাদিস, কিতাবুল-ইমান অধ্যায়, সহীহ আল বুখারী ১ম খণ্ড
মহান আল্লাহ বলেন ঃ
“হে নবী, আমি আপনাকে সুষ্পষ্ট বিজয় দান করেছি যাতে আল্লাহ আপনার আগের ও পরের সব ত্রুটি-বিচ্যুতি (গুনাহ) মাফ করে দিয়েছেন, আপনার জন্য তাঁর নিয়ামতকে পূর্ণত্ব দান করেছেন, আপনাকে সরল সহজ পথ দেখিয়ে দেন এবং অত্যন- বলিষ্ঠ ভাবে সাহায্য করেন।” --সূরা আল-ফাতহ ঃ ১-৩
যেহেতু তিনি আমাদের জন্য আদর্শ, আমাদের অনুকরনীয়-অনুসরণীয় তাই তাঁকে সকল পাপ গুনাহ থেকে মক্ত হতে হবে, নিষ্পাপ হতে হবে এবং তিনি তাইও অর্থাৎ তিনি নিষ্পাপ ছিলেন যা কুরআনে উল্লেখিত এবং তাই তিনি সকল গুনে গুনান্বিত। তাঁর সমান, সমকক্ষ কেউ হতে পারে না। যে বলবে (যেমন শিয়ারা বলে তাদের ইমানগণ নবী সা. এর মত নির্ভুল, নিষ্পাপ ও পবিত্র।)তার সমান গুনে গুনান্বিত, তাঁর মত সেই ব্যক্তি মূলত আল্লাহর রাসূলের মর্যাদায় বিশ্বাসী নয়।-তিনি কখনও রাসূলকে মর্যাদা, সম্মান করতে পারে না। আর যদি নবীকে সম্মান দেয়া না হয় সে কখনও মুসলমান থাকতে পারে না। নবী সা. এর সাথে ইমামগণের তুলনা যারা করেছে তারাই ভুল করেছেন, বিভ্রান-ী ছড়িয়েছেন সেই শিয়ারই বিভ্রান-। ইমামগণ তাদেরকে এরুপ করার শিক্ষা দেন নি। এসব মিথ্যা ও অতিরঞ্জিত কথা শিয়া আলেমদের বাননো, মনগড়া ও বানোয়াট-এতে কোন সন্দেহ নেই।
১৪. ইমামগণ আ. হলেন সেই কর্তৃপক্ষ যাদের আনুগত্য করা মহান আল্লাহর আমাদের জন্য বাধ্যতামূলক করেছেন। তাঁরা পৃথিবীর মানুষের নিরাপত্তা বিধায়ক। মহানবী সা. বলেন,
“তাঁদের উপমা, এ উম্মতের জন্য নূহের কিসি-র (নৌকা) মত, যে কেউ এতে আরোহন করল মুক্তি পেল। আর অমান্যকারীরা নিমজ্জিত হল।” অনুরূপভাবে, পবিত্র কুরআনে এ উক্তির প্রতিচ্ছবি দেখতে পাই যে,
“ইমামগণ আ. হলেন, “সম্মানিত বান্দা যার তাঁর অগ্রে কথা বলেন না এবং তাঁরা তাঁর (আল্লাহর) আদেশ উত্তমরূপে সম্পাদন করেন।” ---সূরা আল-আম্বিয়া ঃ ২৭
তাঁদের আদেশ হলো মহান আল্লাহরই আদেশ, তাঁদের (ইমামগণের) নিষেধ হল মহান আল্লাহরই নিষেধ, তাঁদের আনুগত্য আল্লাহরই আনুগত্য, তাদের অবাধ্যতা আল্লাহরই অবাধ্যতা। মূলত ঃ তাঁদেরকে অস্বীকার করার মানে হলো, রাসূল সা. কে প্রত্যাখান করা। আল্লাহর রাসূলকে প্রত্যাখান করা মানে আল্লাহকে অস্বীকার করা।
“শিয়াদের মৌলিক বিশ্বাস”বইয়ে লেখক আল্লামা মুহাম্মদ রেজা আল-মুজাফফর লিখেছেন ঃ
১৫. “যারা ইমামগন আ. কর্তৃক প্রশিক্ষত হয়নি এবং তাঁদের আলোয় যাদের অন-র আলোকিত হয়নি প্রকৃতার্থে তারা ইসলামের সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত ।”
উপরোক্ত ১৪ ও ১৫নং দাবীর জবাব ঃ
উপরোক্ত কথাগুলোর অসারতা ঃ
সহীত মুসলিম দ্বারা প্রমাণিত দ্বীনের মৌলিক বিষয়গুলো (ইসলামী আকিদাগুলো) ঃ ইসলামী আকায়েদ ছয়টি ঃ
১.আল্লাহর সত্তা ও তর গুনাবলীর উপর ইমান
২. ফেরেশতাদের উপর ইমান
৩.নবী-রাসূলের প্রতি বিশ্বাস ( খতমে নব্যুওয়াতের প্রতি ইমানসহ)
৪.আসমানী কিতাবসমূহের ইমান
৫. আখেরাতের উপর ইমান
৬.তকদীরে তথা ভাগ্যের উপর ইমান।
অর্থাৎ এখানে ইমামত অনুপসি'ত এবং ইমামতের স্বপক্ষে কোন হাদীস নেই, কুরআনেও উল্লেখ নেই, সেখানে উপরোক্ত বিষয়ের প্রতি বিশ্বাসের জন্য কুরআনেও বলা হয়নি। সুতরাং ইমামতে বিশ্বাস না করলে ইমান পরিপূর্ণ হয় না-এ কথাটি ভিত্তিহীন, অমূলক।
শিয়াদের দাবী যে, যারা ইমামগন কর্তৃক প্রশিক্ষিত হয়নি বা তাঁদের অন-র ইমামদের আলোয় আলোকিত হয়নি তারা ইসলাম থেকে বিচ্যুত।
এখন আমরা অবগত যে, শিয়ারা ইমামগনের শিক্ষা কে মিথ্যা, অতিরঞ্জিত ও বিকৃতভাবে উপস'াপন করেছে। তাছাড়া আমাদের হেদায়াত লাভের একমাত্র পথ হল কুরআন ও হাদিস। যদি ইমাম অন-র্ধানে থাকেন তবে তার দ্বারা প্রশিক্ষণ বা শিক্ষা না পেয়ে কি আমরা ইসলাম থেকে বিচ্যুত হয়ে যাব? কখনো নয়। কারন অনুসরনের জন্য, প্রশিক্ষণের জন্য এবং ইসলামকে জানা ও মানার জন্য মহাপবিত্র আল-কুরআন, রয়েছে রাসূলের রেখে যাওয়া আদর্শ। সুতরাং রাসূল সা. এর আদর্শই আমাদের একমাত্র অনুসরনীয়, অনুকরনীয় এবং অবশ্য পালনীয়; অন্য কারও আদর্শ নয়। অতএব রাসূল সা. কে অনুসরনের নামে ইমামগনকে অনুসরনের প্রশ্নই ওঠে না। রাসূল সা. কে অবহেলা করে ইমামগনকে অনুসরন তথা তাঁদের আদর্শ অনুসরন কখনও জায়েয নয়। কারন এরুপ করলে মানুষ ধীরে ধীরে নবী সা. কে অনুসরন করা ভুলে যায়। যার ফলশ্রুতিতে মানুষ রাসূল সা. কে ভুলে যায় এবং পরে রাসূল সা.কে বেখেয়ালেই প্রত্যাখান করে চলে। আর রাসূল সা.কে প্রত্যাখান মানে আল্লাহকে প্রত্যাখান। আর আল্লাহকে প্রত্যাখান কুফরের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ঠ্য।
হাদিসে আছে ঃ
“হযরত জাবির রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সা. বলেছেন ঃ সেই মহান সত্তার শপথ যার মুষ্ঠিতে মুহাম্মদের জীবন-প্রাণ। মুসাও যদি তোমাদের সামনে আত্বপ্রকাশ করেন এবং তোমরা তাঁহার অনুসরন কর আর আমাকে পরিত্যাগ কর, তবে তোমরা নিশ্চিত রুপে সঠিক সত্য পথ হতে ভ্রষ্ট হয়ে যাবে।
বাস-বিকই মূসা যদি এখন জীবিত থাকতেন এবং আমার নবুওয়াত পেতেন, তবে তিনিও আমার অনুসরন করতেন।”
উপরে বর্ণিত হাদীসটি শিয়াদের এসব মিথ্যা বিশ্বাসেরই প্রতিবাদ জানায়। হযরত আলী রা. স্বয়ং নিজেই এসব বিভ্রান- ও বাড়াবাড়ি বিশ্বাসের পরিণতি সম্পর্কে বলেছিলেন যা শিয়ারা তাদের বিভিন্ন বইয়ে উল্লেখ করেছেঃ
“আমাকে নিয়ে দুই শ্রেণীর লোক ধ্বংস হয়ে যাবে; এক শ্রেণী হল যারা আমাকে ভালোবেসে অতিরঞ্জিত করবে এবং অপর শ্রেণী হলো যারা আমাকে ঘৃনাভরে অবজ্ঞা করবে।”
---নাহ্জ আল-বালাগা
আমরা জানি অভিশপ্ত খারিজীরা হযরত আলী রা.কে ঘৃনা করত এবং শেষ পর্যন- তারা হযরত আলী রা.কে হত্যা করেছিল। অর্থাৎ “অপর শ্রেণী হলো যারা আমাকে ঘৃনাভরে অবজ্ঞা করবে’’ হল খারিজীরা। আর শিয়ারা হযরত আলী রা. সহ তাঁর বংশের ইমামদেরকে নিয়ে অতিরঞ্জিত কথাবার্তা বলে থাকে। তাই শিয়ারা হযরত আলী রা. এর বর্ণনা করা “এক শ্রেণী হল যারা আমাকে ভালোবেসে অতিরঞ্জিত করবে” এই বাণীর অন-র্ভূক্ত। তাই বলা যায় হযরত আলী রা. এর বাণী অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস' সমপ্রদায় দুটি হল ঃ শিয়া সমপ্রদায় ও মুরতাদ খারিজী সমপ্রদায়।
১৬. আহলে বাইতের প্রতি ভালবাসা সম্পর্কে আমাদের বিশ্বাস ঃ
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন ঃ
‘‘বলুন, আমি তোমাদের নিকট আমার নিকটাত্বীয়দের সৌহার্দ্য ব্যতিত কিছুই চাই না।”
---সূরা শূরা ঃ ২৩
১৭. ইমাম নিয়োগ সম্পর্কে আমাদের বিশ্বাস ঃ
আমরা বিশ্বাস করি যে, নবুওয়াতের মত ইমামতও রাসূূল কিংবা নিযুক্ত কোন ইমামের মাধ্যমে আল্লাহ কর্তৃক মনোনিত হতে হবে। এ দৃষ্টিকোণ থেকে ইমামত নবুওয়াতের মতই। এক্ষেত্রে কোনো প্রভেদ নেই। সুতরাং, যাকে মহান আল্লাহ মানুষের জন্য পথ প্রদর্শক নেতা রূপে প্রেরণ করেছেন তার সমপর্কে বাদানুবাদ করা সমীচীন নয়। অনুরূপ তাকে নির্বাচন, নির্ধারণ বা নিয়োগদানের অধিকার মানুষের নাই। কারণ যে ব্যক্তি পবিত্র সত্তার অধিকারী হবেন এবং মানুষের হেদায়েত ও নেতৃত্বের দায়িত্ব পালনের যোগ্যতার অধিকারী হবেন তাকে কেবলমাত্র, মহান আল্লাহ ব্যতীত কেউই তাদের পরিচয় করিয়ে দিতে পারে না কিংবা নিয়োগ বা অনুমোদন দিতে পারে না।
মহানবী সা. তার উত্তরাধিকারী (১ম খলিফা) ও ইমামের নাম ঘোষণা করেছিলেন। তিনি তার উত্তরাধিকারী হিসেবে তারই চাচাতো ভাই হযরত আলী ইবনে আবী তালিব রা. এর কথা ঘোষণা করেছিলেন। তিনি হলেন মহানবী সা.এর মুমিনদের আমীর (খলিফা) ওহির অভিভাবক এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষদের ইমাম।
মহানবী সা. আলী আ. এর উত্তরাধিকারীর ব্যাপারটি একাধিকবার ঘোষণা করেছিলেন। যেমন বলেছিলেন ঃ “তুমি আমার নিকট সেরুপ, যেরুপ মুসার নিকট হারুন। তবে আমার পরে নবী আসবে না”।
হযরত আলী আ.এর বেলায়েত এর প্রমাণ স্বরূপ হাদীস ব্যতীত একাধিক আয়াতও বিদ্যমান। যেমন পবিত্র কুরআনে সূরা মায়েদার ৫৫ নং আয়াতে বলা হয়েছে
“নিশ্চই তোমাদের ওয়ালী হলেন কেবলমাত্র আল্লাহ তার রাসূল এবং যারা ইমান এনেছে, যাকাত দিয়েছে রুকু অবস'ায়”। ---সূরা মায়েদা ঃ ৫৫
উপরোক্ত আয়াতের সর্বশেষ অংশটুকু নাযিল হয়েছিল ইমাম আলী আ. এর প্রসঙ্গে, যিনি রুকু অবস'ায় তার আংটি ভিক্ষুককে প্রদান করেছিলেন।
১৮. ইমামগণ আ.এর সংখ্যা ঃ
আমরা বিশ্বাস করি, ইমামগণ যাদের সত্যিকার অর্থে ইমামতের বৈশিষ্ট্য রয়েছে এবং যারা মহানবী সা.এর পর আমাদের জন্য শরীয়তের আহকামের উৎসরূপে আল্লাহর পক্ষ থেকে মনোনয়ন লাভ করেছেন। তাঁরা হলেন ১২ জন।
ইমামগণ-
১. আবুল হাসান আলী ইবনে আবী তালিব আল মুর্তাজা (হযরত আলী রা.)
২. আবু মোহাম্মদ আল হাসান ইবনে আলী (হযরত হাসান, রাসূলের বড় নাতি)
৩. আবু আব্দুল্লাহ আল হুসাইন ইবনে আলী (সাইয়েদুস শাহাদাত) (হুসাইন রা. রাসূলের ছোট নাতি)
৪. আবু মুহাম্মদ আলী ইবনীল হুসাইন (জয়নুল আবেদীন হুসাইনের ছেলে)
৫. আবু জাফর মুহাম্মদ ইবনে আলী (ইমাম বাকের, জয়নুল আবেদীন এর ছেলে)
৬. আবু আব্দুল্লাহ জাফর ইবনে মুহাম্মদ আস-সাদিক (ইমাম জাফর সাদিক- ইমাম বাকের এর ছেলে)
৭. আবু ইব্রাহিম মুসা ইবনে জাফর (আর কাসিম )
৮. আবুল হাসান আলী ইবনে মুসা (আর রেজা)
৯. আবু জফর মুহাম্মদ ইবনে আলী (আল জাওয়াদ)
১০. আবুল হাসান আলী ইবনে মুহাম্মদ (আল হাদি)
১১. আবু মুহাম্মদ আল হাসান ইবনে আলী (আল আশকারী)
১২.আবুল কাসেম মোহাম্মদ ইবনীল হাসান। (ইমাম মেহেদী)
শিয়াদের বিভিন্ন বইয়ে লিখিত মনগড়া বিশ্বাসগুলো নিুরুপ ঃ
১.আমরা বিশ্বাস করে যে, ইমাম হচ্ছেন বারোজন। আমরা আরও বিশ্বাস করে যে নবী সা. এর মতই একজন ইমামও নিষ্পাপ ও নিখুঁত। কারন তিনি যদি এরুপ না হন তবে তাঁর কথায় ও কাজের প্রতি বিশ্বাস স'াপন করা সম্ভব নয়। অথবা ইমামের কাজ অন্যদের জন্য উদাহরন বা আদর্শ হিসেবে বিবেচনা করা সম্ভব হবে না।”
----৯৫নং পৃষ্ঠা, শীয়া মাযহাবের মূলসুত্রসমুহ
২.“আমরা বিশ্বাস করি যে, ইমামগনের আ. নবী-রাসূলদের মতই প্রকাশিত অপ্রকাশিত সকল প্রকার পাপ-পঙ্কিলতা থেকে মুক্ত থাকা আবশ্যক। ইমামগন সকল প্রকার ভুল-ত্রুটির ঊর্ধে। যে কারনে নবী সা. এর পবিত্রতায় বিশ্বাস করা আমাদের জন্য আবশ্যক ঠিক একই কারনে ইমামগন আ.এর পবিত্রতায় বিশ্বাস করাও আমাদের জন্য আবশ্যক। এ ব্যাপারে কোন পার্থক্য নেই।”
---৪৩নং পৃষ্ঠা, শিয়াদের মৌলিক বিশ্বাস
৩.“ইমামগন হলেন সেই ব্যক্তিবর্গ যাদের সকল অপবিত্রতা দুর করে মহান আল্লহ তাদেরকে পবিত্রের মত পবিত্র করে দিয়েছেন।”---৪৫নং পৃষ্ঠা, শিয়াদের মৌলিক বিশ্বাস
৪.“আল্লাহ তো চাহেন যে, নবী পরিবার হতে অপরিচ্ছন্নতা দূর করে দিবেন এবং তোমাদেরকে পরিপূর্ণরূপে পবিত্র করে দিবেন। আয়াত আহযাব-৩৩ হযরত মুহাম্মদ সা. সহ হযরত আলী, ফাতেমা, হাসান ও হুসাইনকে উদ্দেশ্য করে অবতীর্ন হয়েছে। এ আয়াতে আহল বাইতের উদ্দেশ্যে হযরত মুহাম্মদ সা. এর বংশধর এই নিষ্পাপ ব্যক্তিবর্গ। নবী সা, এর নিষ্পাপ আহলে বাইত হযরত আলী, হযরত ফাতেমা, হাসান ও হুসাইন ছাড়া আর কেউ নন। তাঁর অন্যান্য আত্বীয় স্বজন ও স্ত্রীবর্গ এ মর্যাদার মধ্যে গন্য নন।”
---৪৫নং পৃষ্ঠা, হযরত মা ফাতিমা আ.
“আহলে বাইত ও ইমামগন নিষ্পাপ , পবিত্র” এর অসারতা“
উপরের বর্ণনা হতে বলা যায়, শিয়াদের মতে নবী সা. এর আহলে বাইত নিষ্পাপ। আর এ আহলে বাইতের মধ্যে রয়েছেন হযরত আলী, হযরত ফাতেমা, হাসান ও হুসাইন । এদের ছাড়া অন্য কেউ এর অন-র্ভূক্ত নন। তার মানে এ আহলে বাইত তথা নবী পরিবারে শিয়াদের বার ইমামের মধ্যে নবী পরিবারে শিয়াদের বার ইমামের মধ্যে রয়েছেন প্রথম তিনজন ইমাম। বাকী ৯ জন ইমাম আহলে বাই্তের মধ্যে গন্য নন। যেহেতু যারা আহলে বাইতের মধ্যে আছেন তারাই নবী সা. এর মত নিষ্পাপ অন্য কেউ নন। তাহলে বাকী ৯ জন ইমাম যারা আহলে বাইতের মধ্যে গন্য নন বলে তারা নিষ্পাপ নন। অথচ তারা তাদের বার ইমামের সবাইকে নিষ্পাপ বলে থাকেন। কেননা নিষ্পাপ হওয়ার শর্ত আহলে বাইতের অন-র্ভূক্তি। তাই উপরোক্ত আলোচনা হতে এ সিদ্ধানে- আসা যায় যে, তাদের কথা বা যুক্তি প্রমাণ করল যে তাদের প্রস-বিত ইামামদের মধ্যে শেষ নয়জন ইমাম নিষ্পাপ নন।
তাই বলা যায় যে, তাদের কথা ও কাজ বিশ্বাস স্ববিরোধী ও বহুরুপী। আর যে বিশ্বাসে স্ববিরোধিতা রয়েছে, বহুরুপীতা রয়েছে তা শুধুই বিভ্রানি-, বানোয়াট ও মিথ্যা ছাড়া অন্য কিছু নয়।
আবার তাদের মতে, কথায়, কাজে বিশ্বাসের ভিত্তি নিষ্পাপ হওয়া। ইমামগনের কথায় ও কাজে-আদর্শে বিশ্বাস করা যায় কারন তারা নিষ্পাপ। এখন কথা হল শিয়াদের আলেমগন, ধর্মীয় নেতাগন মানুষকে ইসলামে অনেক নির্দেশ দেন, বিধানের কথা ব্যাখ্যা করেন, এবং সে অনুসারে সাধারন শিয়াগন তাদের আলেমদের কথা ও কাজে এবং উপদেশের প্রতি বিশ্বাস করে। তাহলে কি তাদের অলেমগন নিষ্পাপ ? যদি নিষ্পাপ না হন (কখনও নিষ্পাপ নন) তবে তাদের কথায় মানুষ উঠাবসা করে কেন?
বার বার পাঠকদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে , শিয়াদের যে বার ইমামের কথা বলে তারা অবশ্যইসম্মানের পাত্র, যথেষ্ট মর্যাদার যোগ্য, তাদেরকে আমরা আমাদের সর্বোজ্জ মর্যাদা দিব। এসব মিথ্যা বিশ্বাসের জন্য সেসব ইমামগন দোষী নন। যারা তাদেরকে ভিত্তি েেদখিয়ে, তাদের ব্যাপারে অতিরঞ্জিত কথা বলে ( যা তারা বলেন নি, করেন নি বা নির্দেশ দেননি) বেড়ায়া তারাই মিথ্যাাবাদী, মহাঅপরাধী। সেই শিয়ারাই বিভ্রান-, পথভ্রষ্ট।
নবী সা. এর মত তাদের আহলে বাইত ও ইমামগন নিষ্পাপ-এবার এ কথটির অসারতা প্রমাণ করব। যেহেতু আমাদের তথা কিয়ামত পর্যন- সকল মানুষের একমাত্র আদর্শ রাসূল সা. তাই তাঁকে তো আল্লাহ নিষ্পাপ থাকার জন্য নিজেই সকল সময় পরিচালনা করেছেন। তাছাড়া নবী সা. নিষ্পাপ ছিলেন সে কথা হাদিসে বা কুরআনে সরাসরিভাবে প্রমাণিত। যেমন হাদিসে আছে ঃ
যিয়াদ ইবনে ইলাকাতুস সা’ লাবী রা. থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন, আমি মুগীরাকে বলতে শুনেছি, রাতেরবেলা নবী সা. এতক্ষণ নামাযে দাঁড়িয়ে থাকতেন যে, তাাঁর পা দুটি অথবা পায়ের নলা দুটি ফুলে যেত। এ তাঁকেবলা হতো আপনি এত কষ্ট করেন কেন , আল্লাহ তো আপনার অতীতের ও ভবিষ্যতের সাকল গোনাহ মাফ করে দিয়েছেন। জবাবে তিনি বলতেন, আমি কি আল্লাহর মোকর গোযার (কৃতজ্ঞ) বান্দাদের একজন হবো না?
---১০৫৯নং হাদিস, কিতাবুত-তাহাজ্জুদ অধ্যায়, সহীহ আল বুখারী ১ম খণ্ড
হযরত আয়েশা রা. থেকে বণিত । তিনি বলেন,রাসুলুল্লাহ সা. যখন লাকদেরকে হুকুম দিতেন, তখন এন কাজের হুকুম দিতেন যা করার সাধ্য তারা রাখত। একবার তাঁরা সাহাবীরা বলরেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা তো আপনার মত নই। আল্লাহ তো আপনার আগের ও পরের সব ত্রটি মাফা করে গিয়েছেন। (কাজেই অঅপনার চেয়ে বেশী ইবাদাত করা আমাদের কর্তব্য। এতে রাসূলুল্লাহ সা. রেগে গেলেন। এমনকি তাঁর চেহারায়া রাগের চিহ্নও দেখা গেল।তারপর তিনি বললেন, “আমিই তো তোাদের সকলে চেয়ে বেশী আল্লাহকে ভয় কারি এবং আল্লাহকে তোমাদের চেয়ে বেশী জানি।
---১৯নং হাদিস, কিতাবুল-ইমান অধ্যায়, সহীহ আল বুখারী ১ম খণ্ড
মহান আল্লাহ বলেন ঃ
“হে নবী, আমি আপনাকে সুষ্পষ্ট বিজয় দান করেছি যাতে আল্লাহ আপনার আগের ও পরের সব ত্রুটি-বিচ্যুতি (গুনাহ) মাফ করে দিয়েছেন, আপনার জন্য তাঁর নিয়ামতকে পূর্ণত্ব দান করেছেন, আপনাকে সরল সহজ পথ দেখিয়ে দেন এবং অত্যন- বলিষ্ঠভাবে সাহায্য করেন।” --সূরা আল-ফাতহ ঃ ১-৩
অর্থাৎ নবী সা. এার আগে-পরোর সকল ত্রুটি-বিচ্যুতি, পাপ-পঙ্কিলতা মাফ করে দিয়েছেন। তাছাড়া যখনই মহানবী সা. কোন সমস্যার সম্মুখীন হতেন তখনই হাকে ওতীর মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হতো । আর এ কারনেই নবী সা. ছিলেন নিষ্পপাপ ,ছিলেন নির্ভুল অপরদিকে শিয়াদের ইমামগনের নিষ্পাপত্বের ব্যাপারে আল্লাহর রাসূল কিছুই বলেন নি। আর তাছাড়া যে আয়াতের ভিত্তিতে (সূরা আল-আহযাব ঃ৩৩) তারা আহলে বাইতকে নিষ্পপ বলেন সেখানে তাদের আগে জরের ভুল-ত্রুটি মাফের কথা বলা হয় নি, বলা হয়েছে পবিত্রতার কথা । আর পবিত্রতাও নিষ্পাপত্ব একই কথা নয়। নিষ্পাপ মানে যার কোন পাপ নেই, পঙ্কিলতা নেই,,কোন ভুল নেই। অপরদিকেপবিত্রতাঅর্জনের মাধ্যমে, সৎগুনে অর্জনের মাধ্যমে পবিত্র হওয়া যায়,মহৎ হওঅয়া যায়। তাদের স্বপক্ষের আয়াতটিাত অপবিত্রতা থেকে পবিত্রতার কথা বলা হয়েছে। আগে-পরেরভুল-ত্রুটি মাফের কথা বলা হয়নি। তাছাড়া এ আঅয়াত দ্বারা নিষ্পাপত্বের বিষয়টি প্রমাণ করা যায় না-যাদি প্রমাণ করা হয়- তবে তা হবে অপব্যাখ্যা-যা শিয়ারা করেছেন।
পবিত্র কুরআনের সূরা আল-আহযাব এর ৩৩ আয়াতের শেষ অংশ “আল্লাহ তো চাহেন যে, নবী পরিবার হতে অপরিচ্ছন্নতা দূর করে দিবেন এবং তোমাদেরকে পরিপূর্ণরূপে পবিত্র করে দিবেন।” এর ব্যাখ্যাঅয় বিভিন্ন তাফসীরে যা লেখা অঅছে সেদিকে একটু দৃষ্টি নিক্ষেপ করলে বুঝা যাবে যে শিয়ারা অপব্যাখ্যাঅয় কতটুকু পটু।
তাফসীরে তাফহীমূল কুরআনে পবিত্র কুরআনের সূরা আল-আহযাব এর ৩৩ আয়াতের শেষ অংশ “আল্লাহ তো চাহেন যে, নবী পরিবার হতে অপরিচ্ছন্নতা দূর করে দিবেন এবং তোমাদেরকে পরিপূর্ণরূপে পবিত্র করে দিবেন।” এর ব্যাখ্যায় লেখা হয়েছে ঃ
অপর একদল আলেম (শিয়া আলেম) আলোচ্য আয়াতের তাফসীরে আরও সাংঘাাতিক রকমের স্বেচ্ছাচারিতা প্রদর্শন করেছেন। তারা নবী সা. এর পবিত্র স্ত্রীগণকে আহলে বাইতের মধ্যে শামিল মনে করেন না এবং কেবলমাত্র হযরত আলী, হযরত ফাতেমা রা. ও তাঁদের সন-ান তথা হাসান ও হুসাইনকেই এর মধ্যে শামিল মনে করেছেন বরং এর উপর এভাবে বাড়াবাড়ি করেছেন যে, “আল্লাহ তো চান যে, তোমাদের থেকে ময়লা দুর করে তেরমাদেরকে পুরোপুরি পবিত্র করে দিতে”কুআনের এ শব্দগুলো থেকে এ সিদ্ধানে- পৌঁচেছেন যে, হযরত আলী, হযরত ফাতেমা ও তাঁদের সন-ান-সন'তি আম্বিয়া আলাইহিমুস সাল্লামগনের (নবী-রাসূলগনের মত)মতই মাসুম তথা গোনাহমুক্ত নিষ্পাপ।
তাদের বক্তব্য হচ্ছে , ময়লা অর্থ ভ্রানি-ও গোনাহ এবং আল্লাহর উক্তি অনুযায়ী আহেলে বাইতকে এগুলো থেকে মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। অথচ আয়াতে অকথ া বলা হয়নি যে, তোরমাদের থেকে ময়লা দুর করে দেয়া হয়েছে, তোমাদের পাকপবিত্র করা হয়েছে, আগে -পরের সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়েছে। বরং বলা হয়েছে , আল্লাহ তোমাদের থেকে ময়লা দুর করতে এবাং তোমাদের পুরোপুরি পাক-পবিত্র করতে চান। পূর্বাপর আলোচনাও এখানে আহলে বাইতের মর্যাদা বর্ণনা করাই উদ্দেশ্য একথা বলে না। বরাং এখানে তো আহলে বাইতকে এ মর্মে নসিহত করা হয়েছে, তোমরা উমুক কাজ করো এবং উমুক কাজ করো না কারন আল্লাহ তো তোমাদের পবিত্র করতে চান।
অন্য কথায় এর অর্থ হচ্ছে, তোমরা অমুক নীতি অবলম্বন করলে পবিত্রতার নিয়ামতে সমুদ্ধ হবে, অন্যাথায় তা লাভ করতে পারবে না । তবু যদি --আরবী--- এর অর্থ এই ধরে নেয়া হয় যে, আল্লাহ তাঁদেরকে নিষ্পাপ করে দিয়েছেন ,তাহলে ওযু , গোসলও তায়াম্মুমকারী প্রত্যেক মসলমানকে নিষ্পাপ বলে মেনে না নেয়ার কোন কারন নেই । কারন তাদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন ঃ
‘হে ঈমানদারগণ! যখন তোমরা নামাযের জন্য তৈরী হও, তখন তোমাদের মুখমণ্ডল ও হাত দুটি কনু্ই পর্যন- ধুয়ে ফেলো, মাথার ওপর হাত বুলাও এবং পা দুটি গেরো পর্যন- ধুয়ে ফেল। যদি তোমরা ‘জানাবাত’ অবস'ায় থাকো, তাহলে গোসল করে পাক সাফ হয়ে যাও। যদি তোমরা রোগগ্রস- হও বা সাফরে থাকো অথবা তোমাদের মধ্যে কোন ব্যক্তি মলমূত্র ত্যাগ করে আসে বা তোমরা নারীদেরকে স্পর্শ করে থাকো এবং পানি না পাও, তাহলে পাক-পবিত্র মাটি দিয়ে কাজ সেরে নাও। তার ওপর হাত রেখে নিজের চেহারা ও হাতের ওপর মাসেহ করে নাও। আল্লাহ তোমাদের জন্য জীবনকে সংকীর্ণ করে দিতে চান না কিন' তিনি চান তোমাদেরকে পাক-পবিত্র করতে এবং তাঁর নিয়ামত তোমাদের ওপর সম্পূর্ণ করে দিতে, হয়তো তোমরা শোকর গুজার হবে।’ ---সূরা আল-মায়েদাহ ঃ ৬”
----------৫০-৫১নং পৃষ্ঠা, ১২শ খণ্ড, তাফহীমূল কুরআন
আয়াতটির ব্যাখ্যায় তাফসীরে ফি-যিলালিল কুরআনে তাফসীরকারক সাইয়েদ কুতুব শহীদ বলেন ঃ
“আল্লাহ তো চাহেন যে, নবী পরিবার হতে অপরিচ্ছন্নতা দূর করে দিবেন এবং তোমাদেরকে পরিপূর্ণরূপে পবিত্র করে দিবেন।”
এ আয়াতটির ব্যাখ্যা করতে গেলে অনেকগুলো মূল্যবান তথ্য পাওয়া যায়; এবং সেগুলোর প্রত্যেকটিই আকর্ষনীয় এক ্লেহ মায়ামমতায় ভরা। আয়াতটির মধ্যে ‘আহলুল বাইত’ (গুহবাসী) শব্দ ব্যবহার করা হােয়ছে। এর মধ্যে কোন ঘর তা বলা হয়নি। কিন' আল-বায়াত শব্দের মধ্যে ‘আল’ নিদিষ্টসূচক অব্যয় ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন ঃ আশ-শামসু , আল-ক্বামারু ও আল কাবা অর্থাৎ এ শব্দগুলো দ্বারা য সব জিনিসকে বুঝায় গেুলোর প্রত্যেকটি নিজ নিজ স'নে একক বোধক, এগুলোর কোন দ্বিতীয় নেই।এগুলোর জন্য ইংরেজীতে যেমন “ঞযব-দি” ব্যবাহার করা হয়েছে, আরবীতে তেমনি সমঅর্থে ব্যবহার করা হয়েছে “ -আল” । সুতরাং বুঝা যাচ্ছে যে, আল বায়ত হচ্ছে সেই একক ও অদ্বিতীয় ঘরবা বাড়ী যার সমকক্ষ ঘর দুনিয়াতে আর নেই। বায়াত+আল্লাহ=বায়তুল্লাহ এবং বায়ত+আল+হারাম=বায়তুল হারামবলে যেমন আল্লাহর মর্যাদাবান ঘর বলে অভিহিত করা হয়েছে , তেমনি আহল+আল+বায়ত=আহলুল বায়ত বলে াএকমাত্র নবীসা. এর ঘরকেসারা পৃথিবীর বুকে মর্যাদাবান কলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে এবং এ মর্যাদাকে অক্ষুন্ন রাখতে আল্লাহ নিজেই মোমেনদের জানাচ্ছেন-
“ অবশ্য তিনি তোমাদের থেকে সকল কলুষ কালিমাকে দু করে দিতেচান এবং তোমাদেরকে সর্বতোভাবে পবিত্র করতে চান।” এখানে বিশেষভাবে বলা হয়েছে যে, তাদের প্রতি আল্লাহক-রাব্বুল আলামীন এর ্লেতের কথা এবং এই ্লেহের কারন বর্ণনা করে বলা হচ্চে , আল্লাহ সোবহানাহু তাআলা তাদের মর্যাদা সম্পর্কে তাদের মধ্যে সচেতনতা আনতে চান, তিনি তাদেরকে পবিত্র বানাতে চান এবং তাদের মমধ্যে থেকে সকল কলুষ কালিমাকে দুর করতে চান। হ্যাঁ তাদেরকে পরিচালনা র জন্য আল্লাহ পাকের সরাসরি মর্যাদাপূর্ণ হস-ক্ষেপ । যখন আমরা চিন-া করি -এ কেরন মহান সত্তা , যিিন এ পবিত্র বাণী উচ্চারণ করেছেন, তখন দেখতে পাই, এ বাণী উচ্চারনকারী হচ্ছেন সেই মহামহিম সম্রাট যিনি গোটা বিেশ্েবর প্রতিপালক, যিানিতাঁর সৃষ্টিকে লক্ষ্য করে বলেন,“হয়ে যাও, ব্যস তেমনি হয়ে যায়।”
এহা সম্মানিত ও মহা মর্যাদাবান আল্লাাহ ,তিনি সবার দারী করেন, হেফাযত করেন,তিনি মহাশক্তিমান,যিনি শক্তি বলেসবইকে নিয়ন্ত্রন করেন----তাঁর এ শব্দগুলো সামনে রেখে যখন আরা চিন- িভাবনাকরি, তখন তাঁরকথার অর্থসমূহ একে একে আমাদের বোধগম্য হতে থাকে ; হৃদয়ের অভ্যন-রে পরম মর্যাদাপূর্ণ আল্লাহ তাআলার পবিত্র অসি'ত্বের কাথা শ্রদ্ধাসহকারে অনুভূত হতে থাকে।
এ মহান অল্লাহর কুরআনের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে কোটি কোটি মানুষ অঅল্লাহ তাআলার আনুগত্য প্রকশ করে চলেছ। এ পাক কালামের আলাচ্য আয়াতগুলোই ঘোষণা দিচ্ছে যে, এ আকর্ষনী বাক্যসমূহ “আল-বায়ত” এর মধ্যে থেকে সকল অআবিলতাকে দূরীভূত করতে চায়, এবং এ ঘরকেস্কল পাপ-পঙ্কিলতা থেকে পবিত্র করার উদ্দেশ্যেই এগুলো অবতীর্ণ হয়েছে ।
এখানে তাত্বহীর” শব্দটি ব্যবহৃদ হয়েছে , যার অর্থ হচ্ছে পবিত্রকরন। আর আল্লাহ তাআলা কর্তৃতক অপবিত্রতা বা কলুষতা দূরীভূত করন দ্বারা সেই সব উপািয় অবলম্বন করা সম্ভব হয় যেগুলোর ফলে মানুষ নিজেদেরকে নিষ্কলুষ বানানোর এরাদা করতে পারে া, অর্থাৎ আল্লাহ যখন নিজেই কাউকেপবিত্র করতে চান, তখন সে লক্ষ্য অর্জনের জন্য যে সব উপায় ও পদ্ধতি অবলম্বন করা প্রয়োজন মহান আল্লাহ পাক সেগুলো তার জন্য সহজ করে দেন । এর ফলে তারা তাদের কার্য কর্মজীবনে সে সব উপায়ও পদ্ধতিকে বাস-বায়িত করে ।এটাই হচ্ছে আল্লাহ তাআলার ইচ্ছা----অন-রের মধ্যে চেতনা ও তাকওয়া সৃষ্টি করা। যার প্রতিফলন ঘটবে ব্যবহার ও কাজের মধ্যে। এভাবেই পরিপূর্ণ ইসলামী জীবন-ব্যবস'া জায়েম হবে এবং জীবনের সর্বক্ষেত্রে এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জিত হবে। নবী সা. এর স্ত্রীদেরকে যেভাবে আল্লহা তাআল গড়তে চেয়েছিলেন তার বিবরণ শেষ হচ্ছে ,রাসূলুল্লাহ সা. এর স্ত্রী হবার কারনে তাঁদর মর্যাদার বিবরণও এখানে শেষ হচ্ছে ; সমাপ্ত হচ্ছে তঁদের প্রতি মহান আল্লাহ তাআলার মেহেরবানীর বিবরণ ।
তারপর মহান রাব্বুল আলামীন তাঁদের ঘরগুলোকে কুরআন ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের কথা নাযিলে হওযার উপযুক্ত স'ানে পরিনত করলেন, এ েঘরগুলোকে আলো, হেদায়াত ও ইমানের উৎস বানালেন। এরশাদ হচ্ছে-“ স্মরণ কর! (হে নবীর স্ত্রীগন ) আল্লাহ তাঅঅলার সেই সব আয়াত এবং জ্ঞানগর্ভ কথাগুলোকে-যা তোমাদের ঘরসমূহে পঠিত হয়ে থাকে। নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা সূক্ষাতিসূক্ষ বিষয় সমূহ সম্পার্কে সম্যক অবগত।” অর্থাৎ , এই মহাগ্রন' আল-কুরআন মহাসৌভগ্যেরা প্রতীক,উপদেশ দেয়ার জন্য এ পাকপবিত্র কালামই যথেষ্ট । এটা এজনা্য যেন মানুষ তার মহান মর্যাদা বুঝাতে পারে । আল্লাহ তাআলার কীর্তিসমূহ অনুভব করে, এবং আল্লাহর ভাণ্ডারে রক্ষিত চির নেয়ামত সমূতের প্রাচুর্য হৃদয়ংগম করতে পারে ,যার সমকক্ষ অন্য কোন নেয়ামত হতে পারে নআ।
আরেকটি মূল্যবান উপদেশের কথা এখানে আসছে, যা নবী সা. এর স্ত্রীদেরকে সম্বোধন করে দেয়া হলেছিল , আর তা হচ্ছে , তারা যেন ক্ষণসস'ায়ী এ দুনিয়ার সুখ সৌন্দর্যও সাজ-সজ্জার কাথে আল্লাহ তাআলারা তাঁর রাসূল এর সন'ষ্টি এবঙ আখেরাতের স'ায়ী জিন্দেগীর তুলনা করে দেকে এবং বুঝতে চেষ্টা করে যে,কোনটা বেশি গ্রহনযোগ্য।এতে করে তারা বুঝতে পারবে যে, আল্লাহ তাআলা তাদেরকে সারা দুনিয়ার নারীকূলের মধ্যে যে মর্যাদা দান করেছেন তা কাত বড় নেয়ামত এবং দুনিয়ার জিন্দেগীর সুখ-সম্পদ সে মহা নেয়ামতের তুলনায় কত তুচ্ছ কত সামান্য।
উপরোক্ত আয়াতটুকুর (আহযাব এর ৩৩ আয়াতের শেষ অংশ) তাফসীরে জানা গেল নবী সা. অর্থাৎ নবী ও রাসূল ছাড়া কোন মানুষ, সাহাবী, তাবেঈ, তাবেঈন ইত্যাদি কেউ নিষ্পাপ হতে পারে না। যদি “আল্লাহ তো চান যে, তোমাদের থেকে ময়লা দুর করে তোমাদেরকে পুরোপুরি পবিত্র করে দিতে” দ্বারা নবী পরিবারোর সকলকে (নবী সা. ছাড়া) নিষ্পাপ বলে প্রমাণ করা যায়, তবে সূরা মুহাম্মদের ২-৩ নং আয়াত অনুযায়ী ইমানদার ব্যক্তি যারা (রাসূল সা. এর সাহাবী) রাসূলের আন্দোলনে যোগ দিয়ে তাঁর প্রতি নাযিল করা কিতাব বিশ্বাস করে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে অংশগ্রহন করে ইসলামী বিপ্লব সাধনের চেষ্টা করেছিলেন সেইসব সাহাবীগণও নিষ্পাপ ছিলেন। যেমন আল্লাহ বলেন ঃ
“যারা ইমান এনেছে নেক আমল করেছে এবং মুহাম্মদের প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে-তা মেনে নিয়েছে- বস'ত তা তো তাদের রবের পক্ষ থেকে নাযিলকৃত অকাট্য সত্য কথা -আল্লাহ তাদের থেকে ময়ালা দুর করে দিয়েছেন এবং তাদের অবস'া শুধরে দিয়েছেন।”
---সূরা মুহাম্মদ ঃ ২-৩ নং আয়াত
কিন' সাহাবীগন নিষ্পাপ ছিলেন না কারন নবী-রাসূল ব্যতিত কেউ নিষ্পাপ হতে পারে না।
অতএব শিয়ার সূরা আহযাােবর ৩৩ নং আয়াতের ভিত্তিতে যে আহলে বাইত ও তাদের নিষ্পাপ হওয়ার ব্যাখ্যা করেছেন, তা নিতান-ই মিথ্যা, বানোয়াট এবং রাসূলের মর্যাদা হানিক র । কেনানা শুধু নবী সা. সহ অন্যান্য নবী-রাসূলগনই একমাত্র নিষ্পাপ ও নির্ভুল ছিলেন। অন্য কেউ নন।আহযাবের ৩২-৩৩ নং আয়াত থেকে জানা গেল শিয়ারা কুরআনের অপব্যাখ্যাকারী, মিথ্যাবাদী। এবং আহলে বাইতের মধ্যে নবীর পবিত্র স্ত্রীগণের সাথে হযরত আলী, হযরত ফাতেমা এবং তাঁদের সন-ান হাসানও হুসাইন রা. অন-র্ভক্ত ।
আরও জানলাম যে, আহলে বাইত ও ইমামগন কখনো নবী সা, এর মত নিষ্পপা নন, নির্ভুল নন।যদি তারা নিষ্পাপ হতো, তাঁদের আগে-পরের সকল গুাহ মাফের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা আয়াত নাযিল করে জানিয়ে দিতেন
যেমন নবী সা. এর নিষ্পাপত্বের ব্যাপারে আয়াত নাযিল হয়েছিল কুরআনের আল-ফাতহ এর ১-৩ নং আয়াত।